শনিবার,

০৭ জুন ২০২৫

|

জ্যৈষ্ঠ ২৩ ১৪৩২

XFilesBd

ব্রেকিং

২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থ-উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মোট বাজেট -৭,৯০,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা-৫,৬৪,০০০ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি -২,২৬,০০০ কোটি টাকা (জিডিপির ৩.৬%) জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা-৫

বাড়ছে উষ্ণতা, দিন-রাত সমানে সমান

গৌতম কুমার রায়

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ৬ জুন ২০২৫

আপডেট: ০৩:৩৯, ৬ জুন ২০২৫

বাড়ছে উষ্ণতা, দিন-রাত সমানে সমান

কেবল আমাদের কারণে প্রকৃতি দিন দিন ভারি হয়ে উঠছে। যে জন্য তার খামখেয়ালি দস্যিপনা আচরণে আসাদের জীবন হয়ে উঠছে অতিষ্ট ও ভয়ঙ্কর পর্যায়ে। মানুষের জন্য ক্ষত-বিক্ষত প্রকৃতি বিরুপ শক্তিতে আগ্রাসি হয়ে উঠেছে। গ্রীষ্মকালে প্রকৃতি স্বাভাবিক উষ্ণতাকে ডিঙ্গিয়ে আরও বেশী উষ্ণতা ছড়িয়েছে। আগে রাতের সময়ে কিছুটা গরমে রেহায় পাওয়ার সম্ভবনা ভাবাগেলেও এখন রাতের সময়ে তা আরও বেশী মাত্রা ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় ভাবনা আসে দিন এবং রাতের যে উষ্ণতার মাত্রা তা কিন্তু প্রকৃতির জীব এবং জড় কারও জন্য শুভকর নয়। মানুষ এবং জীবের কথা যদি বলি তবে, এদেরও দিন এবং রাতে তাদের শরীরের তাপের একটা আদর্শিক মাত্রা রয়েছে। যা এখন আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। দিন এবং রাতে অস্বাভাবিক উষ্ণতার কারণে এদের শরীরের উষ্ণতা উঠানামা করছে। যা মোটেও জীব বা জড় তাদের জন্য ভয়ঙ্কর বার্তা বহন করে বৈকি। উষ্ণতা উঠানামার ফলে জীবের শরীরে ক্লান্তি আসে। সামান্য পরিশ্রমে ঘাম ঝড়ে। ঘুম আসে না নিয়ম মেনে। শরীরে জলশূন্যতা সৃষ্টি হয়। যদি মানুষের কথা বলি তবে, উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য শ্রম শক্তির পূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হয় না। ফলে উৎপাদন কমে আসে। হেরফের গরমে  শ্রমশীল মানুষ, মহিলা, শিশুরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় বেশী। জলবায়ুর এই পরিবর্তিত অবস্থায় আমাদের জীবনে ঝুঁকি বাড়ছেই।

তাহলে কেন এই মাত্রা ছাড়া উষ্ণতা ? এর জন্য আমরা, বিশেষ করে মানুষ অনেকাংশে দায়ী। আমরা দিনের পর দিন জীবাশ্ম জ¦ালানীর ব্যবহার বাড়িয়েই চলেছি। যেমন কয়লা, পেট্রোল, গ্যাস। আমাদের প্রয়োজনে নবায়ণযোগ্য জ¦ালানী যেমন সৌর বিদ্যুৎ, জল এবং বাতাস শক্তিকে আজও তেমন কাজে লাগাতে পারি নাই। নবায়ণযোগ্য জ¦ালানীকে ব্যবহারে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যে আনা গেলে জীবাশ্ম জ¦ালানী ব্যবহারে সৃষ্ট তাপ, কেøশ কম হতো। কেননা এই তাপ ও কেøশ, তাপ প্রবাহ বিংবা শুষ্ক তাপের চেয়েও ভয়াবহ। তাপ প্রবাহ কিংবা শুষ্ক তাপের প্রভাব নগর ভিত্তিক জীবনে বেশী প্রভাবিত। বর্তমান সময়ের যে উষ্ণতা বাড়ছে তাতে দেশের ঘন জনগোষ্ঠির প্রতিটি শহর বা নগর এক একটি তাপের চেম্বার। এখানে গাছ নেই, ইট,লৌহা, সিমেন্ট, বালুতে তৈরী কংক্রিটের আঁচর, এর সাথে রয়েছে প্রতিটি বহুতল রুমে ফ্রিজ, এয়ারকোলার,রেফ্রিজারেটর। এগুলো বিষাক্ত গ্যাস রিলিজ করে বাইরের তাপকে বাড়িয়ে দেয়। এখান থেকে নির্গত হয় মিথেন গ্যাস এমন কি কার্বন ডাই অক্সাইডের মত তাপ সৃষ্টিষ্কারি এবং তাপ সংরক্ষণকারি গ্যাস।

আমাদের দেশের মাটি সমতল বলা হলেও আমাদের রয়েছে পাহাড়ী অঞ্চল এবং বিস্তর উপকূলীয় এলাকা। এই এলাকায় সমতল অঞ্চলে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, পাহাড়ী অঞ্চল এলাকায় ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং উপকূলীয় এলাকায় ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলো আদর্শিক । কিন্তু য়দি এই সব এলাকায় বিশেষ করে সমতল অঞ্চলে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, পাহাড়ী অঞ্চল এলাকায় ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলে তাকে পরিবেশের চিন্তায় বলা হয়ে থাকে “হিট ওয়েভ” প্রভাব। বর্তমানে এই দেশের প্রতিটি এলাকায় তাপমাত্রার হিট ওয়েভ পর্যায়কে ছাড়িয়ে গেছে। এমন কি তা দিনে এবং রাতে সমান কখনও দিন বা রাতে হেরফের হয়ে বয়ে চলেছে।

বিভিন্ন গবেষণার আশংকা বলছে আগামী ৫০ বছরে বিশে^র গড় তাপমাত্রা নাকি ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়তে পারে। তাহলে বিশে^র মোট জনগোষ্ঠির মধ্যে ৩০০ কোটি মানুষ অনুভব করবে সাহারা মরুভূমির যন্ত্রণা। যা কিনা ১ লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে হয়েছিল বলে বিজ্ঞানীরা বলেছেন। প্রকৃতির সহনশীল তাপমাত্রার চেইন ভেঙে গেছে। এখন বছরে তাপ সহিষ্ণু দিন এবং রাত্রির সংখ্যা কমে গেছে। উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় গরম দিন এবং রাতের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা একটি বিষয়ে ঐক্যমতে এসেছেন তাহলো, ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ সময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্প উপস্থিতি বৃদ্ধির কারণে, দিনের চেয়ে রাতে অনুভূত গরম বেড়েছে ০.২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস হারে। আমাদেরকে ভাবতে হবে যত বেশী জলীয় বাষ্প তত বেশী তাপ সংরক্ষণ হয় বাতাসে।

যদি মানুষের কথায় আসি তবে, মানুষের শরীরের অভ্যান্তরীণ আদর্শ উষ্ণমান হলো ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। প্রকৃতিতে উষ্ণতা বাড়লে আমাদের শরীরের ভেতরের তাপও বাড়ে। এতে শরীরের কার্যকর  অর্গানগুলোর স্বাভাবিক কার্যকারিতায় প্রভাব পরে। এতে ঘুমের বাঁধা আসে। প্রতি ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস উষ্ণতা বাড়লে প্রতি মাসে ৩ দিন ঘুমে ব্যাঘাত হয়। আমাদের স্বাভাবিক উষ্ণতার মাত্রা হলো ২০-২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই তাপে মানুষের চলাফেরা, ঘুম, খাওয়া স্বাভাবিক ভাবে হতে থাকে। ঘুমের বাঁধা হলে তার চলকে বিঘœ ঘটে। এতে শ্রম ঘন্টা কমে আসে। উৎপাদন কমে যায়। মনে রাখতে হবে আমারে শরীর হতে ঘাম বাষ্পীভূত হতে না পারলে শরীরে আয়েশ আসে না। যা জীবনের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে পরে।  এ জন্য মানুষের হিট স্ট্রোক হয়ে যায়। যা কিনা দিন দিন বাড়ছেই। এ অবস্থা গ্রামের চেয়ে শহুরে জীবনে বেশী হচ্ছে, কেননা শহুরে পরিবেশ এখানে গাছ নেই, ইট,লৌহা, সিমেন্ট, বালুতে তৈরী কংক্রিটের আঁচর আবাসন তৈরী। এখানে মাটির জল বাষ্পভূত হয়ে শিতল হতে বাঁধা পায়। এখানে গাছ-পালা না থাকায় প্রচ্ছেদন প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্প নির্গত যেমন হয় না। আবার  বাতাস ঠান্ডা হতে পারে না। অল্প জমিতে অধিক জনসংখ্যার কারণে দেশে আবাসন বাড়ছে। আমাদের নতুন নগরায়ন বেড়েছে ৭৩ শতকরা পক্ষান্তরে বন-বৃক্ষ কমেছে ২০ শতকরা। জলাভূমি এবং পরিত্যাক্ত জমির পরিমাণ কমেছে মাত্রা ছাড়া। সব মিলে হিসেব করলে তা হবে প্রায় ৫০ শতকরা।

পরিশেষে বলতে পারি জলবায়ুর এই তান্ডবে জীবের হৃদক্রিয়াসহ জটিল অসুখ বাড়ছে। এছাড়া বিনা বাঁধায় বাড়ছে ডেঙ্গু,ম্যালেরিয়া, কলেরা,ক্যান্সার, করোনা এবং মহামারি খ্যাত অসুখও।

লেখক: গৌতম কুমার রায় বিশিষ্ট গবেষক, উদ্ভাবক পরিবেশবিজ্ঞানী।