
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, গুলি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশের বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। বেশ কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাকে দেয়া হতে পারে বড় ধরণের শাস্তি ।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গুলি ও সহিংসতার ঘটনায় ১,০৫৯ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ১,৩৯৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। এদের মধ্যে ৪১ জন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, এ কে এম শহীদুল হক, ডিএমপির সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, যুগ্ম কমিশনার মশিউর রহমান, উপমহাপরিদর্শক মোল্যাহ নজরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম। 
অনেক আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা, যেমন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ পলাতক রয়েছেন। এছাড়া, ৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তা এখনও বহাল তবিয়তে কর্মরত আছেন, যারা আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের অস্ত্র সরবরাহে জড়িত ছিলেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে।  
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, আরও দুই শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলমগীর কবির, রংপুর আরআরএফের কমান্ড্যান্ট মেহেদুল করিম এবং সারদায় সংযুক্ত ডিআইজি নুরে আলম মিনা। বর্তমানের ইনটেরিম সরকার বলছে, এরা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে গুরুতর অপরাধ করেছে ।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়, যা পরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনে ৭৩৫ জন নিহত হন এবং কয়েক হাজার আহত হন। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। 
ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনে জড়িত পুলিশ সদস্যদের চাকরিচ্যুত ও বিচারের দাবিতে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। তারা দাবি করেছে, জুলাই গণহত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও তদন্ত চলছে। বিভিন্ন স্তরের পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার, চাকরিচ্যুতি ও ওএসডি করার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পুলিশ সংস্কারের কমিটিতে থাকা একাধিক সদস্য ।