শুক্রবার,

০৬ জুন ২০২৫

|

জ্যৈষ্ঠ ২২ ১৪৩২

XFilesBd

ব্রেকিং

২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থ-উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মোট বাজেট -৭,৯০,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা-৫,৬৪,০০০ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি -২,২৬,০০০ কোটি টাকা (জিডিপির ৩.৬%) জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা-৫

বদলে যাবে মাঠের চিত্র। উৎপাদনে খুশি কৃষকেরা

কৃষি উদ্যোক্তা রাকিব হোসেনের চমক-লুমিন্যাস কৃষিপ্রযুক্তি  

তানভীর সুমন, উত্তরাঞ্চল ঘুরে এসে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৪ জুন ২০২৫

আপডেট: ০৫:৫৯, ৪ জুন ২০২৫

কৃষি উদ্যোক্তা রাকিব হোসেনের চমক-লুমিন্যাস কৃষিপ্রযুক্তি  

 

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে জাতীয় স্বাস্থ্যরক্ষায় দুশ্চিন্তার কারণ ফল ও ফসলের কীটনাশক। এটি যখন মহামারী আকারে বিস্তার ঘটাতে শুরু করেছে তখন মাঠ ও মাটিবান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে এসেছেন কৃষকবন্ধু রাকিব হোসেন। ইতোমধ্যে তাঁর কৃষিপ্রযুক্তি দেশের বিভিন্ন এলাকায় কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। আস্থা অর্জন করেছে হাজারো কৃষকের।

রাকিব হোসেন লুমিন্যাস গ্রুপের সত্ত্বাধিকারী। ইতোমধ্যে তাঁর প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে  মাটির গুণাগুণ বুঝে নতুন ধরণের কৃষি বিপ্লব। মিস্টার হোসেন বলেন, আমাদের অর্থনীতির একটি বড় খাত কৃষি। এ খাতে কর্মরত মানুষের স্বাস্থ্য বিশেষ গুরুত্ব পায় না। কৃষি খাত ও গ্রামীণ অর্থনীতির অনেক উন্নতি হয়েছে, কিন্তু কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগত পরিস্থিতি সে তুলনায় উন্নত হয়নি। জাতীয় গড় আয়ু বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৃষক ও কৃষিশ্রমিকেরা কী মাত্রায় অন্তর্ভুক্ত, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। এসব বিবেচনা করে আমরা দেশজুড়ে গবেষণা চালিয়েছি। এরপর ফল ও ফসলের বিস্তার কিভাবে ঘটানো সম্ভব তা চিন্তা করে মাঠে সরব হয়েছি।

মি. রাকিব হোসেনের অভিমত, কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত মানুষের মধ্যে ক্যানসার, কিডনি, লিভার, শ্বাসযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ বাড়ছে। এসব আমরা পেয়েছি আমাদের গবেষণা টিমের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে বিদেশি জার্ণাল বেশি সহায়ক হয়েছে। কারণ পৃথিবীর সবদেশেই কীটনাশক ও বালাইনাশকের ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু তারা যেভাবে তাদের মাটির গুণাগুণ রক্ষা করে সবুজ বিপ্লব ঘটায় আমরা তা ফলো করেছি।

মি. হোসেন আরও বলেন, রোগের সঙ্গে কৃষিকাজে রাসায়নিক কীটনাশক ও বালাইনাশক বিষ ব্যবহারের সম্পর্ক আছে বলে অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বলা হয়। তাই আমরা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারে বিশেষ যত্মশীল হয়ে কাজ করছি। এ ব্যাপারে ডিলার ও লুমিন্যাসের কর্মকর্তারা আগে মাঠ জরিপ করে তথ্য নিয়ে আসেন। তারপর মাটি বুঝে আমরা কৃষকদের কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিই।

বাজারে এতোসব কম্পানি থাকতে কেনো আপনি কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে মাটি পরীক্ষা, মাঠ জরিপ ও সর্বোপরি গবেষণার নিবিষ্ট হলেন তা জানতে চাইলে ল্যুমিনাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিব হোসেনের স্পষ্ট জবাব, মানুষের যেমন প্রতিটি রোগের বিষয়েই ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন তেমনি মাটি ও মাঠেরও ওষুধ প্রয়োজন। বছরের পর বছর ধরে একই মাটিতে যারপরনাই বিষ ব্যবহার করছেন কৃষকেরা। এর প্রভাব কমবেশি হলেও উৎপাদিত ফসলে তা পড়ছে। আমরা কেনো সব মানুষই এটা জানে। সারা পৃথিবীতেই কীটনাশকের ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু তা একটি নীতিমালা মেনে। আমরা সেই নীতি মানাতে কৃষকের কাছে আগে যাচ্ছি। পরে তার কাছে মালামাল বিক্রি করছি। কারণ আমাদের কৃষক এখনও শতভাগ ডিজিটাল হয়নি। তাদের আরও সময় লাগবে। তবে আমরা যেটি শুরু করেছি তা বহাল থাকলে এক দু বছরের মধ্যে সরকারের কৃষি দফতর আমাদেরকে উদাহরণ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় পরিচিত করাবে।   

 

আলাপ আলোচনায় মিস্টার রাকিব হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপারটাই এদেশের কৃষকেরা বুঝতে চান না। সময়ের দাবিতে এটি যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা অনেক এক্সপার্টও বোঝেন না। আমরা কৃষির টেকসই উন্নয়ন বহাল রাখতে নতুন নতুন ইনোভেশন গ্রহণ করেছি। তেপান্তরের মাঠগুলোতে লুমিন্যাসের কৃষি প্রোডাক্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। কৃষকরাও খুশি। আমরা তাদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। গ্রোথ এতোটাই ভালো যে, ডিলাররা মাল সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তখন আমাদেরকে অনেকেই ভুল বোঝেন। এমনকি বেশ কিছু পত্রপত্রিকা অভিযোগ দেয়ার চেষ্টা করে দু একটি খবরও প্রকাশ করেছে। আমরা তাতে বিচলিত হইনি। বরং তাদেরকে বলেছি, আমাদের প্রডাক্ট নিতে হলে কৃষককে কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম মানতে হয়। কারণ লুমিন্যাসের সেবার ধরণ এক দু বছরের জন্য নয়। কিংবা এটি হঠাৎ আসা কোন কম্পানি নয়। কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে আমরা বহুদূর যেতে চাই।  

কৃষি ব্যবস্থার টেকসই উন্নতি ও উন্নয়নের যে কথা মিস্টার হোসেন বলছেন তার সত্যাসত্য জানতে মাঠের কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক্সফাইলস টিম। তাতে আমরা জানতে পারি মাঠের প্রকৃত চিত্র। জমির জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশপাশি প্রাণবৈচিত্র্য অটুট রাখতে লুমিন্যাস কাজ করছে-এমন দাবি করেন উত্তরবঙ্গে কাজ করা কৃষি সম্প্রসারণ দফতরের একাধিক কর্মকর্তা। তাঁদের অভিমত, রাকিব হোসেন শুধু একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তাই নন, এই সেক্টরের আশার প্রতীক। তাঁর কাজ প্রমাণ করে দিয়েছে যে, ল্যুমিন্যাসের প্রডাক্ট সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে তার সুফল শতভাগ পাওয়া যাবেই। প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, অচিরেই তারা কৃষি ইনোভেশন হাব গড়ে তুলতে চান। এটি সম্ভব হলে একটি কৃষিপঞ্জিকাও তৈরী করবেন। সেই মতে তখন কৃষক আর খামারিরা চললে উৎপাদনে শতভাগ সাফল্য আসবে। এই সেক্টরে যে অস্থিরতা চলছে তাও দূর হয়ে এই একটি নিয়মের মাধ্যমে।