শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

চলে গেলেন ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন

বর্ণি খালিদ (অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী)

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২২ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ০৩:৩৬, ২২ জানুয়ারি ২০২২

চলে গেলেন ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন

‘মাসুদ রানা`র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন(ছবি:সংগৃহীত)

একে একে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সব আপন জনেরা।চলে গেলেন শ্রদ্ধেয় কাজী আনোয়ার হোসেন চাচা।

 (উনি আমার বাবার বড় মামা ড: কাজী মোতাহার হোসেন দাদার বড় ছেলে)।খবরটা জেনে মনটা ভিষন ভাবে বিষন্ন হয়ে আছে। চাচাই আমাদের তিন ভাইবোনের বই পড়ার নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলেন।

 আমাদের বেড়ে ওঠার বিভিন্ন সময়ে কিশোর থ্রিলারের তিন গোয়েন্দার বই গুলো থেকে শুরু করে মাসুদ রানার বই গুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তাম। কত স্মৃতি যে মনে পড়ছে।

আব্বুর কাছে শুনেছি, দাদীর সাথে ছোটবেলায় আব্বু যখন চাচাদের সেগুনবাগিচার বাড়িতে যেতো, চাচা আব্বুকে সাইকেলের সামনে রডের উপর বসিয়ে ঘুরতে নিয়ে যেতেন,পুকুর পাড়ে বসিয়ে সাঁতারের নানা রকম কসরত দেখাতেন,এয়ারগান দিয়ে পাখী শিকারে বের হতেন,আব্বু দৌড়ে সেই পাখী ধরে আনতো, সেগুলো দিয়ে আবার পিকনিক হতো।

মাসুদ রানার অনেক বই প্রকাশের আগেই আব্বুকে উনি পান্ডুলিপি পড়তে দিতেন, আব্বু বলে পান্ডুলিপি পড়ার মজাই নাকি আলাদা।এমন কত যে গল্প আছে, আমরাও রোমান্চিত হতাম শুনে।

চাচার গানের গলাও মন্ত্রমুগ্ধকর ।চাচার গাওয়া পুরাতন দিনের সিনেমার গান গুলা শুনে চমকিতো হই সব সময়। মনে পড়ছে-'তালাশ'সিনেমার 'রিক্সাওয়ালা'গান, 'সুতরাং'সিনেমার 'এই যে আকাশ' গান গুলো।

মনে পড়ছে,চাচা বড়াপুকে ২০ টা তিন গোয়েন্দার বই উপহার দিয়েছিলেন, আর আব্বুকে বলেছিলেন-'তোর বাচ্চাদের মাথায় বইয়ের পোকার বাসা বানিয়ে দিবি'।

আমাদের বাসায় ১১টা বইয়ের আলমারী আছে,সেগুলোর মধ্যে সেবা প্রকাশনীর বইয়ের আলাদা আলমারী আছে, এই আলমারীটার বেশীর ভাগ বইই চাচার উপহার।

আমরা তিন জন পাল্লা দিয়ে পড়তাম, কোটেশন মুখস্ত করতাম আর যখন যেমন ইচ্ছে নিজেদের কিশোর-রবিন-মুসা-জিনা মনে করতাম।আর একটু যখন বড় হয়েছি তখন মাসুদ রানা কে ঘিরে কল্পনা জগত তো ছিলোই।

লুকিয়ে বই পড়া, গল্পের নায়কের প্রেমে পড়া,চোখের পানি ফেলা, হেসে গড়িয়ে পড়া,শিহরিত হওয়া-সেই সব অনুভুতি তৈরির কারখানা ছিলেন চাচা। বই গুলোর গন্ধ এখনো মনে লেগে আছে। প্রিয় চাচা সব সময় আমাদের মনের মধ্যে থাকবেন বইয়ের গন্ধের মতো, রঙিন হয়ে থাকবেন  প্রচ্ছদের মতো।

যে যাবার তাকে তো ধরে রাখার কোন উপায় নাই,আমরাও এক সময় চলে যাবো,কিন্তু চাচার সৃষ্টি গুলো তৈরি করতেই থাকবে মন্ত্রমুগ্ধ নতুন পাঠক।অনন্তকাল চাচা বেঁচে থাকবেন লক্ষ লক্ষ মানুষের শ্রদ্ধায় ভালবাসায়,তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে। কিছু মানুষ আছেন যাঁরা পৃথিবীর সম্পদ, প্রকৃতির ক্ষমতা নাই তাঁদের মুছে ফেলার। তাঁরা শুধু নিজেকে নয়, পরিবারকে নয় স্বজনদের নয়, গর্বিত করেন সারা বিশ্বকে।দোয়া করি,আমাদের সবার প্রিয় নবাব চাচা যেখানেই আছেন যেন শান্তিতে থাকেন।আল্লাহ্ যেনো চাচাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। চাচার স্নেহে ভরা আশীর্বাদের হাতটা যেনো থাকে আমাদের মাথায় সব সময়।