
এখনকার মেয়েরা সবসময় শাখা পলা পরে না, তবে এর একটা দীর্ঘ এবং সুন্দর ইতিহাস আছে। শাখা পলা শুধু দুটো সাদা আর লাল রঙের চুড়ি নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি নারীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর আবেগ।
এক সময় ছিল যখন শাখা পলা পরা ছিল বাঙালি হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের আবশ্যিক একটি অলঙ্কার। বিয়ের পর কনের হাতে শাখা পলা পরানো হতো, যা তার বিবাহিত জীবনের প্রতীক হিসেবে গণ্য হতো। এটা শুধু একটা ফ্যাশনের জিনিস ছিল না, বরং এর একটা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ছিল। শাখা ছিল শঙ্খের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি, যা শুভ বলে মনে করা হতো। আর পলা তৈরি হতো লাল প্রবাল দিয়ে, যা শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। এই দুটি রঙের মেলবন্ধন বাঙালি নারীর জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে, এমনটাই বিশ্বাস করা হতো।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলেছে। এখনকার মেয়েরা শুধু শাখা পলার ওপর নির্ভরশীল নয়। তারা বিভিন্ন ধরনের আধুনিক গয়না পরতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। কর্মজীবী মহিলারা সবসময় হাতে শাখা পলা পরে কাজ করতে হয়তো স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। তাছাড়া, শাখা পলার দামও অনেক সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
তবে এর উল্টো দিকে একটা চিত্রও কিন্তু আছে। এমন অনেক মেয়ে আছেন যারা আজও শাখা পলা পরেন, হয়তো রোজ না হলেও বিশেষ অনুষ্ঠানে বা উৎসবে তারা শাখা পলা পরতে ভালোবাসেন। তাদের কাছে এটা শুধু একটা গয়না নয়, এটা তাদের ঐতিহ্যের অংশ, তাদের শিকড়ের টান। এমনকি, অনেক আধুনিক ডিজাইনের শাখা পলাও আজকাল বাজারে দেখা যায়, যা তরুণ প্রজন্মের মেয়েদেরও আকৃষ্ট করছে।
আসলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শাখা পলা পরার অভ্যাসের পরিবর্তন এসেছে ঠিকই, তবে এর গুরুত্ব একেবারে কমে যায়নি। এটা আজও বাঙালি নারীর সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। হয়তো এখন এর ব্যবহার কিছুটা সীমিত হয়েছে, কিন্তু এর ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্য আজও অমলিন। শাখা পলা আজও অনেক বাঙালি নারীর মনে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।