শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১২ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

বঙ্গবন্ধু এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে

আহমাদ মাযহার

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ০৪:০৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

বঙ্গবন্ধু এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে

ছবি: সংগৃহিত

তিন বছর হতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যের সিনেটে ২৫ সেপ্টেম্বরকে 'বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ও বাংলা ভাষার এই উজ্জ্বল দিনেই বাংলায় দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্য পৃথিবীর সব দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে বাংলা ভাষার কথা, জানতে পারে বাংলা ভাষাভাষী বাঙালি জাতির জন্য রয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ!

'বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে' ঘোষণা নিউইয়র্ক রাজ্যের সাধারণ আনুষ্ঠানিকতা মাত্র নয়। এর তাৎপর্য আরও গভীর। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি-আমেরিকানদের এক ধরনের অগ্রাধিকার সূচিত হলো; যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য অগ্রসর জাতির ইমিগ্র্যান্টদের সঙ্গে উজ্জ্বল পঙ্‌ক্তিভুক্ত হলো বাংলাদেশিরাও। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক রাজ্যের সিনেটে একটি সেশনে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বছর  তৃতীয় বারের মত সিনেটের আইন পরিষদ কর্তৃক নবায়ন হলো।  

স্মরণীয় যে, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি আধুনিক রাষ্ট্র, যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসে বসতি গড়েছে। এ কথাও সকলেরই জানা যে, দীর্ঘ হানাহানি থেকে মুক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণ বসবাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বের করে নিয়েছে গণতান্ত্রিকতার কিছু নিজস্ব রীতি। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে গণতান্ত্রিকতার উদার দৃষ্টিভঙ্গি। জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ দেওয়ার দিনটিকে 'বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সেই উদার গণতান্ত্রিকতারই একটি স্বতন্ত্র নিদর্শন। দিনটির তাৎপর্যকে এমনভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশি জনসমাজের পরিচিত মুখ বিশ্বজিত সাহার অন্তর্দৃষ্টির কারণে। বছর পাঁচেক আগেও তার উদ্যোগে বাংলাদেশিদের এই প্রস্তাব সিনেটে আলোচনার পর রিপাবলিকান সিনেটরদের বিরোধিতায় বাতিল হয়ে যায়। তিনি এতে দমে যাননি। ৩০ বছর আগে তিনি যেমন বাংলা বই নিয়ে 'মুক্তধারা বইমেলা' আয়োজন করার কথা কল্পনা করেছিলেন, যেমন তিন দশক আগে ২১ ফেব্রুয়ারির দিনে জাতিসংঘের সামনে শহীদ মিনার স্থাপনের কথা ভেবে সেটিকে বাস্তবায়ন করে ছেড়েছেন, তেমনিভাবে তার উদ্যোগ ও উদ্যমে নিউইয়র্ক রাজ্যে সম্প্রতি 'বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে'ও বাস্তবায়িত হয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষের আজ বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হওয়া একটি বাস্তব বিষয়। আবার এটাও সত্য যে, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের প্রতিটি চিহ্ন শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে বসবাসরত বাঙালিদেরই শক্তি ও সামর্থ্যের পরিচায়ক। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ আজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইমিগ্র্যান্ট! যত দিন যাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যে ২৫ সেপ্টেম্বরকে ইমিগ্র্যান্ট ডে ঘোষণার তাৎপর্য আরও বাড়বে। জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ দেওয়াকে প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশে দিনটিকে 'জাতীয় অভিবাসী দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে পারে! এর মধ্য দিয়ে সরকার বাংলাদেশের উন্নয়নে বাংলাদেশি অভিবাসীদের উন্নত বা ভিন্ন অভিজ্ঞতাকে আরও বেশি করে সমন্বিত করতে পারবে; বাংলাদেশের সুশাসনে, জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থার উৎকর্ষে, সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে অভিবাসীদের পারবে আরও জোরালো ও গভীরভাবে সম্পৃক্ত করতে।

যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাজ্যের সিনেটে বা কংগ্রেসে কোনো আইন পাস করতে হলে বা কোনো ধারা যুক্ত করতে হলে আইন পরিষদ সে দেশের অভিবাসী সমাজের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততাকে প্রধান বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার আইন পরিষদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলায় প্রদত্ত ভাষণকে যুক্ত করেছেন বিশ্বজিত সাহা তার গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদর্শিতা দিয়ে। এই দিনটিতে জাতিসংঘের মতো বিশ্বসভায় বঙ্গবন্ধুর প্রথম বাংলায় ভাষণ দেওয়ার ঘটনাটি নিউইয়র্কেই ঘটেছিল। এ কথাও গভীরভাবে অনুভবনীয় যে, বিষয়টি একেবারে সহজ ছিল না। বাংলাদেশি জনসমাজের সঙ্গে নিউইয়র্ক সিনেটের এই যোগসূত্র তৈরি করতে বিশ্বজিত সাহাকে দীর্ঘকাল ধরে প্রয়োজন অনুসারে নানান তথ্য-উপাত্ত সিনেটের কাছে সরবরাহ করতে হয়েছে।
 (গবেষক ও প্রাবন্ধিক)