
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নকশার কাগুজে টাকা বাজারে ছাড়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা রকম ভোগান্তি। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংকের টাকা গোনার মেশিন, দোকানে ব্যবহৃত নোট যাচাইকারী যন্ত্র (নোট ডিটেক্টর) ও এটিএম মেশিন অনেক ক্ষেত্রেই নতুন এই নোটগুলো চিনতে পারছে না। ফলে সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন অস্বস্তিকর অবস্থায়।
ঢাকার পল্টনে এক মুদি দোকানদার জানান, “একজন ক্রেতা নতুন ৫০০ টাকার একটি নোট দেন। কিন্তু মেশিন সেটা বারবার ‘রিজেক্টেড’ দেখায়। পরে আমি নিতে চাইনি। মানুষ সন্দেহ করে বসে থাকে। আমরা তো প্রতিদিনই নানা রকম ভুয়া নোটের মুখে পড়ি।”
এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক গ্রাহকেরও। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রাকিব হাসান বলেন, “এটিএম থেকে ১০০ টাকার নতুন নোট পাই। কিন্তু ফার্মেসিতে দিয়ে দেখি, তাদের যাচাইকারী যন্ত্রে সেটি যাচাই হচ্ছে না। ফলে ওরা নিতে চায়নি। ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।”
ব্যাংকিং প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ডিজাইনের নোটগুলোতে সাধারণত নিরাপত্তা ফিচার, রঙের শেড, জলছাপের ধরন ইত্যাদিতে পরিবর্তন আনা হয়। ফলে পুরনো মেশিনগুলো এই ফিচারগুলো শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। এসব মেশিনের সফটওয়্যার আপডেট না করলে এ সমস্যা চলতেই থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মুখপাত্র বলেন, “নতুন নোট সম্পূর্ণ বৈধ ও সুরক্ষিত। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইতোমধ্যে মেশিন আপডেট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”তিনি আরও জানান, “নতুন নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে।”
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য: টাকা গোনার মেশিন ও যাচাইকরণ যন্ত্র দ্রুত আপডেট করা। গ্রাহকদের যথাযথ তথ্য সরবরাহ করা
দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের জন্য: হঠাৎ করে নোট বাতিল না করে যাচাইকরণের জন্য বিকল্প উপায় গ্রহণ। নতুন নোটের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া
জনগণের জন্য: আতঙ্কিত না হয়ে ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত নোটকে বৈধ ধরে নেওয়া। সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যাচাই করা। নতুন নোট বাজারে আনার মূল উদ্দেশ্য হলো জালিয়াতি ঠেকানো ও নিরাপত্তা জোরদার করা। তবে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি ও জনসচেতনতা ছাড়া তা সাধারণ মানুষের জন্য রীতিমতো দুর্ভোগ ডেকে আনছে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভরসার জায়গা হিসেবে পরিচিত কাগুজে টাকার ওপরই মানুষের আস্থা কমে যেতে পারে।