
বাড়ছে ঢাকার পরিধি, কমছে জমি। জনবিস্ফোরণ রোধে সরকারের নেই পদক্ষেপ। ডেভেলপার কম্পানির নেই গবেষণা।
ঢাকা যেন এক সীমাহীন শহর—প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে ভবন, আর কমছে খালি জায়গা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ঢাকায় এখন বসবাস করছে প্রায় দুই কোটিরও বেশি মানুষ। প্রতি বছর এই সংখ্যা বাড়ছে গড়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশ হারে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শহরের পরিধি বাড়ছে এক অনিয়ন্ত্রিত, পরিকল্পনাহীনভাবে।
রাজউকের মাস্টারপ্ল্যানে ঢাকার সম্প্রসারণের দিক নির্ধারণ করা হয়েছে পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে। পূর্ব দিকে বালু নদীর ওপারে—ডেমরা, রূপগঞ্জ, পূর্বাচল—এই অঞ্চলগুলো এখন ডেভেলপারদের সবচেয়ে পছন্দের। এখানে জমির দাম তুলনামূলক কম, ভবিষ্যতে মেট্রোরেল সংযোগ ও নতুন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। ফলে অসংখ্য আবাসিক প্রকল্পের কাজ চলছে দ্রুত। কিন্তু পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে জলাধার ও নিম্নভূমি ভরাট চলতে থাকলে ঢাকার জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
দক্ষিণে কেরানীগঞ্জ এবং নবীনগর হয়ে ঢাকার বিস্তার ঘটছে পদ্মা সেতুর পর। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের কারণে এই অঞ্চল এখন নতুন বিনিয়োগের কেন্দ্র। কিন্তু এখানেও একই চিত্র—পরিকল্পনা নেই, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, অথচ একের পর এক টাওয়ার উঠছে। উত্তরের দিকে আশুলিয়া ও তুরাগ অঞ্চলেও গড়ে উঠছে নতুন আবাসন প্রকল্প, যেখানে ডেভেলপারদের দৌরাত্ম্য প্রকট, কিন্তু জনসেবামূলক অবকাঠামোর উন্নয়ন নেই বললেই চলে।
রাজউক, সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং নীতিমালার দুর্বল প্রয়োগ এই সমস্যাকে আরও জটিল করেছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর প্রভাব এতটাই বেড়েছে যে, পরিকল্পনা প্রণয়ন হলেও তা বাস্তবায়নে বাধা আসে নানা পর্যায়ে। ফলে রাজধানীর বিস্তার এখন “ডেভেলপার নির্ভর” হয়ে পড়েছে, যেখানে নাগরিক কল্যাণ নয়, অগ্রাধিকার পাচ্ছে ব্যবসায়িক স্বার্থ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার ভার কমাতে এখনই প্রয়োজন পরিকল্পিত স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তোলা। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের আশেপাশে সমন্বিত নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া ঢাকার ওপর থেকে চাপ কমানো সম্ভব নয়। নচেৎ রাজধানীর বিস্তার হবে, কিন্তু সেই বিস্তারের সঙ্গে বাড়বে আরও বিশৃঙ্খলা—যানজট, জলাবদ্ধতা, ও বসবাসযোগ্যতার সংকট।
ঢাকা এখন এক বিপরীত বাস্তবতা—যেখানে উন্নয়নের নামে বিস্তার ঘটছে, কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে বাসযোগ্যতার মূল চেহারা। রাজধানী কোন দিকে যাবে, তা নির্ধারণ করবে না শুধু মানচিত্রের দিকনির্দেশ, বরং নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর ডেভেলপারদের জবাবদিহিতা।