মঙ্গলবার,

২৪ জুন ২০২৫

|

আষাঢ় ১১ ১৪৩২

XFilesBd

ব্রেকিং

২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থ-উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মোট বাজেট -৭,৯০,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা-৫,৬৪,০০০ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি -২,২৬,০০০ কোটি টাকা (জিডিপির ৩.৬%) জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা-৫

জাপা ভাঙলে লাভ কার? বিএনপি নাকি আওয়ামী লীগের?

নতুন ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে এরশাদের জাতীয় পার্টি।। সংকটে জিএম কাদের

আহমেদ শাহেদ

প্রকাশিত: ০৩:১২, ২২ জুন ২০২৫

আপডেট: ০৪:২৬, ২৩ জুন ২০২৫

নতুন ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে এরশাদের জাতীয় পার্টি।। সংকটে জিএম কাদের

বহু চড়াই-উতরাই পার হয়ে আসা জাতীয় পার্টি আবারও এক ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে কেন্দ্র করে দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে গুরুতর মতপার্থক্য, যা ক্রমেই ভাঙনের দিকে এগোচ্ছে। এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন তুলছে—জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ কী?

২০২৫ সালের জুন মাসের শুরু থেকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ফুঁসে ওঠে। ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন জিএম কাদের একক সিদ্ধান্তে ২৮ জুন নির্ধারিত কেন্দ্রীয় সম্মেলন স্থগিত করেন। এই ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা করেন দলটির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সিনিয়র নেতা রুহুল আমিন হাওলাদার ও সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। বিদ্রোহী নেতারা বলেন, সম্মেলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ছিল একনায়কতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক। তাদের অভিযোগ—চেয়ারম্যান কাদের গঠনতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাচ্ছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, মূল দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার (ক) উপধারায় সংশোধন আনার প্রস্তাব ঘিরে। এই ধারার অধীনে চেয়ারম্যানের নির্বাহী ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলা এবং কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ক্ষমতা সংকুচিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

চেয়ারম্যান কাদের বলছেন, “কিছু নেতা আওয়ামী লীগ ঘেঁষা অবস্থান নিয়ে পার্টিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন। এখন আবার গঠনতন্ত্রের নাম করে দলের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে চাচ্ছেন।”অন্যদিকে, বিদ্রোহী নেতারা বলছেন, “চেয়ারম্যান নিজেই পার্টিকে অকার্যকর করছেন। তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মানেন না।”

অনেকেই মনে করছেন, এই সংকটের পেছনে রয়েছে পরোক্ষ সরকারি প্রভাব। জিএম কাদের বিগত বছরগুলোতে সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকলেও, মাঝে মাঝে সংসদে সরকারপন্থী মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি জাতীয় পার্টিকে বিএনপি ঘেঁষা বিরোধীদলে পরিণত করতে চাইছেন। অন্যদিকে বিদ্রোহী অংশটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের প্রতি নরম মনোভাব পোষণ করছে, এবং অতীতেও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতায় আগ্রহী ছিল।

জাতীয় পার্টি ১৯৮৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয়বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্ব নিয়ে স্পষ্ট কোনো উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামো এবং একাধিক নেতৃত্ব কেন্দ্রই আজকের সংকটের মূল। এখন অনেকেই বলছেন, “জিএম কাদের হয়তো দক্ষ সংগঠক নন, কিন্তু তিনি পার্টিকে নিরপেক্ষ রাখতে চেয়েছেন। বিদ্রোহীরা আবারও পার্টিকে সরকারি ‘সেটেলাইট’ বানাতে চাইছেন।”

জাতীয় পার্টির এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তিনটি সম্ভাব্য পরিণতির দিকে যেতে পারে। বিদ্রোহীরা আনুষ্ঠানিকভাবে কাদেরকে সরিয়ে নিজেরা নেতৃত্ব নিতে পারেন। এতে বিভক্ত জাতীয় পার্টির সৃষ্টি হবে—একটি কাদেরপন্থী, অন্যটি সরকারঘেঁষা। দ্বিতীয়ত যা হতে পারে- কাদেরের কর্তৃত্ব টিকে যাবে। তবে বিদ্রোহী অংশ দল থেকে সরে গিয়ে ভিন্ন মঞ্চ গঠন করতে পারে। কিংবা তৃতীয়ত যা হতে পারে তা হলো-পুরো দলটাই অকার্যকর হয়ে পড়বে। জাতীয় পার্টি তার বিরোধী রাজনৈতিক ভূমিকা হারাবে এবং তৃতীয় শক্তি হিসেবে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে।

জাতীয় পার্টি বর্তমানে এক অস্তিত্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জিএম কাদের বনাম বিদ্রোহী জ্যেষ্ঠ নেতাদের এই দ্বন্দ্ব কেবল নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব নয়, বরং পার্টির আদর্শিক ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও লড়াই। আগামী ২৮ জুন অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় সম্মেলন (বা তার অনুপস্থিতি) জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে। এ মুহূর্তে প্রশ্ন তাই—জাতীয় পার্টি কি আবারও ভেঙে যাবে, নাকি এই সংকট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একটি বাস্তব বিরোধী শক্তিতে পরিণত হতে পারবে?