মঙ্গলবার,

২৪ জুন ২০২৫

|

আষাঢ় ৯ ১৪৩২

XFilesBd

ব্রেকিং

২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থ-উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মোট বাজেট -৭,৯০,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা-৫,৬৪,০০০ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি -২,২৬,০০০ কোটি টাকা (জিডিপির ৩.৬%) জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা-৫

চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতা

ড. অখিল পোদ্দার (Dr. Akhil Podder)

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৪ জুন ২০২৫

চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতা

বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতা এক সময় ছিল এক অনন্য আশাবাদের প্রতীক। গণতন্ত্রের পথচলার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে সংবাদপত্র বেতার গণমানুষের চেতনায় জায়গা করে নিয়েছিল, ঠিক তেমনি টেলিভিশনও হয়ে উঠেছিল জনগণের চোখ, কান কণ্ঠস্বর। বিশেষ করে ১৯৯৭ সালে একের পর এক বেসরকারি চ্যানেলের সূচনার পর টেলিভিশন সাংবাদিকতা এক রকম বিপ্লব ঘটায় খবরের উপস্থাপনা, বিশ্লেষণ তাৎক্ষণিকতার ক্ষেত্রে। কিন্তু সেই স্বর্ণযুগের পর দিন যত গড়িয়েছে, সাংবাদিকতা ততই নানা জটিলতার বেড়াজালে আটকে পড়েছেপ্রযুক্তি, রাজনীতি, ব্যবসা, সামাজিক বিভাজন এবং বিশ্বায়নের বৃত্তবন্দি হয়ে এক কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতা।

আজকের টেলিভিশন সাংবাদিকতা তার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ব্যস্ত। যেখানে একসময় জনস্বার্থ ছিল কেন্দ্রে, সেখানে এখন স্বার্থের প্রতিযোগিতা। সংবাদ আর শুধু ঘটনা জানিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যম। একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব এখন কেবল প্রশ্ন তোলা নয়, বরং কখন কী বলা যাবে না, সেটাও জানা। এই বাস্তবতায় সাংবাদিকতা কি আগের মতোই মানুষের পক্ষে কথা বলে যাচ্ছে? নাকি আজ তা নিতান্তই এক ব্যবসা মাত্র? সঙ্গত কারণেই এসব প্রশ্ন এখন সময়ের আয়নায় উঁকি দিচ্ছে।

সবচেয়ে বড় মৌলিক চ্যালেঞ্জ এসেছে প্রযুক্তিগত রূপান্তর থেকে। টেলিভিশন সাংবাদিকতা আগে ছিল তথ্য সরবরাহের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু ডিজিটাল যুগে এইঅভিভাবকত্বঅনেকাংশে শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রত্যেকেই নিজের সংবাদমাধ্যম, নিজের কণ্ঠস্বর। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের বদৌলতে সাধারণ মানুষও এখন ছবি তুলে, ভিডিও করে, ঘটনার লাইভ দেয় ফেসবুকে বা ইউটিউবে। সংবাদমাধ্যম এখানে আর মধ্যস্থতাকারী নয় বরং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মানুষ কেন বিশ্বাস করবে গণমাধ্যমকে? কেন তাকে শুনবে, দেখবে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনো টিভি চ্যানেলগুলো খুঁজে পায়নি। প্রতিনিয়ত একই ঘটনা, একে অন্যের অনুকরণ করে অনুষ্ঠান নির্মাণ, নকলবাজি কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স প্রগ্রাম চলছে তো চলছেই।

মানুষের নজর কাড়ার লড়াইয়ে সোশ্যাল মিডিয়া অনেক এগিয়ে। ফেসবুক লাইভ, টিকটক, ইউটিউব ব্লগসবই এখন সংবাদ সরবরাহের বিকল্প উৎস। এতে একদিকে সাংবাদিকতার গণতান্ত্রিকীকরণ হলেও, অন্যদিকে সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। কারণ এই প্ল্যাটফর্মে দায়িত্বশীলতা একেবারেই নেই। নেই তথ্য যাচাইয়ের ন্যূনতম প্রক্রিয়া। যে কারণে কোনটা গুজব আর কোন ঘটনা মিথ্যা তা বোঝা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক সময় মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছে সুবিধাবাদী শ্রেণি। অথচ টেলিভিশনের উচিত ছিল এর বিপরীতে গিয়ে বিশ্বাসযোগ্য যাচাইকৃত সংবাদ দেওয়া। কিন্তু তা না করে অনেক টিভি চ্যানেলও এখন সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্টের পিছনে ছুটছেপ্রতিষ্ঠানের আভিজাত্য, ঐতিহ্য ও নিয়মনীতি ভুলে উত্তেজক ছবি, ক্লিকবেইট টাইটেল, ইমোশনাল মিউজিক, ঝড় তোলা স্ক্রল বার দিয়ে তারা দর্শক ধরার চেষ্টা করছে। এতে করে ঘটনার গভীরতা গায়েব হয়ে যাচ্ছেটক ঝাল মিষ্টি মাখানো সংবাদ হয়ে উঠছে নাটকীয় বিনোদন।

এমন বিনোদনের প্রবণতা সাংবাদিকতার নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আগে একটি নিউজ রিপোর্ট মানে ছিল তথ্য, প্রেক্ষাপট, বিশ্লেষণ মানুষের কণ্ঠস্বর। এখন একটি রিপোর্ট মানেদৃশ্যমানতা, দ্রুততা, আবেগ এবংব্রেকিং নিউজলেবেল। হুবহু একই ঘটনা পাঁচটি চ্যানেলে পাঁচভাবে পরিবেশিত হচ্ছেযার মধ্যে বিশ্লেষণের গভীরতা নেই, প্রশ্ন নেইবরং আছে নাটকীয় উপস্থাপনা। এমন সাংবাদিকতার কারণে ধীরে ধীরে শো-টাইমে পরিণত হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের পেছনে অর্থনৈতিক চাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বেশিরভাগই বিজ্ঞাপননির্ভর। তারা যে আয় করে, তার সিংহভাগ আসে বিজ্ঞাপন থেকে। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞাপনদাতারা ডিজিটাল মিডিয়ায় ঝুঁকছেন। কারণ সেখানে তারা অল্প খরচে বেশি দর্শক পেয়ে যাচ্ছেন। অ্যালগরিদম অনুযায়ী টার্গেট করতে পারেন নির্দিষ্ট শ্রেণি। এতে করে টিভি চ্যানেলের আয় কমেছে। পাল্লা দিতে গিয়ে টিভি স্টেশনগুলোর ডিজিটাল বিভাগ লাজ-লজ্জার মাথা খেয়েছে। যে কারণে ড্রয়িং রুমের শিক্ষা ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে আভিজাত্য হারিয়েছে টিভিগুলো। 

আবার এ ঘাটতি পূরণও করতে পারছে না। বরং সাংবাদিকতার মান পড়ছে, সম্মান কমেছে। কম বাজেটে বেশি কনটেন্ট তৈরির চাপ সাংবাদিকদের নয়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বেশিরভাগ স্টেশনে একেকজন রিপোর্টারকে দিনে তিন-চারটা প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়তাতে সময়ও থাকে না যাচাইয়ের- বিশ্লেষণের- অনুসন্ধানের। ফলে রিপোর্ট হয়ে ওঠে তথ্যের তালিকা মাত্র। যেখানে সত্যের অনুপস্থিতি সর্বেব।

এমন প্রেক্ষাপটে রিপোর্টারদের পেশাগত নিরাপত্তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেতন কম, সময় অনিশ্চিত, কাজের চাপ বেশি, আর ঝুঁকি সবসময় বর্তমান। বিশেষ করে যারা মাঠে কাজ করেন, তারা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেনরাজনৈতিক নেতার রোষানলে পড়া, পুলিশের হয়রানি, সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু এসবের কোনোটির জন্যই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ খুব একটা দায় নেয় না। ফলে সাংবাদিকতা এখন আরপেশানয়, বেশ ক’বছর আগেই  চাকরিহয়ে গেছে। পেশাগত আত্মমর্যাদা এখন একেবারেই গৌণ।

আরও ভয়াবহ দিক হচ্ছে মালিকানা কাঠামোর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলের পেছনে রয়েছে কোনো না কোনো রাজনৈতিক শক্তি বা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। ফলে সংবাদ পরিবেশন রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ছে। একই ঘটনার দুটি বিপরীত ব্যাখ্যা চ্যানেল ভেদে ভেসে আসে। এক চ্যানেল বলছেবীর শহীদ”, অন্যটি বলছেবিপথগামী অপরাধী সংবাদ আর ঘটনার প্রতিবেদন নয়, হয়ে উঠছে মতের প্রকাশ, পক্ষের প্রতিনিধিত্ব। এই পক্ষাবলম্বনের ফলে সংবাদপত্রের প্রধান দায়িত্বসত্য প্রকাশ প্রায় অদৃশ্য।

সত্য প্রকাশের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আইনগত শাসন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টএসব আইন ব্যবহৃত হচ্ছে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধে। অনেক সময় কোনো রিপোর্ট প্রকাশের আগেই রিপোর্টারকে গ্রেপ্তার করা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে নেওয়া হয়, হয়রানির শিকার করা হয়। এটি কেবল রিপোর্টারের নয়, সমগ্র সমাজের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারের উপর আঘাত। বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এই কারণে একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছে। কেউ আর গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে চান না, সাহস পান না। ফলে দুর্নীতি, অন্যায়, শোষণ সমাজে বিদ্যমান, তা চাপা পড়ে থাকে। এই চাপা থাকা ঘটনা যখন স্যোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ পায়, তখন তা হয়ে ওঠে আরও ভয়াবহ। কারণ তখন আর পেশাগত যাচাই থাকে না, সত্য-মিথ্যার সীমা গায়েব হয়ে যায়। অথচ এসব কাজ করার দায়িত্ব ছিল মূলধারার সাংবাদিকতার। কিন্তু তারা যখন সেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়, তখনই গুজবের জায়গা তৈরি হয়।

সাংবাদিকতার এই সংকটে সবচেয়ে উপেক্ষিত ক্ষেত্র হলো প্রান্তিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হয়ে উঠতে না পারা। বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতা এখনো ঢাকাকেন্দ্রিক, পুরুষতান্ত্রিক মধ্যবিত্তপন্থী। শহরের ঘটনা, রাজধানীর রাজনীতি, উচ্চবিত্তের সংস্কৃতিএই তিন ধারা নিয়েই সংবাদ আবর্তিত হয়। কিন্তু দেশের গ্রাম, পাহাড়, চর, শ্রমজীবী মানুষ, নারীর অভিজ্ঞতা, আদিবাসী ধর্মীয় সংখ্যালঘুর কথা খুব কম উঠে আসে। তাদের না তুলে ধরলে সংবাদ মাধ্যমে যে বৈচিত্র্য প্রয়োজন, তা হারিয়ে যায়। সংবাদ হয়ে পড়ে একমুখী, একবর্ণ। হলফ করে বলতে পারি- গেল এক মাসের ব্যবধানে বেশিরভাগ টিভি চ্যানেলে চরের জীবন, পাহাড়ের অস্থিরতা, আদিবাসী নির্যাতন নিয়ে কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নেই। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ব্যাপারেও টিভিগুলো যারপরনাই উদাসীন।

টেলিভিশন সাংবাদিকতার অপর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্বাসযোগ্যতা। একসময় মানুষ খবরের জন্য টিভির দিকে তাকিয়ে থাকত। এখন মানুষ টিভিকে সন্দেহ করে, বলেসবকিছু সাজানো একেই বলে ট্রাস্ট ডেফিসিট। এই বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে সাংবাদিকতার স্বচ্ছতা নিরপেক্ষতার অভাবে। যখন দর্শক দেখেন, একটি চ্যানেল সবসময় সরকারি দলকে প্রশংসা করছে, আরেকটি চ্যানেল সবসময় বিরোধী দলকে আক্রমণ করছে, তখন তিনি আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারেন না। দর্শক মনে করেন, এটি খবর নয় নিছক প্রোপাগান্ডা। এই প্রোপাগান্ডা মার্কা সাংবাদিকতা মানুষের চিন্তাশক্তি ভোঁতা করে দেয়, সমাজকে মেরুকরণ করে তোলে। সাংবাদিকতা তখন আর আলো ফেলতে পারে না, বরং অন্ধকার ঢেকে রাখে। যখন টিভি রিপোর্টার অনিয়ম তুলে না ধরে উল্টো ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেয়, তখন মানুষ তার নিজের তথ্য নিজের মতো করেই খোঁজে নেয়। ফলে সাংবাদিকতা তার জায়গা হারায়, তার সমাজিক দায়িত্ব ভুলে যায়।

এতসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে থেকেও এখনও কিছু উদাহরণ আশার আলো দেয়। এখনও কিছু সাহসী রিপোর্টার মাঠে নেমে সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন, এখনও কিছু অনুষ্ঠান থাকে যা বিশ্লেষণ করে, বিতর্ক করে, সত্য প্রকাশ করে। কিন্তু সেই সংখ্যা নগণ্য। কারণ, কাঠামোগতভাবে সাংবাদিকতা এখন অনেক বেশি রক্ষণশীল নিয়ন্ত্রিত। সেই কাঠামো না বদলে আলোর পথ তৈরি হবে না। এই কাঠামো বদলানো সম্ভব, যদি আমরা টেলিভিশন সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবি। প্রথমত, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে, সাংবাদিকতা শত্রু নয়, বরং সমাজের আয়না। এই আয়নায় নিজের মুখ দেখা যত কষ্টকরই হোক তা খুব বেশি দরকারি। সেই কারণে আইনগুলো সংশোধন, সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ করা তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা আবশ্যক।

দ্বিতীয়ত, চ্যানেলগুলোর মালিকানা পরিচালনার মধ্যে স্বচ্ছতা পেশাদারিত্ব আনা দরকার। বুঝতে হবে সাংবাদিকতা একটি পেশা, ব্যবসা নয়। যারা কেবল ব্যবসার কারণে চ্যানেল খুলেছেন, তাদের হাত থেকে সাংবাদিকতা মুক্ত হতে হবে। পেশাদার সংবাদকর্মীদের হাতে পরিচালনা আসা চাই, যেখানে মালিক নয়, সম্পাদকই হবেন সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক। তৃতীয়ত, সাংবাদিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা, মানোন্নয়ন মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সামাজিক অর্থনৈতিক সুরক্ষা না থাকলে তারা সত্য বলার সাহস পাবেন না। পেশায় টিকে থাকার চাপে তারা আপস করবেন, আর আপসই সাংবাদিকতার মৃত্যুর কারণ। চতুর্থত, কনটেন্টে বৈচিত্র্য গভীরতা আনতে হবে। রিপোর্টিংয়ে শুধুই রাজনীতি বা অপরাধ নয়, দরকার সাহিত্য, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তি, লিঙ্গ বৈষম্যএসব বিষয়ও গুরুত্ব পাবে এমন ব্যবস্থা করতে হবে। সাংবাদিকতা সমাজকে সচেতন করে তোলে তখনই, যখন তা সমাজের সব স্তরের প্রতিনিধিত্ব করে।

সবচেয়ে জরুরি হলো, সাংবাদিকতার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা। তা করতে হলে পক্ষপাতহীন, তথ্যনির্ভর, বিশ্লেষণভিত্তিক সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। ভুল হলে তা স্বীকার করতে হবে, সম্পাদকীয় অবস্থান স্বচ্ছ রাখতে হবে। সংবাদমাধ্যমকে আবার বিশ্বাসের জায়গা করে তুলতে হবে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতা এখন এক সন্ধিক্ষণে। হয় সে পুরনো ধাঁচ ধরে পড়ে থাকবেঅর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত, দুর্বল, পক্ষপাতদুষ্ট। নতুবা সে নিজেকে বদলাবেসাহস নিয়ে, সততা নিয়ে, পেশাদারিত্ব নিয়ে। সত্যিকারের টেলিভিশন সাংবাদিকতা মানে শুধুই মাইক্রোফোন ধরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো নয়, বরং সত্যের পেছনে যাওয়া, প্রশ্ন করা, প্রশ্ন সহ্য করা, সমাজকে আরেকটু আলোকিত করা। এই আলোর যদি পথ বেছে নেওয়া যায়, তবেই আজকের সংকট আগামীদিনের সম্ভাবনা হয়ে উঠবে। তবে তার জন্য চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সামাজিক সহানুভূতি আর সাংবাদিকদের সম্মিলিত দৃঢ়তা।