
ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে প্রায় ৪ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ব্যবসায়ীরা।
গত বছরের তুলনায় কাঁচা চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া এবার বাজারে লবণের দাম গত বছরের তুলনায় কমেছে। প্রতি কেজি চামড়া সংরক্ষণে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম লবণ দরকার হয়। সেই হিসেবে আড়তদারদের প্রয়োজন হবে প্রায় ১ লাখ টন লবণের। পাশাপাশি সরকার দেশের মাদরাসা ও এতিমখানায় বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করেছে। এসব কারণে চামড়া সংগ্রহে কিছুটা স্বস্তি থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, সরকার এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সারা দেশে খাসির চামড়া ২২-২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। এছাড়া সারা দেশে বকরির চামড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০-২২ টাকা, যা গত বছর ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, গত বছর আমরা প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছি। এরমধ্যে গরুর চামড়া ছিল প্রায় ৩ লাখ। এবার আমরা ৪ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এরমধ্যে গরুর চামড়া প্রায় ৩ লাখ এবং ছাগলের চামড়া প্রায় ১ লাখ। সেই হিসেবে আড়তদারদের প্রয়োজন হবে প্রায় ১ লাখ টন লবণের। এরমধ্যে চট্টগ্রামের বাজার থেকে লবণ সংগ্রহ করা হবে প্রায় ৬০ হাজার টন। আর বাকি ৪০ হাজার টন সংগ্রহ করা হবে নারায়ণগঞ্জ, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে। এ বছর লবণের দাম কেজি প্রতি ২-৩ টাকা কমে প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) লবণ ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকায়।
তিনি বলেন, ‘লবণের দাম কমায় চামড়া কেনা ও সংরক্ষণে আমাদের সুবিধা হয়েছে। আশা করছি, আমরা কাঙ্ক্ষিত মুনাফা পাবো। এখন পর্যন্ত আমরা চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ লবণ কিনেছি। বাকি ৫০ শতাংশ ক’দিনের মধ্যে কেনা হয়ে যাবে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ ও খুলনাসহ কয়েকটি জায়গা থেকেও লবণ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, চট্টগ্রামে আগে ১০০ এর বেশি আড়তদার চামড়া সংগ্রহে যুক্ত থাকলেও এখন সেটি ৩০ এ নেমে এসেছে। আগে চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি ছিল। এখন আছে মাত্র একটি। এটি আড়তদারদের কাছ থেকে ৪০ হাজারের মত চামড়া সংগ্রহ করে। বাকি চামড়া বিক্রির জন্য আড়তদাররা ঢাকার ট্যানারিগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির আহ্বায়ক আবদুল জলিল বলেন, সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে, সেটি মূলত সংরক্ষিত ও প্রক্রিয়াজাত চামড়ার জন্য। অনেকেই ভুলভাবে ধরে নেন, আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও এই দামে চামড়া কিনবেন। ট্যানারি মালিকেরা সাধারণত চামড়ার মান বিবেচনায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করে থাকেন। তাছাড়া চট্টগ্রামে সব চামড়ার ক্রয়-বিক্রয় সম্ভব হয় না। ঢাকায়ও পাঠাতে হয়। এতে বাড়তি পরিবহন ও আড়ত খরচ পড়ে।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবীর বলেন, ‘এবার লবণ মাঠ থেকে তোলার সময় কোরবানি পড়ে গেছে। পাশাপাশি উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তাই সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। চামড়া ব্যবসায়ীরা গত মাস থেকেই লবণ নেওয়া শুরু করেছে। প্রায় ৩০ হাজার টনের মতো বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলো এ ক’দিনের মধ্যেই তারা নিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘চাহিদা বাড়লে অনেক সময় দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এবার চাহিদা ও সরবরাহ, দুটোই ভালো দেখছি। তাই ঈদের সময় লবণের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক থাকবে। লবণ নিয়ে চামড়া আড়তদারদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না।’
এবার কোরবানির ঈদের সময় লবণের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং কোনো ধরনের কারসাজি রোধে নিয়মিত বাজার তদারকি করার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে লবণের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে অতিরিক্ত কাঁচা চামড়া থাকলে তা রফতানির সুযোগ রাখা হয়েছে। আগের বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে এবার চামড়া রফতানি উন্মুক্ত করা হয়েছে। সঠিক সংরক্ষণের জন্য সরকার দেশের মাদরাসা ও এতিমখানায় ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করেছে।