মঙ্গলবার,

০৩ জুন ২০২৫

|

জ্যৈষ্ঠ ১৯ ১৪৩২

XFilesBd

শিরোনাম

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু শনিবার উজানের দেশগুলোর কাছে বন্যা পূর্বাভাসের তথ্য চাওয়া হবে : পানি সম্পদ উপদেষ্টা নোয়াখালীতে পানি কমছে, ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিলে হাইকোর্টে রিট দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণ শেখ হাসিনা মেনন ইনুসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হত্যাকান্ড, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিচার হবে নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও করে না : প্রধানমন্ত্রী সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ আদালতের হবিগঞ্জের কার ও ট্রাকের সংঘর্ষে নারীসহ নিহত ৫ যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

দেশ ভালো থাকে জীবনের মুখরতায়

আফজাল হোসেন

প্রকাশিত: ১০:২২, ১ জুন ২০২৫

আপডেট: ২১:৪৫, ২ জুন ২০২৫

দেশ ভালো থাকে জীবনের মুখরতায়

বিশ্ববিখ‍্যাত চলচ্চিত্রকার সত‍্যজিৎ রায় ১৯৮০ তে হীরক রাজার দেশে নামে একটা চলচ্চিত্র নির্মান করেছিলেন। বহুদিন পর সেটা আবার দেখার ইচ্ছা হয়। দেখে ফেলি। তারপর দু তিনদিন ধরে থেকে থেকে মনখারাপ হয়ে যাচ্ছে। মনখারাপের কারণ, মানুষের অসম্পূর্ণতা। সে অসম্পূর্ণতা দেশ, সমাজ, মানুষ- কাউকেও রেহাই দেয় না।

সকল মানুষ সম্পূর্ণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। যা নেই, তা অর্জন করে সম্পূর্ণ হতে পারে। সে অর্জনের অসংখ‍্য উপায় রয়েছে। থাকলে কি হবে, মানুষের মনে দুঃখবোধ, গ্লানি থাকতে হয়। থাকতে হয়, যা নেই- তা অর্জন করার উৎসাহ। 

১৯৮০ তে বানানো একটা সিনেমা আবার দেখতে ইচ্ছা হলো- শুধু কি বিনোদন পাওয়ার জন‍্য? বহু সিনেমা জীবনে দেখা হয়েছে, সব দেখা সিনেমার কথা সবার মনে থাকে না। মন কোনটা মনে রাখবে, কোনটা মুছে ফেলবে- তা মনের ইচ্ছা। পড়া অনেক গল্প কবিতা, শোনা অনেক গান, দেখা বহু নাটক যদি শুধুই বিনোদন হতো- ওসবের আবেদন দীর্ঘকাল আমাদের মন বয়ে বেড়াতো না।

চিত্রকলা না বোঝা মানুষকেও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের দূর্ভিক্ষের চিত্রমালা, পিকাসোর গুয়ের্ণিকা- আটকে ফেলে। একটা অন‍্য অনুভব পায় বলে মানুষকে আঁকা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে খানিক ভাবতে হয়।

সিনেমা, নাটক, গান, সাহিত্য- এসব মানুষকে আনন্দ দেয়, বড় করে দুঃখ দিতে পারে, গভীরভাবে ভাবায়ও। মানুষ ভাববে কেনো? ভাবতে হয় কারণ, পৃথিবীতে সে একা নয়। 

যে মানুষ নিজেকে এবং চারপাশের মানুষ নিয়ে ভাবতে পারে, যে সুখী হতে চায় এবং সুখে রাখতে চায়, যে অপরের দুঃখ বেদনার ভাগ নিতে আগ্রহী- সে মানুষই দাবী করতে পারে, আমার প্রান আছে, আমি বিশ্বাসী, গর্ব করার মতো আমার একটা দেশ আছে। 

শুধু ভেবেই কি সন্তুষ্ট হবে মানুষ? কর্তব্য‍ও থাকে। 

কর্তব‍্য বিষয়ে সচেতনতা না থাকলে আর একরকমের সংকট নাকে নাক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সংকট আমাদের ছাড়ে না। ছাড়ে না মানে, দোষ সংকটের, তা নয়। আমরা খাল কাটি, সে খাল বেয়ে কুমিরের মতো লেজ দুলিয়ে সংকট হাজির হয়ে যায়। যারা অতি উৎসাহে খাল কাটে, তারা কুমিরের উপর বিরক্ত হবে কেনো?

মানুষের জগতবাস, সমাজ ও দেশ- সবকিছু সুন্দর থাকার কথা, তার বদলে সব ভন্ডুল হয়ে যায়। বরবাদ হয়ে যায়, মানুষেরই ভূমিকায়। অর্থাৎ মানুষের শত্রু মানুষই। যে মানুষ যত অবিবেচক- সে মানুষ তত বেশী শত্রুভাবাপন্ন। এজন‍্যই আমরা দেখে থাকি, অল্পতে রেগে গিয়ে কারো উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা আমাদের মধ‍্যে প্রবল। 

অবিবেচনা মানুষের অশ্রদ্ধাও বাড়ায়। আমরা দেখতে পাই- চারপাশে প্রচুর কথায় কথায় তেড়ে ওঠা মানুষ। দেখতে পাই, মানুষ অযথাই গলার জোর বাড়িয়ে কথা বলছে। এই প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ, বহু উচিত কথা বলা মানুষ অন্তরে বেজায় নড়বড়ে। 

গায়ের বা গলার জোর- কোনটাই ভালো নয়, তবু ঐ দুয়ের জোর দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতায় ছেয়ে যাচ্ছে দেশ। দেশ ভর্তি এখন তাই চেঁচামেচি আর চিৎকার। যেনো চিৎকারই একমাত্র দেশ ভালো করার অষুধ। দেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি চর্চ্চা নিয়ে ভাববার দরকার আছে বলে মনে হয় না। কোনো  উচ্চবাচ্য নেই- বরং ওসব নিয়ে দশটা মন্দ কথা বলে ফেলতে পারলে অনেকে তুষ্টবোধ করে।

হীরক রাজার দেশ একটি ইঙ্গিতপূর্ণ ‍চলচ্চিত্র। যাঁরা দেখেছেন, বহুকাল আগে দেখা সিনেমা হলেও, একটা লম্বা সংলাপ ভুলে যাওয়ার মতো নয়। সত‍্যজিৎ রায়, জগতের অতি উচ্চতর চিন্তার একজন মানুষ কেনো লিখেছিলেন- “লেখাপড়া করে যেই, অনাহারে মরে সেই। জানার কোনও শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই”।

শুনে এবং বলে হাসি পায় কিন্তু কথা হাসির নয়, নিদারুণ বেদনার। মানুষের ভবিষ্যত বলে দিয়েছেন দূরদর্শী নির্মাতা। একজন সম্পূর্ণ শিল্পী, শিল্পভূবনে তিল তিল করে বেড়ে ওঠা মানুষ- তিনি বর্তমানকে দেখেন এবং ভবিষ্যতকে সাজান সে বর্তমানের উপরে। 

পঁয়তাল্লিশ বছর আগে একজন সৃজনশীল মানুষের মনে হয়েছিল, মানুষ অজ্ঞানতা দিয়ে গৌরবের একটা দুনিয়া গড়বে। ঠাট্টার মতো শোনালেও, তা ঠাট্টা নয়। “লেখাপড়া করে যেই, অনাহারে মরে সেই। জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই” ভাবতে কেমন লাগে, নিবেদিতরা একদিন হবে ঠাট্টার পাত্র আর বরণমালা ঝুলবে গলার জোর অলাদের গলায়! 

চিৎকার দিয়েই মানুষ জন্ম নেয়, তা জন্মলগ্নে ঠিক আছে কিন্ত চিৎকারে নয়, দেশ ভালো থাকে জীবনের মুখরতায়।