শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা

বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৯ আগস্ট ২০২৩

টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা

(পূর্ব প্রকাশের পর)
সম্মানিত পাঠকদের বলে রাখা ভাল, আমি কোন গবেষক নই। ইতিহাসের কিছু ঘটনা স্মৃতি ও সংগ্রহ থেকে উপস্থাপন করেছি মাত্র। সম্মানিত পাঠকের কাছে কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে নিশ্চয় সেটি সংশোধনযোগ্য।

১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর বঙ্গবন্ধু ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকার ইডেন হোটেল প্রাঙ্গনে পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী ভাষণে বলেন, “প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগের জন্ম। আর সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগের বিকাশ।” ১৯৬৬ সালে তিনি দেশবাসীর কাছে ছয় দফা পেশ করেন। বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা পাঠকদের স্মৃতি চারনের জন্য উল্লেখ করা হলো-

১। শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতিঃ লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেল রাষ্ট্রে পরিণত করা, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ হবে সার্বভৌম।

২। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাঃ কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্যান্য সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যাস্ত থাকবে।

৩। মুদ্রা ও অর্থঃ মুদ্রার বিষয়ে দু'টি প্রস্তাবের ১টি গ্রহণ করা যাবে; (ক) সমগ্র দেশের জন্য দু'টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। অথবা (খ) সমগ্র দেশের জন্য কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে পূর্বপাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভ এবং পৃথক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করা।

৪। রাজস্ব, কর বা শুল্কঃ ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলোর কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। প্রাদেশিক সরকারের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রাদেশিক সরকারের রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকার প্রাপ্ত হবে। প্রাদেশিক সরকারের কর থেকে একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠন হবে।

৫। বৈদেশিক বাণিজ্যঃ (ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে। (খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। (গ) কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত হারে প্রাদেশিক সরকার বহন করবে। (ঘ) প্রদেশের মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা কর জাতীয় কোন রকম বাধানিষেধ থাকবে না। (ঙ) শাসনতন্ত্রে প্রদেশ বা অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং নিজ স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা থাকবে।

৬। আঞ্চলিক বাহিনী গঠনঃ আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে প্রদেশগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও পরিচালনার ক্ষমতা থাকবে।

উল্লেখিত ৬ দফা এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যৌক্তিক দাবী এদেশের কৃষক। শ্রমিক মেহনতি মানুষ সমর্থন দেয়ায় আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার সম্মতি গ্রহণ করে। ১২ নভেম্বর ১৯৭০ সালে পূর্ব বাংলায় ভয়াবহ টর্নেডো এবং জলোচ্ছাসে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ৫ (পাঁচ) লাখ মানুষ মারা যায়। বঙ্গবন্ধু তার নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করে ত্রাণ নিয়ে দুর্গতদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তিনি পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য ও চরম উদাসীনতা গণমানুষের সামনে তুলে ধরেন। ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্বপাকিস্তানে ২৯৮টি আসন লাভ করে। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিতে এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, কুলি-মজুর, ছাত্র-জনতা এক নবজাগরনে উজ্জীবিত হয়েছিল এবং তীব্র গনআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতনের পর ছাত্র-জনতার উত্তাল সংগ্রাম ও গণদাবির মধ্য দিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়ার অধীনে ৬ দফার ভিত্তিতে ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুষ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তানী স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া/ভুট্টোর ষড়যন্ত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে শান্তিপূর্নভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তারা সমগ্র বাঙালী জাতির উপর নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। উল্লেখ করা যায় যে, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি অনন্য ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয়। নির্বাচনটি ছিল বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ক্ষেত্রে এ নির্বাচনের প্রভাব অসামান্য। এ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাঙালি জাতি প্রথমবারের মতো নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা অর্জন করতে সামর্থ্য হয়। তবে হটাৎ করে ১৯৭০ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ১৯৭০ সালে ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। যার পিছনে মূখ্য ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ট নেতৃত্ব। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও রাজনৈতিক শাসনতান্ত্রিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের ফলে বাঙালিদের মধ্যে রাজনৈতিক সংহতি ও আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানি