শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৭ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

সন্ত্রাসবাদে মদদদাতাদের কড়া মূল্য চোকাতে হবে : মোদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ নভেম্বর ২০২২

সন্ত্রাসবাদে মদদদাতাদের কড়া মূল্য চোকাতে হবে : মোদি

সন্ত্রাসবাদীদের মদদদাতাদের কড়া মূল্য চোকাতে হবে বলে বার্তা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে অর্থ পায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো রাষ্ট্রীয় সমর্থন। কিছু রাষ্ট্র তাদের পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে। তারা তাদের রাজনৈতিক, আদর্শগত এবং আর্থিক সহায়তা দেয়। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো যেন এটা না ভাবে যে, যুদ্ধ হচ্ছে না বলে শান্তি বিরাজমান আছে -এমনটা নয়। কারণ, ছায়াযুদ্ধ সমান বিপজ্জনক এবং সহিংসতাপূর্ণ।’ 

শুক্রবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ‘নো মানি ফর টেরর’ শীর্ষক এক আলোচনা চক্রের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। পাকিস্তানের নাম না করেই মোদির নিশানা, ‘তাই যারা সন্ত্রাসবাদীদের মদদ দেয় তাদের কড়া মূল্য চোকাতে হবে। এমন অনেক সংগঠন ও ব্যক্তি আছে যারা সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর চেষ্টা করে- তাদেরও বিচ্ছিন্ন করা দরকার। এই ইস্যুতে কোন ‘যদি’, ‘কিন্তু’ থাকতে পারে না। সন্ত্রাসবাদে মদদদাতাদের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় নিশীদ প্রামাণিক, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, এনআইএ'র ডিজি দিনকার গুপ্তা ও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা। 
দিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে আয়োজিত দুই দিনের (শুক্র এবং শনিবার) এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছে ৭০টির বেশি রাষ্ট্রের ৪৫০জন প্রতিনিধি, যার মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রী, বিভিন্ন তদন্তকারী সংগঠন, ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

আলোচনায় অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে দিল্লি গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা বিশ্বকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেন, ‘আজকে বহু মানুষের জমায়েত হয়েছে কিন্তু এই জমায়েত তাকে খালি মন্ত্রীদের জমায়েত হিসেবে দেখলে হবে না। কারণ, আজকে এমন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে যেটি পুরো মানবজাতির ওপর প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের দীর্ঘমেয়াদি ফল গরিব মানুষ এবং স্থানীয় অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ছে। পর্যটন হোক বা বাণিজ্য এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেটা নিয়মিত সন্ত্রাসবাদের হুমকির শিকার হচ্ছে না। আর সেই কারণে মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্বভাবতই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সন্ত্রাসবাদের অর্থের উৎসে আঘাত হানা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে, এই আলোচনা সভা ভারতে হচ্ছে। বিশ্ব এই বিষয়টিকে গম্ভীরভাবে নেওয়ার অনেক আগে থেকেই এই দেশ সন্ত্রাসবাদের বীভৎসতা প্রত্যক্ষ করেছে। কয়েক দশক ধরেই সন্ত্রাসবাদ বিভিন্ন নামে বিভিন্ন আকারে দেশকে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। আমরা হাজার হাজার মূল্যবান জীবন হারিয়েছি। কিন্তু আমরা সাহসিকতার সাথে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলাও করেছি।’ 

তার অভিমত ‘একটি সন্ত্রাসবাদী হামলা বা একটি জীবন হারানোটাও অনেকগুলো হামলা বা জীবন হারানোর সমান। তাই সন্ত্রাসবাদ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না।’ 

তিনি বলেন, ‘আজকের বিশ্বে, আদর্শিকভাবে, সন্ত্রাসবাদের বিপদের কথা কাউকেই গোটা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যদিও, এখনও কিছু বৃত্তে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। কোথায় সন্ত্রাসবাদী হামলা হচ্ছে, তার ওপর ভিত্তি করে সেই হামলার প্রতিক্রিয়া জানানোর বিষয়টি নির্ধারিত হতে পারে না। সব সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধেই সমস্বরে গর্জে উঠা ও সমান পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তারপরেও কখনো কখনো কেউ কেউ সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থনে থাকায় এসব সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।’ 

‘এই হামলা মানবজাতি, স্বাধীনতা সর্বোপরি সভ্যতার উপরে। সন্ত্রাসবাদ কোনো সীমারেখা মানে না। কেবল অভিন্ন, ঐক্যবদ্ধ এবং জিরো টলারেন্সই পারে সন্ত্রাসবাদকে পরাস্ত করতে’, বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।  

মোদির মতে ‘সন্ত্রাসবাদী এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা দুটো আলাদা বিষয়। একজন সন্ত্রাসীকে অস্ত্র দ্বারা নিরস্ত্র করা যেতে পারে, এটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিন্তু সন্ত্রাসবাদ হলো ব্যক্তি ও সংগঠনের নেটওয়ার্ক। তাই সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করার জন্য একটি বৃহত্তর, অতিসক্রিয়, পদ্ধতিগত জবাব প্রয়োজন। আমরা যদি আমাদের নাগরিকদের নিরাপদে রাখতে চাই, তবে সন্ত্রাস আমাদের দুয়ারে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে হবে না। আমাদের অবশ্যই সন্ত্রাসীদের পিছু নিতে হবে, তাদের মদদদাতাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে এবং তাদের অর্থের উৎসতেও হানা দিতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘সংগঠিত অপরাধকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়। এই গ্যাংগুলোর অধিকাংশই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বন্দুক চালানো, মাদক ও চোরাচালানে উপার্জন করা অর্থ জঙ্গি খাতেও ব্যবহার করা হয়। এই গ্যাংগুলো সন্ত্রাসীদের রসদ ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি অর্থ পাচার এবং আর্থিক অপরাধের মতো কার্যকলাপগুলোও সন্ত্রাসের অর্থায়নে সহায়তা করে বলে জানা গেছে। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা প্রয়োজন।’

বর্তমানে সন্ত্রাসের অভিমুখ যে বদলে গেছে তাও জানান মোদি। তিনি বলেন,‘এখন সন্ত্রাসবাদের অভিমুখ পরিবর্তিত হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং নিয়োগের জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন ফাইন্যান্স প্রযুক্তির মোকাবিলা করার জন্য একটি অভিন্ন বোঝাপড়ার প্রয়োজন আছে। এসব প্রচেষ্টায় বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করাও জরুরি।’ 

‘অনেক রাষ্ট্রেরই তাদের নিজস্ব কিছু আইনি পদ্ধতি, নীতি থাকে। একটি সার্বভৌম দেশের অধিকার আছে তাদের নিজস্ব সিস্টেমের মধ্যে চলার। কিন্তু এটাও দেখতে হবে যে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যাতে এই সিস্টেমের অপব্যবহার করতে না পারে। সরকারের মধ্যে গভীর সমন্বয় ও সমঝোতার মাধ্যমে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব,’ বলেন মোদি।