
ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনলাইন কেনাকাটায় ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেলেও সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার জালে ফাঁসছে হাজারো ভোক্তা। মোবাইল ফোন, পোশাক, কসমেটিকস, গৃহস্থালী পণ্য থেকে শুরু করে গরুর হাট পর্যন্ত—প্রতারণা হচ্ছে নানান রকমের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতারকরা ফেসবুক পেইজ ও ভুয়া অনলাইন শপ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতারকরা মূলত তিনটি কৌশলে প্রতারণা করছে।
প্রথমতঃ ভুয়া পণ্য পাঠানো বা পণ্যই না পাঠানো।
অনেকে ঈদের নতুন পোশাক, জুতা বা মোবাইল ফোন অর্ডার করার পর পণ্যের পরিবর্তে সাবান বা ইট পেয়েছেন। কেউ কেউ পণ্য না পেয়ে দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর পেজ বন্ধ পেয়ে হতাশ হয়েছেন।
দ্বিতীয়তঃ নকল পণ্যে ভরা অফার।ফেসবুক বিজ্ঞাপনে বড় ব্র্যান্ডের নামে ‘মেগা অফার’ দেখিয়ে কমদামে পণ্য বিক্রির কথা বলা হয়। কিন্তু ডেলিভারির পর ভোক্তা বুঝতে পারেন, পণ্যটি নকল বা নিম্নমানের।
তৃতীয়তঃ ফেক কুরবানি গরু বিক্রি।
গত দুই বছর ধরে একটি নতুন ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে—‘অনলাইন কুরবানি গরুর হাট’। এখানে গরুর ছবি দিয়ে বিক্রির কথা বললেও ডেলিভারির সময় সম্পূর্ণ ভিন্ন বা রোগাক্রান্ত পশু পাঠানো হয়, আবার অনেকে টাকা দিয়েও কোনো গরু পাননি।
এ ব্যাপারে রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মেহরাব হোসেন বলেন,
“একটি পেইজ থেকে ব্র্যান্ডের ঘড়ি অর্ডার করেছিলাম। ২,৫০০ টাকা দিয়ে পেমেন্ট করেও কিছুই পাইনি। পেইজটি এখন আর খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না।”
একই ধরনের অভিযোগ করেন গাজীপুরের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার, যিনি ঈদের জামা অর্ডার করে প্যাকেট খুলে পান পুরাতন কাপড়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য:
সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, প্রতারণার বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও এসব চক্র বারবার নাম ও পেইজ বদলে প্রতারণা চালিয়ে যায়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,
“ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই অভিযোগ করেন না বা রিপোর্ট করেন না, যার ফলে প্রতারকরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।”
সাইবার বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক রাশেদ মেহেদী বলছেন, ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসার কোনো নিবন্ধন প্রক্রিয়া না থাকায় এগুলোকে ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারিভাবে একটি অথেন্টিক ভেরিফিকেশন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হলে সাধারণ মানুষ অনেক প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
এর প্রতিকার কিভাবে সম্ভব জানতে চাইলে মিস্টার রাশেদ মেহেদী আরও বলেন, প্রতিটি অনলাইন ব্যবসার জন্য বাধ্যতামূলক নিবন্ধন।ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম করা। সচেতনতা বৃদ্ধি ও ডিজিটাল লিটারেসি ক্যাম্পেইন।
ফেসবুক বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপনের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ।
ঈদের আনন্দ প্রতারণার যন্ত্রণা হয়ে না দাঁড়ায়, সেজন্য ভোক্তাকে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি সরকারের পক্ষ থেকেও প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও আইনি ব্যবস্থার বাস্তবায়ন। নইলে প্রতিবার ঈদের আগে এভাবেই হাজারো মানুষ হারাবে তাদের কষ্টার্জিত টাকা, বিশ্বাস আর উৎসবের আনন্দ।