শুক্রবার,

০৬ জুন ২০২৫

|

জ্যৈষ্ঠ ২৩ ১৪৩২

XFilesBd

ব্রেকিং

২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থ-উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মোট বাজেট -৭,৯০,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা-৫,৬৪,০০০ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি -২,২৬,০০০ কোটি টাকা (জিডিপির ৩.৬%) জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা-৫

এসএসিইপি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ৪ জুন ২০২৫

আপডেট: ০২:৪৬, ৫ জুন ২০২৫

এসএসিইপি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে

দক্ষিণ এশীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, নাগরিক সমাজ গোষ্ঠী এবং অন্যান্য সম্প্রদায় গত পাঁচ বছরে সম্মিলিতভাবে ১০.২ মিলিয়ন কিলোগ্রাম প্লাস্টিক বর্জ্য এই অঞ্চলের নদ-নদী ও সমুদ্রকে দূষিত করা থেকে বিরত রেখেছে।

আজ এখানে প্রাপ্ত এক বার্তায় বলা হয়, এর পরিমাণ প্রায় ২,৫৫০টি পূর্ণ বয়স্ক এশীয় হাতির ওজনের সমান।

দক্ষিণ এশিয়া সমবায় পরিবেশ কর্মসূচি (এসএসিইপি) বাস্তবায়িত বহু-দেশীয় ও বহুমুখী উদ্যোগ, দক্ষিণ এশিয়ার প্লাস্টিক মুক্ত নদী ও সমুদ্র (প্লিজ) প্রকল্পের আওতায় এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

প্লিজ প্রকল্পের অধীনে অংশগ্রহণকারী ছয়টি দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ৬,২৬,০০০ কিলোগ্রামেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্যকে দরকারি সম্পদে পরিণত করার মাধ্যমে পুনর্ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে।

দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বৃত্তাকার প্লাস্টিক অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য এসএসিইপি এবং প্লিজ প্রকল্পের প্রচেষ্টা ৫ জুন ২০২৫ বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই বছরের দিবসের প্রতিপাদ্য হল 'বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণের অবসান', যা মানব স্বাস্থ্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস এবং আরও ভালোভাবে পরিচালনা করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

প্লিজ প্রকল্পের ফলাফল প্লাস্টিক বর্জ্য রোধ ও পুনর্ব্যবহারের বাইরেও সুদূরপ্রসারী। প্রকল্পটি প্লাস্টিকের ব্যবহার (বিশেষ করে ব্যাগ, কাপ এবং স্ট্রর মতো একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক) কমাতে এবং পরিবার, সম্প্রদায় ও শিল্পে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য কোম্পানি এবং নাগরিক সমাজের গোষ্ঠীগুলির সাথে কাজ করে। প্রকল্পটি প্লাস্টিক জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে ৩০টি প্রযুক্তিগত বা সামাজিক উদ্ভাবনকে অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করেছে।

ইতোমধ্যে, প্লাস্টিক সম্পর্কিত নীতি এবং নিয়ন্ত্রক দিকগুলি উন্নত করার জন্য, অথবা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জটিলতাগুলি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য বেশ কয়েকটি দেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের বর্জ্য সংগ্রহের কাজ যেমন ল্যান্ডফিল থেকে ময়লা ফেলা বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র বাছাই করার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়ে প্লিজ প্রকল্পটি তাদের কর্মপরিবেশ উন্নত করার চেষ্টা করেছে।
এই প্রকল্পটি নারী বর্জ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ, শিশু যত্ন, স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিষেবাগুলিতে আরও ভাল সুযোগ প্রদান করার পাশাপাশি নিরাপদ কর্ম পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে উপকার করেছে।

এসএসিইপি দক্ষিণ এশিয়ার সমুদ্রে প্রবাহিত প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে বৃত্তাকার অর্থনীতি সমাধানের উদ্ভাবন ও সমন্বয় জোরদার করার জন্য ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্লিজ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে।

উন্নত পরিবেশ ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৮২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা হিসেবে, এসএসিইপি এর সদস্য দেশগুলিকে টেকসই ব্যবস্থায় এগিয়ে নেয়ার যাত্রায় সহায়তা করার একটি ম্যান্ডেট রয়েছে।

নাগরিক সমাজ সংস্থা, বেসরকারি কোম্পানি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে অংশীদারিত্বে, প্লিজ প্রকল্প স্থানীয় চাহিদা ও অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে কার্যকর সমাধান খুঁজে পেয়েছে।

বাংলাদেশে এ প্রকল্পের আওতায় প্লাস্টিক কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করার জন্য, ভাসমান আবর্জনা রোধক স্থাপন করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের ভাটিতে আরও দূষণ রোধ করে এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে সুরক্ষিত করে।

কল্যাণপুর, রামচন্দ্রপুর খাল এবং মোহাম্মদিয়া হাউজিং রোডে রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনস কর্তৃক স্থাপন করা ট্র্যাশ ব্যারিয়ারগুলি প্রতিদিন ১,২০০ কেজি প্লাস্টিক আটকে রাখে।

ভুটানে, পিইটি বোতলগুলিকে পলিয়েস্টার উলে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যা সমাধানে সরাসরি অবদান রাখছে। এই প্রক্রিয়াটি ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতলগুলিকে খেলনা এবং জ্যাকেটের মতো পণ্য তৈরির কাঁচামালে রূপান্তরিত করে। ক্লিন ভুটানের এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে ১০ হাজারের বেশি প্লাস্টিক বোতল পুনর্ব্যবহার করেছে।

মালদ্বীপে, কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্ট লিংকেজ (সিইএল) প্লাস্টিকের বোতলের বর্জ্য রোধ করতে এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাচের বোতল ব্যবহার বাড়ানোর জন্য মিমু মুলাহ দ্বীপ জুড়ে ১০০ টিরও বেশি পানি পরিশোধন মেশিন স্থাপন করেছে। মেশিনগুলি মাছ ধরার জাহাজেও স্থাপন করা হয়, যা প্লাস্টিকের পানির বোতলের ব্যবহার উলে¬খযোগ্যভাবে হ্রাস করে।

নেপালে, বায়োকম্প দ্বারা নিম্নমানের প্লাস্টিকের জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য সুবিধা স্থাপন করা হয়েছে, যা এই উপকরণগুলিকে প্লাস্টিকের কম্পোজিট বোর্ডে রূপান্তরিত করে। এই সুবিধাটি প্রতিদিন ১০,০০০ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করে।

পাকিস্তানের করাচিতে এখন ৬০টি 'ইকো রিফিল স্টেশন' রয়েছে যা নতুন প্যাকেজিংয়ের পরিবর্তে রিফিল বিকল্পের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালি পণ্য - যেমন রান্নার তেল ও শ্যাম্পু  কেনার একটি টেকসই সুবিধা দিচ্ছে। দাভাম লাইফ ধারণা করছে, গ্রাহকরা ৭,০০০ কেজিরও বেশি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এড়াতে পারছে। 

শ্রীলঙ্কায়, চক্র সুথরা কর্তৃক স্থাপিত স্মার্ট রিসাইক্লিং বিনগুলি প্লাস্টিক ফেলার জন্য উৎসাহ প্রদান করে। মানুষ প্লাস্টিকের বোতল জমা করতে পারে এবং তাৎক্ষণিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট পেতে পারে যা একটি মোবাইল ফোন অ্যাপের মাধ্যমে ডেটা ক্রয় এবং বিল পরিশোধের জন্য পরিশোধযোগ্য।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে, এসএসিইপি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বৃত্তাকার অর্থনীতি সমাধানের ক্ষেত্রে উন্নত নীতি উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রদান করেছে।

এই প্রকল্পের অধীনে বহু-অংশীদার নীতি সংলাপ হিসেবে ২০২৪ সালে ছয়টি উচ্চ-পর্যায়ের জাতীয় গোলটেবিল আলোচনা এবং ২০২৫ সালের এপ্রিলে কলম্বোতে একটি আঞ্চলিক গোলটেবিল আলোচনা আয়োজন করা হয়েছিল।
এই ফোরামগুলি নীতি, প্রযুক্তিগত এবং বাজার-ভিত্তিক সমাধানগুলি অন্বেষণ করে, সম্ভাব্য প্লাস্টিক বর্জ্য সমাধানের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করে।

এই প্রকল্পটি একটি হ্যাকাথনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় যুবকদের সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করে, জৈব-অবচনযোগ্য মাছ সংরক্ষণের বাক্স, একটি এনজাইম-ভিত্তিক প্লাস্টিক জৈব-অবচন সমাধান এবং গৃহস্থালির বর্জ্য হ্রাস করার জন্য একটি গেমিং অ্যাপের মতো অনেক নতুন ধারণা তৈরি করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার জন্য প্লাস্টিক মুক্ত নদী এবং সমুদ্র (প্লিজ) হল সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলা এবং টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য এই অঞ্চলের বৃহত্তম উদ্যোগ। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এবং ইউএনওপিএসের সহায়তায় এসএসিইপি দ্বারা বাস্তবায়িত এই প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, প্রতিযোগিতামূলক অনুদান এবং বৃত্তাকার অর্থনীতি সমাধানের মাধ্যমে উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।