
রুনা লায়লার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন পশ্চিম বাংলার চলচিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষ। সেই অনুষ্ঠানে রুনা মাঝে মাঝে গাইছেন নানা জনপ্রিয় গানের অংশবিশেষ। সেখানে তিনি গাইলেন “খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়" গানটির কয়েকটি লাইন। কিন্তু লালনের গানটিতো ‘অচিন পাখি “কমনে” আসে যায়’, “কেমনে” আসে যায় নয়। খুঁতখুতে ঋতুপর্ণ ঘোষও সেটা ধরতে পারলেন না।
“কমনে” আসে যায়কে “কেমনে” আসে যায় করলে গানের অর্থ বা ভাব পরিবর্তন হয়ে যায়। লালন ইঞ্জিনিয়ার, সায়েন্টিস্ট বা অ্যানাটমিস্ট ছিলনে না যে দেহের ভেতর অচিন পাখি বা আত্মা “কেমনে” বা কিভাবে আসা যাওয়া করে সেটা নিয়ে তিনি উৎসুক হয়ে পড়বেন। লালন খুঁজেছেন “কমনে” মানে কোন দিক দিয়ে আসা যাওয়া করে সেটি। কারন “পাখিটি” কোন দিক দিয়ে আসা যাওয়া করে সেটি বুঝতে পারলে তিনি “মনবেড়ি” দিতেন পাখিটির পায়ে।
তিনি জানেন দেহে “আট কুঠুরি, নয় দরজা আঁটা, মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাঁটা, তার উপরে সদর কোঠা, আয়নামহল আছে - সেখানে তিনি খুঁজছেন এমন দেহের মধ্যে কোন দিক দিয়ে “পাখি” আসা যাওয়া করে সেটি। এখানে নিশ্চিত বর্তমান শিল্পজগতের উপাস্য পুজনীয় যারা, এক কমেন্টকারি যেমন লিখেছেন যে “ইশ আমাদের গর্ব রুনা ম্যাম আর জগৎ বিখ্যাত চলচিত্র নির্মাতা ঋতুদা, কি যে ভালো লাগছে দু'জনকে একই মঞ্চে দেখে” - এই গর্বরা ততটা মনোযোগী নন লালন কি বলতে চেয়েছেন গানটিতে, সেটিতে।
আর এক বিখ্যাত শিল্পী লতা মুঙ্গেশকরকে একবার এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়েছিল এই যে সিনেমায় আপনার এত আবেদনময়ী সব রোমান্টিক গান, নামকরা আকর্ষনীয় সব নায়ক বা গায়কেরা আপনার সাথে সেগুলোতে সূর মিলিয়েছেন বা গেয়েছেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ আপনার গান শুনে আবেগে মথিত হন, এগুলো কখনও আপনার মনে আবেগের ঢেউ তোলে না? জবাবে লতা মুঙ্গেশকর অনেক হেসেছিলেন, তার পর বলেছিলেন বিন্দুমাত্রও না। তারপর তিনি বলেছিলেন তবে আমি যখন ভক্তি সঙ্গীত গাই, তখন আমার চোখে জল ঝরে, আমি আটকে রাখতে পারি না, আমি আবেগে আপ্লুত হই।
গুগল সার্চ দিলাম ‘অচিন পাখি “কেমনে” আসে যায়’ আর ‘অচিন পাখি “কমনে” আসে যায়’ এই দুভাবে। ফল আসল “কেমনে” ১৫০০০ আর “কমনে” ৩,০০০। ফরিদা পারভিন এবং গুটি কয়েক শিল্পী ছাড়া ৯০ ভাগ নামকরা জনপ্রিয় গায়ক বা কর্পোরেট মিডিয়া ও পেজে “কেমনে” আর অপরিচিত বাউল এবং গ্রামীন গায়ক ও তেমন কেউ না দেখা প্রায় নিভে যাওয়া প্রদীপের মত পেজগুলো এখনও দেখা যাচ্ছে “কমনে”। এইসব বাউলেরা মারা গেলে "কমনে" একেবারে হারিয়ে যাবে এবং নিরঙ্কুশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে “কেমনে”।
ইদানিং ধর্ম নিয়ে আমার লেখালেখিতে অনেকেই বেশ উদ্বিগ্ন যে বয়স বেড়ে যাবার পর আমি ধর্মকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়লাম কিনা। শুধু তারা বিভ্রান্ত যে সেটা কোন ধর্মের দিকে ঠিক বুঝতে পারছে না। আবার সাহস করে প্রশ্নও করতে পারছে না। তাদের বলে রাখি যে চিন্তুিত হবার কারন নেই। লালনের এই গানটির মত ধর্মগুলোও যারা আজ পালন করছে, প্রচার করছে, ধর্ম বাঁচিয়ে রাখার লড়াই করছে তারা আসলে ধর্মের মূল বিষয়গুলো একেবারেই বোঝে না। “কেমনে” নিয়ে তারা ঝগড়া, ফ্যাসাদ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে যদিও ধর্মের আসল উদ্দেশ্য হল “কমনে” বা কোন দিক দিয়ে পাওয়া যায় তাকে। ইদানিং ধর্ম নিয়ে আমার লেখালেখির কারন হল এই বিষয়গুলো একটু তুলে ধরা