
এমন কোন দিন যায় না যেদিন বাবার কথা মনে পড়ে না। কত গল্প জমে আছে, কত কথা। আবার যখন দেখা হবে তখন কি এত গল্প মনে থাকবে? স্মরণ করছি আমার বাবা কমরেড মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহকে। তিনি ছিলেন আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষ, সবচেয়ে মানবিক মানুষ। তিনি ছিলেন ভাষাসৈনিক, ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের একমাত্র আলোকচিত্রী, বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারক এবং পঞ্চাশের দশকে বামপন্থী আন্দোলনের অন্যতম নেতা।’
আমার বৃদ্ধ বাবা
এখনও বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেন।
পৃথিবীটা ওলোট-পালোট হয়ে গেছে সেই কবে
অথচ তিনি স্বপ্নের ইঁটে সাম্যবাদী সমাজের গাঁথুনিতে মগ্ন।
তিনি এখনও খাপড়া ওয়ার্ডের কথা বলেন, ভাবেন লেনিনের কথা,
শহীদ কমরেডদের স্মৃতিতে আজও শোকতর্পণ করেন
আর নিজের দেহের ক্ষতচিহ্নে অজান্তে হাত বুলান।
আমার বাবা শ্রেণিহীন সমাজের প্রতীক্ষায় দিন গোনেন,
পুরানো দিনের সুরে গেয়ে ওঠেন ইন্টারন্যাশনাল।
বয়সের ভারে নুব্জ তার দুর্বল শিরদাঁড়া
দেহের ভার নিতে বারে বারে অক্ষমতা জানায়,
তবু তিনি আজও মাথা নত না করার উপদেশ দেন।
আমার প্রায়-অন্ধ বাবা ডাস ক্যাপিটালের পাতা ওলটান
আর মায়ের হাতে নকশা তোলা
মলিন রুমালে কার্ল মার্ক্সের ঝাপসা ছবির ধুলো মোছেন।
আমার দরিদ্র বাবা
ছেলের দামী গাড়িতে না চড়ে
হুইল চেয়ারে শহীদ মিনারে যেতে চান।
তার ক্ষীণ কণ্ঠে আজও শুনি
রণেশ দাশ, মণি সিংহ, চারু মজুমদারের রূপকথা।
এই বৃদ্ধ কমরেড
রক্তহীন ফ্যাকাশে হাতে
অন্তহীন লাল পতাকা বুনে চলেন।