শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

গভীর সমুদ্র থেকে তেল খালাসের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৪ জুলাই ২০২৩

গভীর সমুদ্র থেকে তেল খালাসের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ

 গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল খালাসের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। সৌদি আরব থেকে আনা ৮২ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল বঙ্গোপসাগরের গভীর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক তেল খালাসের মধ্য দিয়ে এই অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করল লাল সবুজের বাংলাদেশ।

 সোমবার (৩ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, রোববার (২ জুলাই) দুপুরে পাইপলাইনে তেল খালাস কার্যক্রম শুরু হয়।

 তিনি জানান, সৌদি আরব থেকে আনা ৮২ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েলের পরীক্ষামূলক খালাস শুরু হয়েছে গভীর বঙ্গোপসাগরে। ১১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন দিয়ে এই তেল আসবে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। ৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কারণে তেল খালাসের সিস্টেম লস ও খরচ কমার পাশাপাশি সময় ২৫ দিন কমে মাত্র ২ দিনে নেমে আসবে।

 সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে বর্তমানে ৫ লাখ টন সংরক্ষণ সক্ষমতা আছে। এর মধ্যে ক্রুড অয়েল সংরক্ষণ সক্ষমতা দুই লাখ ২৫ হাজার টন। বাকিটা পরিশোধিত তেল রাখার স্টোরেজ। বর্তমানে দেশে সরকারিভাবে সমুদ্রপথে ৬০ লাখ টনেরও বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এছাড়া বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফার্নেস তেলসহ প্রায় এক কোটি টন তেলের প্রয়োজন হয়।

 এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাংকারগুলো সরাসরি খালাস করা যায় না। এর ফলে এসব ট্যাংকার গভীর সমুদ্রে নোঙর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল খালাস করতে হয়। তাতে এক লাখ ডিডব্লিউটি ট্যাংকার খালাস করতে সময় লাগে ১১ দিন। এতে এই পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ, ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ হওয়ায় এইচএসডি স্থানান্তরের জন্য ২০১৫ সালে পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পটি (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) হাতে নেয়া হয়েছিল।

 প্রকল্পের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে। ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইন প্রথমে নিয়ে আসা হবে কালারমারছড়ায় সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে। সেখান থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে আনোয়ারা উপজেলার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে।

 এ প্রসঙ্গে ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) লোকমান হোসেন বলেন, এসব পাইপলাইনে ২০ হাজার টন ধারণ সক্ষমতা রয়েছে। এসপিএম থেকে মহেশখালীতে এসে যেখানে পাম্প হবে, সেখানে দুই লাখ টন ধারণ ক্ষমতার একটি স্টোরেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্রুড অয়েল থাকবে এক লাখ ২৫ হাজার টন। বাকি ৭৫ হাজার টন হবে ডিজেল বা পরিশোধিত তেল। এই পাইপলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে তেলের সংরক্ষণ সক্ষমতা বেড়েছে।

 প্রসঙ্গত, ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ইতোমধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। বর্তমানে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। এর দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে পরিশোধন সক্ষমতা ৩০ লাখ টন বেড়ে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে।