সাধ আছে সাধ্য নেই, ইচ্ছে আছে কিন্তু উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না-এমন মানুষের জন্য রাজধানীর প্রগতি সরণি-নর্দাতে উদ্বোধন হয়েছে ভিন্ন ধরণের শো রুম ম্যাজিস্টিক মটরস। ব্যবসাবাণিজ্যের চলমান ক্রান্তিকালে তারুণ্যের এমন উদ্যোগকে রীতিমতো দুঃসাহসী ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভেহিকেল ইমপোর্টারস এন্ড ডিলারস এসোসিয়েশন-বারভিডার মূখ্য নেতৃত্ব। তাঁরা এও বলেছেন যে, ম্যাজিস্টিক মটরস যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে রাজধানী ঢাকা তো বটেই বিভাগীয় শহর থেকেও মধ্যবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্ত আসবে গাড়ি কিনতে। কেনো না গাড়ির ফিচারের মতো ক্রয়ের ক্ষেত্রেও নানান ধরণের সুবিধা যুক্ত করেছে ম্যাজিস্টিক মটরস।
বাদশা ইমাম আরাফাত, অনিরুদ্ধ সাহা শুভ ও নাজিমুল হক সজল আগে আলাদাভাবে গাড়ি বিক্রির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেখান থেকেই পরিচয়। তারপর গল্পে আলোচনায় গবেষণা। মানুষ কোন ধরণের গাড়ি পছন্দ করেন, একসঙ্গে কী কী সুবিধা তারা খুঁজে ফেরেন, অভিভাবকদের পাশাপাশি সন্তানেরা কী পছন্দ করেন, সিনিয়র সিটিজেন কোন ধরণের গাড়ি কামনা করেন-এমন সব সুবিধা এক করে তাঁরা গড়ে তোলেন ম্যাজিস্টিক মটরস। রাজধানীর প্রগতি সরণির ৪৩/১ নর্দা-ভাটারা তথা সৌদি মসজিদ গলিতে বিশাল এ শো রুম। একসঙ্গে বেশি জায়গা পাওয়া দুষ্কর তাই প্রধান সড়ক সংলগ্ন গলি রাস্তায় দৃষ্টিন্দন শো রুম ম্যাজিস্টিক মটরসের। চলতি সপ্তাহে ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভেহিকেল ইমপোর্টারস এন্ড ডিলারস এসোসিয়েশন-বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক, সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান চৌধুরী খসরু ও সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন। সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বারভিডার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও শো রুমের কর্ণধার।
ব্যবসাবাণিজ্যের এমন ক্রান্তিকালে গাড়ি ব্যবসার চ্যালেঞ্জসমূহ উল্লেখ করে আব্দুল হক বলেন, সময়টা গাড়ি বিক্রির জন্য খুব বেশি সুখকর নয়। যেমন হিসেবের তেমনি চ্যালেঞ্জের। তারপরও ম্যাজিস্টিক মটরসের পলিসি অত্যাধুনিক। বয়সে তরুণ বলেই হয়তো এটি সম্ভব হয়েছে। আশা করছি তারা সফল হবেন। রিকন্ডিশন গাড়ি কিভাবে দেশের উপকার করছে তার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন আব্দুল মান্নান চৌধুরী খসরু। সাবেক সভাপতি খসরুর অভিমত, শো রুমের মালিকেরা পরিবেশবান্ধব গাড়ি আমদানি করছে। যেখানে ফাঁকির কোন সুযোগ নেই। সরকারকে বিশাল অংকের টাকা ট্যাক্স দেই আমরা। ২২ মডেলের গাড়ি এনে ২১ মডেলের ট্যাক্স যেখানে একেবারেই সম্ভব নয়। অন্য ব্যবসায় এ ধরণের রীতি চালু আছে। গাড়ি ব্যবসা তাই যেমন সম্মানের তেমনি ট্যাক্সবান্ধব।
গাড়ি বিক্রি করে ক্ষান্ত দিলেই চলবে না, বিক্রি পরবর্তী ক্রেতার সেবা ও দেখভালের পরামর্শ দেন সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন। তিনি বলেন, তিন তরুণের এই চ্যালেঞ্জ দেখে আমার বেশ ভালো লাগছে। কারণ আমিও এই বয়সে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। ওদের সাহস আর পরিকল্পনা দেখে আমি ফিরে পেয়েছি পুরোণো নস্টালজিয়া। আশা করি তাদের প্রত্যয় আর সেবার মানসিকতা এই সেক্টরের সুনাম বৃদ্ধি করবে।
প্রতিদ্বন্দ্বী বাজারে অনিরুদ্ধ, সজল আর আরাফাতের পথচলাকে স্বাগত জানিয়ে আব্দুল মান্নান চৌধুরী খসরু একগুচ্ছ পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সরকারে যারা আছে তারা আদৌ গাড়ি ব্যবসা বোঝেন না। এটা আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েই বলতে পারি। নতুন গাড়ি যেভাবে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত আসা শুরু করেছে তাতে রিকন্ডিশন গাড়ির বাজার এমনিতেই পড়ে যাবে। তখন বারভিডার সদস্যরা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলবেন। আর নতুন গাড়িও ততোদিনে ডাম্পিং হয়ে রাস্তার পাশে স্তুপ হবে। কারণ ইদানীং যেসব বাজে ফিচারের গাড়ি আসা শুরু করেছে তা একেবারেই টেকসই নয়। মানুষ না বুঝেই চকচক ঝকঝক গাড়ি কিনছে। অল্প কিছুদিন পরেই তা ডাম্পিং হচ্ছে। গাড়ির প্রতি বিতৃষ্ণা বাড়ছে কারও কারও। কিন্তু রিকন্ডিশন গাড়ি কিনলে ঠকার কোন সুযোগ নাই। কিছুদিন চালিয়ে আবার কেনা দামেই বিক্রি করা যায়।
আব্দুল মান্নান চৌধুরী আরও বলেন, সবাই এখন ব্যবসা গোটাচ্ছে। আর অনিরুদ্ধ, সজল, আরাফাতরা ব্যবসা শুরু করলো। ব্যাপারটি আমার জন্যও উৎসাহব্যঞ্জক। চাইনিজ গাড়ির সস্তা আর রমরমা মার্কেট উতরে আশা করছি তারা রিকন্ডিশন গাড়ির বাজারে উদাহরণ সৃষ্টি করবেন। চাইনিজ গাড়ির লোক ঠকানো জেল্লা থেকে মুক্ত হয়ে মধ্যবিত্তকে জাপানি রিকন্ডিশন গাড়ি কেনার আহ্বান জানান তিনি।
হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, অনেক শো রুম মালিক গাড়ি বিক্রি করে সহসা ক্রেতার খোঁজ নেন না। গাড়ি কোন অবস্থায় আছে, কোন সমস্যা হলো কি না-এসব খবরাখবর নেন না। অথচ একজন ক্রেতা এ ধরণের সেবা প্রত্যাশা করতেই পারেন। আর আমাদেরও উচিত তাদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যোগাযোগ রাখা। যাতে তাদের কথা শুনে অন্যরা গাড়ি কেনার প্রতি আগ্রহী হন। অনুষ্ঠানে আগামীর পথচলার জন্য সবার সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করেন ম্যাজিস্টিক মটরসের মালিক বাদশা ইমাম আরাফাত, নাজিমুল হক সজল ও অনিরুদ্ধ সাহা শুভ।
