
কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়। এই সময়ে পোশাক, খাদ্য, পরিবহন, পশুর হাট, রেমিটেন্স, জাকাত-ফিতরা ইত্যাদি খাতে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২ থেকে ২.৫ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে । এই বিশাল অর্থপ্রবাহের সুযোগে বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদাবাজি একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা হয়ে উঠেছে
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতিরাতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এই চাঁদাবাজি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় সংঘটিত হয় । ঈদের সময় এই চাঁদাবাজির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
ফুটপাত ও অস্থায়ী দোকানঃ
ঈদ উপলক্ষে ফুটপাত ও অস্থায়ী দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের হার বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, গুলিস্তানে ফুটপাতের দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়, যা আগে ছিল ৩০০ টাকা । এই ধরনের চাঁদাবাজি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে।
মার্কেট ও শপিং মলঃ
চাঁদনী চক মার্কেটের মতো স্থানে ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত ৭০০ টাকা করে ঈদ উৎসব ভাতা আদায় করেন, যা মূলত চাঁদাবাজির একটি রূপ ।
পরিবহন খাতঃ
ঈদের সময় পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বেড়ে যায়। লেগুনা স্ট্যান্ড, মালবাহী ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটে ।
পশুর হাটঃ কোরবানির পশুর হাটে চাঁদাবাজি একটি সাধারণ ঘটনা। পশু বিক্রেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা আদায় করা হয়, যা বাজার ব্যবস্থাপনার ব্যাঘাত ঘটায়। চাঁদাবাজির সম্ভাব্য পরিমাণঃ
উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে চাঁদাবাজির সম্ভাব্য পরিমাণ নিম্নরূপ হতে পারে:
কাঁচাবাজার ও পাইকারি বাজার: প্রতিদিন ৫০ লাখ টাকা × ৩০ দিন = ১৫০ কোটি টাকা। ফুটপাত ও অস্থায়ী দোকান: প্রতিদিন ৫০০ টাকা × ১০,০০০ দোকান × ৩০ দিন = ১৫০ কোটি টাকা। মার্কেট ও শপিং মল: ১,২০০ দোকান × ৭০০ টাকা = ৮.৪ লাখ টাকা। পরিবহন খাত: প্রতিদিন ১০ লাখ টাকা × ৩০ দিন = ৩০ কোটি টাকা। পশুর হাট: প্রতিদিন ২০ লাখ টাকা × ১০ দিন = ২০ কোটি টাকা।
এই হিসাব অনুযায়ী, ঈদুল আজহা উপলক্ষে মোট চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা হতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি রিপোর্টার্স সমিতি ইআরএফের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম দিলাল মনে করেন, চাঁদাবাজি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ব্যয়ে ফেলে এবং পণ্যের দাম বাড়ায়। এই সমস্যা সমাধানে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেন মিস্টার দিলাল। তার পরামর্শ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ হতে পারে। ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সচেতন করাও জরুরী। পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার তথা চাঁদাবাজি রোধে সিসিটিভি ক্যামেরা ও অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার এটি রোধে সহায়ক হবে।
তবে সবেচেয়ে বেশি দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদাবাজি বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।