
আমেরিকায় আমার প্রিয় জায়গা ক্যালিফোর্ণিয়ায় এসেছি। রাজ ভাইদের রাজ্য সানফ্রানসিসকোতে। দারুণ এই শহরটা প্রেমে পড়ার মতো।
এদিকে আসার পর থেকেই প্রতিদিন সকালে উঠেই দেখি আকাশ ভাইয়ের কয়েকটা মিসকল। একাধিকবার ফোন করে লোকটা খোঁজ নিচ্ছেন। নিউইয়র্কে তিনি মোনালি মৌসুমীদের নিয়ে ব্যস্ত। তারে কইলাম - ঈদ কইরা কিছুদিনের জন্য আসবো নিউইয়র্কে।
এবারে ক্যালিফোর্নিয়ায় দুটো শর্ট ফিল্মের শুটিংয়ের জন্য এসেছি। এসব বিস্তারিত পরে জানাবো।
আগামীকাল এখানে জেমস ভাইয়ের শো। শো টা রাজ ভাই-রুবনা ভাবীরা স্পন্সর করছেন। সেই সুবাদে আজ ছিল জেমস ভাইয়ের সাথে মিট এন্ড গ্রিট। সব স্পন্সরদের সাথে ডিনার পার্টি।
রাজ ভাই বললো - আপনিও চলেন। জেমস ভাইয়ের একজন ম্যানেজার আছেন মি. রবিন। চেনেন তাকে? ভাল মানুষ। আমি কইলাম- মনে হয় চিনি আমি মি. রবিনকে !!
রবিন ভাইকে একটা টেক্সট করলাম। কইলাম জেমস ভাই কেমন আছেন? কতদিন দেখিনা তারে !! তিনি ফোন ব্যাক করলেন। কথা হইল অনেকক্ষন।
অনেকদিন পর জেমস ভাইয়ের সাথে দেখা হবে বলেই ছুটে গেলাম। আমার কাছে বাংলাদেশে যে দু-চারজন সত্যিকার অর্থে গ্লোবাল স্টার আছেন, তাদের ভেতরে আমাদের জেমস ভাই।
সানফ্রানসিসকোতে একটি ছোট্ট সুন্দর পার্টি হলে ঢুকলাম সন্ধ্যার পর। .. সকলে অপেক্ষা করছেন জেমস ভাইয়ের জন্য।
মাইক্রোফোন হাতে আয়োজকদের একজন ঘোষণা দিচ্ছেন, আমাদের গুরু জেমস আর ২২ মিনিট পর আমাদের কাছে আসবেন। সবাই হৈ হল্লা না করে আপনারা সারিবদ্ধভাবে ছবি তুলবেন।
আরেকটু পর আগামীকালের কনসার্টের দুই সুন্দরী উপস্থাপক ঘোষণা দিলেন - আর ৫ মিনিট পর জেমস ভাই ঢুকবেন। আমরা যার যার আসনে বসে থাকি। শৃঙ্খলা বজায় রাখি। ব্যাপারটা অনেকটা বিমান টেক অফের মতো.. মজাই লাগলো।
আমি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চেয়ারে বসে পড়লাম।
জেমস ভাই এলেন। হলে যেহেতু খুবই সিলেকটিভ মানুষ। সারিবদ্ধভাবে ছবি তুলছেন সবাই। আমাকে রবিন ডাকলেন।
কিন্তু তার আগেই ফান্টি ভাই দেখে আমাকে বাইরে নিয়ে গেলেন। কতবছর পর ফান্টি ভাইকে দেখলাম।
ফান্টি ভাই বললেন- তোমারে এখানে পাবো ভাবি নাই। কেমন আছো..? চোখের সামনে তোমরা বড় হয়ে গেলা !!
আমি কইলাম , আমরা বড় হইলাম কিনা জানি না, কিন্তু আপনি তো আর বুড়া হইলেন না।
সমস্বরে হাসতে হাসতে কইলো- না তানভীর,
বুড়ো হয়ে গেছি। আর কতকাল !!
মি. রবিনকেও দেখলাম অনেকদিন পর। অলমোস্ট তিনি আগের আদনান সানি হয়ে গেছেন। পেছনে চুলের ঝুটি করা মি.রবিনের। রবিন বললেন- কতদিন পর আপনারে দেখলাম!
জেমস ভাই ভক্তদের সাথে ছবি তোলার ব্যাপারে বরাবরই খুবই নিরামিষ প্রকৃতির। এবং খুবই লাজুক ভঙ্গিতে ক্যামেরায় বেচারার বেশে তাকায়া আছেন। চোখে মুখে তার অস্বস্তি দেখতে পাচ্ছি..
হঠাৎ জেমস ভাই আমার দিকে চোখে চোখ পড়তেই - আরে তানভীর তুই, এখানে ? কবে আসলি? বউ পোলাপান নিয়া আসছোস? না একা?
একসাথে এতগুলো প্রশ্ন করে জবাব না শুনেই বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
মি.রবিন ছবি তুলে দিলেন।
বললাম- আপনার সাথে দেখা হয়না অনেকদিন। তাই ভাবলাম, আপনারে একটু দেখে যাই।
ভাল করছিস। তুই দাঁড়া, কথা আছে।
ওদের ছবি তোলার কাজ শেষ করি ..
আমি দাঁড়িয়ে প্রিয় জেমস ভাইকে দেখতে লাগলাম। ইদানিং জেমস ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বললে বা দেখলেই আমার বাচ্চু ভাইয়ের কথা মনে পড়ে বারবার। কেন জানি না..
আহারে ..বাচ্চু ভাই, শাফিন ভাই , খালিদ ভাই, জুয়েল ভাই .. সব আমার কলিজার বড়ভাইগুলা একে একে চলে গেল।
এসব যাবার পর জেমস ভাইকে খুব বলতে ইচ্ছে করে। ভাই শরীরের যত্ন নিয়েন।
কি জানি - হয়ত আমিও তার আগে চলে যেতে পারি।
জেমস ভাইয়েরা আসলে আমার বা আমাদের জীবনে এক একটা নস্টালজিয়া অধ্যায়। এটা আসলে বলে বুঝাইতে পারবোনা কাউরে !!
ছবি তোলা কর্মসূচী ও আয়োজকদের ঘোষণা শেষ করে বেরিয়ে যাবার সময় খপ করে হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলেন জেমস ভাই.. পেছনে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো আয়োজক ও অনেকে।
জেমস ভাইয়ের আবারও প্রশ্ন -
এখানে কাজ কর্ম ঠিক ঠাক চলছে তোর?
না হলে বলবি- আমার লোকজন আছে।
বউ বাচ্চা নিয়ে আসছস তো ?
আমি কইলাম - ওরা ঘুরে গেল মাসখানেক। আমিও অক্টোবরে দেশে যাবো। আসা যাওয়ার ভেতরে আছি ভাই । এরপর আরো খানিকটা কথা। পেছন থেকে আয়োজকদের তাড়া। তারা সবাই জেমস ভাইয়ের সাথে রওনা দেবে।
বললেন- তানভীর, কালকে আয়। শো শেষ করে কথা হবে। আসিস ..
ভাইকে আর বলতে পারলাম না-
কাল লস এনজেলেসে যাবো একটা কাজে।
থাকলে ভালই লাগতো। অনেকদিন সামনাসামনি জেমস ভাইয়ের গান শুনি না। গ্রীনরুমে আড্ডা দিই না।
আহা কত কত স্মৃতি- ঢাকার আর্মি স্টেডিয়াম, সাউন্ড গার্ডেন, চিটাগাং চেরাগি পাহাড়.. জীবনের কতটা সময় এসব মানুষদের সাথে সাথে মোহের ভেতরে কেটে গেছে !
সত্যিই ভালো লাগে এই ভেবে যে - আমরা জেমস ভাইদের সাথে নব্বই দশকের ধুলোবালি খাওয়া শ্রোতা দর্শক।
ভাল থাকুক প্রিয় জেমস ভাই ..