শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

জাতির পিতার কখনো মৃত্যু হয়না

বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ১৫ আগস্ট ২০২৩

জাতির পিতার কখনো মৃত্যু হয়না

 ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলেও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত দুই হাজার দুই শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দু'টি ভূখন্ড এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষা-ভাষীদের নিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং ওই রাষ্ট্রের একটি প্রদেশ হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির জাতিগত বৈষম্য, শোষণ-শাসন, দমন-পীড়ন ও প্রতিক্রিয়াশীল নীতির বিরুদ্ধে বাংলার কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা, মুটে- মুজুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে তীব্র গনআন্দোলন গড়ে তোলে। 

 ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার আন্দোলন, ৫৪' সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৬২' এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৪' এর স্বাধিকার আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফার আন্দোলন ও ৬৯' এর গণঅভ্যুত্থান ও ৭১' এর মুক্তিযুদ্ধ তথা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বে প্রতিটি আন্দোলনের অভিন্ন ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পটভূমি এবং উদ্দেশ্য এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠির কাছে দৃশ্যমান ছিল। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইস্পাত কঠিন মনোবল এবং সুদৃঢ় রাজনৈতিক নেতৃত্বে বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম স্বাধীনতা যুদ্ধে রুপান্তরিত হয়। যে কারণে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পিতা হিসাবে নবরূপে আবির্ভূত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন যার প্রেক্ষিত রচনা ও সম্পূর্ণ নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিব। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত বজ্রকণ্ঠে কালজয়ী ভাষণের দিক নির্দেশনার মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন উৎসর্গ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পাকিস্তানের শৃংখল থেকে মুক্ত হয়ে ভৌগলিক স্বাধীনতা লাভ করা সত্ত্বেও মহান নেতা কারাবন্দি থাকায় স্বাধীনতার স্বাদ অপূর্ণ থেকে যায়। অবশেষে মুক্তিকামী মানুষের আশির্বাদে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা কারাজীবন শেষ করে দেশে ফিরে এলেন।

 জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে আসার পর বাংলার নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বঞ্চিত গণমানুষের আর্থসামাজিক মুক্তি ও আশা আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি শপথ গ্রহন করেন। শোষনহীন সমাজ গঠনের অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনা” সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ ও পাশ হয়। ৪ নভেম্বর ১৯৭২ সালে গণপরিষদে বাংলাদেশের খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদিত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর মাত্র ১০ মাসের মধ্যে জাতির পিতা বাংলাদেশের জনগনকে একটি পুর্নাঙ্গ শাসনতন্ত্র উপহার দেন। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর নতুন সংবিধান কার্যকর করার পর গণপরিষদ বাতিল করা হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এই চার মূলনীতির উপর ভিত্তি করে সংবিধান রচিত হয়। সংবিধানের চার মূলনীতি ঘোষণা কেবল মাত্র ঘোষণাই ছিল না, ঐ সংবিধানেই বলা হয়েছে যে, সংবিধানের মৌলিক নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূলনীতি হবে। আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তা প্রয়োগ করবে, সংবিধান বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে নির্দেশক হিসাবে কাজ করবে এবং উহা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের জীবন ও কার্য্যের মূল ভিত্তি হবে। আইন পদ্ধতির মৌলিক বিধি উপেক্ষা করে কোন ব্যক্তিকে তার জান-মাল ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যায় না। নির্বাহী কর্তৃপক্ষ বা আইন পরিষদের যথেচ্ছ হস্তক্ষেপ প্রতিরোধকল্পে সংবিধানে ন্যায়বিচারের বিধান করা হয়। জাতীয় সংসদে অনুমোদিত বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। “আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষনমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্যে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।” যা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আইনের শাসনের মূল দর্শন হিসাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। জাতির পিতা ৭২ এর সংবিধানে দেশের আপামর জনসাধারনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। মানবাধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা প্রণীত সংবিধানের নির্দেশনা অনুস্বরণের বিকল্প নেই। চার মূলনীতির মধ্যেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দিক নির্দেশনা রয়েছে। ৫০ এর দশক থেকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিফলন ঘটেছিল আমাদের সংবিধানে। ৭২-এর সংবিধান ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাঠামোগত রূপ। এরপর সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯২টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি ও বাঙালি জাতির ইতিহাস বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে প্রথম বাঙালি নেতা হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে সমগ্র বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্টই করেননি, তিনি বিশ্ববাসীর কাছে নন্দিত হয়েছিলেন।

 সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি বাংলাদেশকে লুটে পুটে খেতে চেয়েছিল, পাকিস্তানী শত্রুদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। দেশপ্রেম, নীতি ও নৈতিকতার কারনে স্বাধী