লাগাতার ডাকাতি ছিনতাই ও চুরি ঠেকাতে তৎপর ড. ইউনূসের প্রশাসন। ঈদে অপরাধ বাড়তে পারে যারপরনাই এটি চিন্তা করেই পুলিশের ছুটি বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে পুলিশের ছুটি বাতিল হয়েছে বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন মহল মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, দেশ ও জনগণের নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা সব ধরণের আনন্দ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। যেহেতু বর্তমান অবস্থাটা একেবারেই ভিন্ন সেহেতু আমাদের সব ধরণের স্যাকরিফাইচ করেই চলতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ঈদের ১০ দিনের ছুটি সামনে রেখে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। ঈদযাত্রায় চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। চাঁদাবাজি যে-ই করুক, তার দলীয় পরিচয় বিবেচনায় না নিয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে।
ঈদের সময় ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গত ঈদের মতো এবারও ঈদুল আজহায় যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে-এমন দাবি করেন তিনি। এছাড়া যাত্রীদের যাওয়া-আসার নির্ধারিত ভাড়া বেশি না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি এটির তদারকিতে কমিটি কাজ করছে বলে নিশ্চিত করেছেন মিস্টার চৌধুরী। তবে রাজধানীর সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আনন্দ উপভোগ করার পরিবর্তে আতঙ্ক আর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন ঢাকাবাসী। বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। পুলিশের টহল ও নজরদারি বাড়ানোর দাবি থাকলেও বাস্তবে নাগরিকরা পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। মিরপুর ১০ নম্বরের বাসিন্দা মনোয়ারা চৌধুরী জানান, ঈদের আগের রাতে বাসায় সবাই ব্যস্ত ছিলেন রান্নাবান্না নিয়ে। সেই সুযোগে বাসার নিচের তালা ভেঙে কয়েক লক্ষ টাকার জিনিসপত্র চুরি হয়। একই রকম ঘটনা ঘটেছে উত্তরা কামারপাড়ায় কবির হোসেনের ফ্ল্যাটে। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ইঞ্জিনিয়ার আদনান, খিলগাঁওয়ের রাশেদ জামান, মোহাম্মদপুরের লিমা জামান ও পুরান ঢাকার ঋতুপর্ন ঘোষ একই ধরণের অভিযোগ করেন। তবে পুলিশের ছুটি বাতিল হওয়ায় তাদের কেউ কেউ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
সাম্প্রতিক ছিনতাই বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যরা। ঈদ কেনাকাটার মৌসুমে মার্কেট থেকে বের হওয়ার পর অনেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। নিউমার্কেট থেকে ফিরছিলেন বাংলা কলেজের ছাত্র তানভীর সুমন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে তিন ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা নিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে পালিয়ে যায়। নগরবাসীর অভিযোগ, পুলিশের টহল ব্যবস্থা খুবই সীমিত, এবং তাদের প্রতিক্রিয়া অনেক সময়েই ধীর। কমলাপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সম্প্রতি এক দম্পতি ছিনতাইয়ের শিকার হন, কিন্তু অভিযোগ জানিয়েও তারা কোনো সাড়া পাননি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তার সাথে এক্সফাইলসের পক্ষে কথা বলি। তাঁরা বলেন, ৫ আগস্টের পরে অনেক পুলিশ সদস্য ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। তারা আজ অব্দি ঢাকার বাতাস বুঝে উঠতে পারেনি। আমরা চেষ্টা করছি টহল বাড়াতে। প্রতিটি থানায় ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। তবে জনবল স্বল্পতা ও যানজট আমাদের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে।
কথা হয় পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সানা শামীনুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর দাবি,পুলিশ এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। সুতরাং ঈদের ছুটিতে যে যেখানেই থাকুন রাজধানীবাসী নিশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারেন। আমরা সজাগ আছি তাদের বাসাবাড়ি পাহাড়ায়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদের সময়ে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আগে থেকেই সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। সিসিটিভি, মোবাইল পেট্রল, কমিউনিটি পুলিশিং সব কিছুর যৌথ প্রয়োগ জরুরি। ঢাকার মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বাড়ছে, যা ঈদের মতো ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের সময়কে বিষণ্ণ করে তুলছে। নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, ঈদের আগে এবং পরে ৭ দিন বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। এদিকে ঈদের ছুটি বাতিল হওয়ায় মনে কোন ব্যথা নেই বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ঢাকার বাইরে কাজ করা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন টুটুল বলছেন, আমাদের জীবনটাই জনগণের স্বার্থে উৎসর্গীকৃত। দেশের মানুষ কিভাবে ভালো থাকবে এটাই সারাক্ষণ চিন্তা। সুতরাং লাখো মানুষের স্বস্তি দিতে গিয়ে নিজের আনন্দ বিসর্জন দেয়াতে এক ধরণের পারমার্থিক শান্তি আছে। বাংলাদেশের পুলিশের মধ্যে সেই জ্ঞানটুকু আছে। জীবন বাজি রেখে কাজ করা জনগণনন্দিত পুলিশ কর্মকর্তা এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন টুটুল আরও বলেন, আমাদের পরিবার ও সন্তানেরাও অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। তারাও দেশের মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গল নিয়ে ভাবে। তাই তারাও সর্বাধিক ছাড় দিতে প্রস্তুত থাকে। সুতরাং ঈদে ছুটি বাতিল করে মানুষের জন্য কাজ করাটা ঈদ আনন্দের মতোই। ঈদে নগর শহর গ্রাম যেন আতঙ্কে পরিণত না হয়, তার জন্য প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী এবং নাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগের কথাও বলেন পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।
