
বেশ কয়েকবছর আগের ঘটনা। নেপালের কাঠমান্ডুর একটি গ্রোসারী শপে কেনাকাটা করতে গিয়ে চোখ আটকে গেলো। চিপস, চানাচুর কিনতে গিয়েছিলাম। দেখি আমাদের প্রাণ কোম্পানির চিপসসহ বিভিন্ন পণ্য। মনটা দোলা দিয়ে ওঠলো। আমার দেশের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। দোকানির কাছে জানলাম, বাংলাদেশের এই পণ্য প্রচুর চলে। আমরাও নিজ দেশের পণ্য কিনে হোটেলে ফিরলাম।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ বিভিন্ন শহরেও আমি একই দৃশ্য দেখেছি। বিশেষ করে প্রাণ কোম্পানি বিশাল একটা বাজার করে নিয়েছে ভারত, নেপাল,মালদ্বীপ ও ভুটানে।
ভারতে আখতার ফার্নিচার, হাতিলের আসবাবপত্রের ভালো বাজার আছে। হাতিল সম্ভবত দিল্লিতেও শো রুম করেছে, মুম্বাইও করেছে।
ড. ইউনূসের ইন্টেরিম সরকার ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপ করে দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে বড়ধরনের ক্ষতি করছেন। এর মধ্যে আবার ভারতের সেভেন সিস্টার দখলের পরিকল্পনা এবং একঘন্টার মধ্যে কলকাতা দখল করার হুমকির ভয়ে ভারত তার সীমান্তই বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থলপথে আর কোনো পণ্য ভারত যেতে পারছে না। তাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে কলকাতা সমুদ্র বন্দর, মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর হয়ে ভারতে পণ্য পাঠাতে হবে। নেপাল, ভুটানেও এই দুই বন্দর হয়ে সড়কপথে পাঠাতে হবে। অথচ আমাদের লালমনিরহাটের বুড়িমারী, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের করিডোর পার হলেই নেপাল, ভুটান, তামাবিল, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আসাম- ত্রিপুরাতে অল্পখরচে পণ্য পাঠাতেন ব্যবসায়ীরা।
মাস দু'য়েক আগে ভারত কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্ট পণ্য পরিবহনের সুযোগ বন্ধ করে দেয়। এই ট্রান্সশিপমেন্টের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ ৩৬টি দেশে পণ্য পাঠাতো। বাংলাদেশ যে ভারতের ট্রানজিট ব্যবহার করতো এটা জানাই ছিলো না। আমার ধারণা ছিলো ভারতই শুধু বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে তার সেভেন সিস্টার যেতে ট্রানজিট ব্যবহার করতে চায়। এখন শুনি উল্টো কথা।
কথায় আছে প্রতিবেশি পাল্টানো যায় না। ভারতকে শত্রুজ্ঞান করে, তার সেভেন সিস্টার দখল করে কিংবা হুমকি দিয়ে আর্থিকভাবে আমরা লাভবান হবো কি না সে হিসেব করা দরকার। বাজার অর্থনীতি আর আধুনিক বাণিজ্যনীতি প্রতিবেশির সঙ্গে শত্রুতা সমর্থন করে না। রাজনীতির অংক এক ধরনের আর বাণিজ্যের অংক আরেক ধরনের। ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের বাজার। তাদের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত তিন ধরনের ভোক্তাই রয়েছে। আমাদের ২০ কোটি মানুষের বাজার। দুই দেশের ব্যবসায়িদের জন্যই দুই দেশের বাজার দরকার। তবে ভারতের বাজার বিশাল এবং সেটা ধরতে পারাই আমার দেশের জন্য লাভজনক। আমাদের খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা অনেক চেষ্টায় সেই বাজার ধরেছিলেন। আমাদের সিমেন্টেরও একটা বাজার আছে উত্তরপূর্ব ভারতে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা প্রায় ১১ কোটি। উত্তরপূর্ব ভারত তথা সেভেন সিস্টারের জনসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। ভারতের এই দুই অংশের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থল সীমানা বেষ্টিত। সেখানে ১৭ কোটি মানুষের বাজার। বাংলাদেশের অনেক পণ্যের চাহিদা যেমন রয়েছে তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পণ্য আমদানি রপ্তানিতে খরচও কম পড়ে। গত কয়েকবছর ধরে এই দুই অঞ্চলে ব্যবসাবাণিজ্য ভালো শুরু হয়েছিলো। কিন্তু ড. ইউনূস সরকারের অপরিনামদর্শী নীতির কারণে এখন সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে রাজনীতির কি লাভ হবে জানিনা, তবে আর্থিকভাবে বাংলাদেশ ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এটা স্পষ্ট।
আমি ড. ইউনূস সরকার ও তাঁর ছাত্রবাহিনী যারা ভারতের সেভেন সিস্টার দখল করতে চান তাদের বলবো, একবিংশ শতাব্দীতে ভূমি দখলের চিন্তা বাদ দিয়ে তাদের বাণিজ্যিক ভাবে দখল করার চিন্তা করেন। বাজার দখল করেন। আমার দেশের উৎপাদিত পণ্য ভারতের এ অঞ্চলের বাজার দখল করার সহায়তা করেন। আপনাদের উগ্র চিন্তার কারণে কি ক্ষতি হয়েছে তা যারা ভারতে পণ্য রপ্তানি করেন, তাদের ট্রানজিট ব্যবহার করেন তাদের জিজ্ঞেস করুন। রাজনীতির গালগল্প দিয়ে পেট ভরবে না। দেশের উন্নয়নের জন্য টাকা লাগবে, মানুষের কর্মসংস্থান লাগবে। সূত্র:শঙ্কর মৈত্র’র ফেসবুক থেকে