
নিউইয়র্ক মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫ পেলেন অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। পবিত্র সরকার একজন ভারতীয় বাঙালি, ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক, নাট্যসমালোচক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক।উক্ত পুরস্কারের অর্থ মূল্য তিন হাজার ডলার।গতবছর(২০২৪)এ পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।উল্লেখ্য, একটি আসরে উপস্থিত থেকে পবিত্র সরকার নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা উদ্বোধন করেছিলেন।
২০১৬ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণকে প্রদাণের মাধ্যমে পুরস্কারটি মুক্তধারা ফাউন্ডেশন প্রবর্তন করে। এরপর শামসুজ্জামান খান, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, দিলারা হাশেম, সেলিনা হোসেন ও সমরেশ মজুমদার এ পুরস্কারে ভূষিত হন।২০২২ সালে ড. গোলাম মুরশিদ এবং ২০২৩ সালে পুরস্কার পেয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী।আমেরিকার নিউজার্সিভিত্তিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জিএফবি পুরস্কারের অনুদান প্রদান করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট গোলাম ফারুক ভূইয়া মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অন্যতম উপদেষ্টা।
অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার বিভিন্ন বিষয়ে মননশীল প্রবন্ধ রচনার খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। শিশুসাহিত্যিক, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও নাট্যব্যক্তিত্ব হিসাবেও সুপরিচিত। তিনি গদ্য রচনার জন্য ২০০০ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত বিদ্যাসাগর পুরস্কার, জাতীয় সংহতির জন্য ইন্দিরা গান্ধী অ্যাওয়ার্ড ফর ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন লাভ করেন। এছাড়াও ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান 'দ্য অর্ডার অফ দ্য রাইজিং সান, গোল্ড অ্যান্ড সিলভার রেজ' শিরোপায় সম্মানিত হন।
অধ্যপক ড. পবিত্র সরকারের জন্ম ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ঢাকা জেলার সাভারের ধামরাই নিকট বলিহারপুর গ্রামে। স্বাধীনতা লাভ ও দেশভাগের পর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ছিন্নমূল হয়ে কলকাতায় আসেন। উচ্চ শিক্ষা কলকাতা শহরেই। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মেধাবী ও সেরা শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর কিছুদিন তিনি কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ভাষাবিজ্ঞানের উপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শেষের দুবছর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
দেশে ফিরে পুনরায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। পদোন্নতির পর তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ হতে টানা সাত বৎসর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ হায়ার এডুকেশন তথা পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা সংসদের সহ-সভাপতি হন। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। অধ্যাপক সরকার বাংলা ও ইংরেজিতে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত আছেন।তাঁর কয়েকটি গ্রন্থের নাম-ভাষা নিয়ে ভাবছেন তো (২০০২), লোকভাষা লোকসংস্কৃতি (২০০৪), বাংলা ব্যাকরণ প্রসঙ্গ (২০০৬), গদ্যরীতি পদ্যরীতি (২০০৬), নাট্যমঞ্চ নাট্যরূপ (২০০৮) প্রভৃতি।