
ওষুধের বাজারে এখন এক ধরনের নীরব অস্থিরতা বিরাজ করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে শুরু করে জীবনরক্ষাকারী ইনজেকশন—সবকিছুর দাম বেড়েছে হঠাৎ করেই। এ বৃদ্ধি এতটাই দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিত যে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পক্ষে চিকিৎসা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। আগে যে ওষুধ কিনতে ১০০ টাকা লাগত, সেটি এখন ১৫০ থেকে ২০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন রোগীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শুধু যে দাম বেড়েছে তাই নয়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ বাজারে সংকটও দেখা দিয়েছে।
ফার্মেসি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রায়ই নতুন দামের তালিকা পাঠাচ্ছে। কাঁচামালের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, আর ডলারের অস্থিরতার কারণে এই খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে দাবি করছে তারা। তবে ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই এই মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিকতার বাইরে। নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির দুর্বলতায় সুযোগ নিচ্ছে কিছু কোম্পানি ও পাইকারি বিক্রেতা। সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তদারকি কার্যক্রম কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে কার্যকর ব্যবস্থা খুবই সীমিত। কয়েকটি অভিযানে নকল বা নিম্নমানের ওষুধ জব্দ হলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। বরং বড় বড় কোম্পানির পণ্যের দামও ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরকার একটি স্বচ্ছ মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া, যেখানে উৎপাদন খরচ, মুনাফা ও বাজার পরিস্থিতি মিলিয়ে যুক্তিযুক্ত দাম ঠিক করা হবে।
এদিকে সাধারণ মানুষ ওষুধের জন্য এখন বেশি খরচ করতে গিয়ে পরিবারিক বাজেট থেকে অন্যান্য জরুরি খাতের ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই পর্যাপ্ত ওষুধ কিনতে না পেরে চিকিৎসা মাঝপথে বন্ধ করে দিচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, যদি এভাবে চলতে থাকে তবে চিকিৎসা সেবা ধনী-গরিব বৈষম্যের নতুন মাত্রায় পৌঁছে যাবে।
বাংলাদেশের ওষুধশিল্প দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারেও সুনাম কুড়িয়েছে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এই নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধি শুধু জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলছে না, বরং জনস্বাস্থ্যের জন্যও বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখন প্রয়োজন শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ, স্বচ্ছ বাজার ব্যবস্থা এবং জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া—না হলে ওষুধ সাধারণ মানুষের জন্য হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে। এদিকে ঢাকার বাইরের ফর্মেসিগুলোতে দিনের পর দিন ভেজাল ওষুধের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। এতেকরে নিশ্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তদারকি না থাকায় ভেজালের বিরুদ্ধে কেউ-ই সোচ্চার নয়। যে কারণে কোনটি ভেজাল আর কোনটি আসল তা টের পান না রোগী ও তাদের স্বজনেরা। বেশি লাভের আশায় এসব ওষুধ ফার্মেসি মালিকেরা কাছে রাখতে পছন্দ করছেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে দেশের ৮৮ শতাংশ মানুষ এখনো ওষুধ কিনতে যারপরনাই ত্রাহি অবস্থার মধ্যে আছেন। তাদের সামর্থ নেই নিত্যদিন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মতো ওষুধ কেনার। যে কারণে যেভাবে পেসক্রাইব করা হচ্ছে তা মানতে পারছেন না বিপুল সংখ্যক রোগী।