
স্মরণঃ সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা পারভীন
ত্রিশূল হাতে, রুদ্রাক্ষের মালা পেচিয়ে কিংবা কপালে চন্দনতিলকের বেশ ধরে তিনি ‘ফরিদা ফকিরাণী’ হতে পারতেন। হতে চাননি। তিনি শিল্পী ছিলেন। লালন শিল্পী। অযুত নিযুতবার লালনের পংক্তি উচ্চারণ ও জপের ভেতর দিয়ে এক ঘোর-তমশা তাকে জেঁকে ধরেছিল। তিনি সেদিকে থাকতে চাননি। ওই পথে পা বাড়াননি, কারণ সেটি তার পথ নয়। শিল্পীর জীবনের দায় ভিন্ন এই উপলব্ধি ও দায়বদ্ধতা তিনি সারাজীবন লালন করেছেন।
লালনের বাণী সুরেলা। তা এক অপার্থিব ঘোর হয়ে মানুষের হ্রদয়ে প্রবেশ করে। গলা ফাটিয়ে, গলা বসিয়ে, গলা কাঁপিয়ে কোনোমতো একটি মজমা জমানো যায়, কিন্তু সুফিসাধকদের ঘুর্ণনের মতো কঠিন আবেশ সৃষ্টি করা যায়না। ফরিদা পারভীন এই ঘোর সৃষ্টি করতেন।
ফরিদা পারভীন নিজেকে পুজার পাত্রে পরিণত করেননি। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক ও শিল্পী হিসেবে লালন সাঁই এর সৃষ্টির অনুরণন তুলেছেন বিশ্বময়। তার সৃজন, বীক্ষণ ও জীবন প্রবাহ অনেক বেশি উচ্চতা ছুঁয়েছে।
২০১৮ সালের এক বিকেলে আকস্মিকভাবে তার ঢাকার বাসায় গিয়েছিলাম আমি আর লাইলা। তিনি একাই ছিলেন। কুষ্টিয়ার সন্তান হিসেবে আমরা প্রিয় স্বজনের অকৃত্রিম ভালোবাসায় এক অমৃত সুধা পানের আনন্দ নিয়ে ফিরেছিলাম। কতশতবার প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে দেখা হয়েছে, কিন্তু সেবারের সঙ্গে অন্য কোনোবার মেলে না।
ফরিদা পারভীন। লালনের বাণীর সঙ্গে আপনার কন্ঠের যাদু অগণন হৃদয়ে অপরিহার্য হয়ে থাকবে।