সোমবার,

১৩ অক্টোবর ২০২৫

|

আশ্বিন ২৮ ১৪৩২

XFilesBd

মতামত- গণভবন শেখ হাসিনার সম্পত্তি ছিলো না।

শঙ্কর মৈত্র

প্রকাশিত: ০১:২৮, ৬ অক্টোবর ২০২৫

মতামত- গণভবন শেখ হাসিনার সম্পত্তি ছিলো না।

গণভবন শেখ হাসিনার সম্পত্তি ছিলো না। শেখ হাসিনার বাবারও না। কারো বাবার না। গণভবন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। দেশের জনগণের সম্পদ। দেশের যে যখন প্রধানমন্ত্রী হবেন তখন তিনি সেখানে থাকবেন। বাংলাদেশের সংসদ ভবনের স্থপতি লুই কানের নকশায় গণভবনকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে রাখা হয়েছে। গতবছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাড়াতে গিয়ে গণভবনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর লুটপাট করা হয়। বিক্ষুব্ধ মানুষের প্রতিক্রিয়া এটা হতেই পারে। কিন্তু সেই গণভবনকে জাদুঘর বানাতে হবে কেনো? তাও রাষ্ট্রের ১শ ১১ কোটি টাকা খরচ করে? এই টাকা জনগণের করের টাকা। এটা এখানে খরচ করতে হবে কেনো? কি ভাবে খরচ হচ্ছে? কারা কাজ করছে? কতোটাকায় কি কেনা হচ্ছে? ইতিমধ্যে টিআইবি এই জাদুঘরের নামে শতকোটি টাকা খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠছে। আমরাও জানতে চাই রাষ্ট্রের এই শতকোটি টাকা কারা কি ভাবে খরচ করছেন? স্বচ্ছ হিসাব চাই। 
গণভবন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী এসে কোথায় থাকবেন? ড. ইউনূস থাকছেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়। তিনি অস্থায়ী দায়িত্বে আছেন। নির্বাচন দিয়ে তাকে চলে যেতে হবে। কিন্তু নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করবেন। তিনিও কি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে থাকবেন? সেটা কেমনে হয়? দেশের প্রধানমন্ত্রী অতিথি ভবনে থাকবেন! প্রধানমন্ত্রীর একটা বাড়ি থাকবে না? পৃথিবীর সব দেশেই প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির বাসভবন আছে। এগুলো রাষ্ট্রীয় প্রতীক।
 এ ছাড়া যমুনার মতো একটা ছোট্ট বাড়িতে দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন? তাঁর নিরাপত্তার বিষয়আশয় জড়িত থাকবে না!
আমার মনে হয় গণভবনকে জাদুঘর বানানোর সিদ্ধান্তটি ভুল। এটা কোনো কু-মতলব থেকে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের অর্থের অপ্রয়োজনীয় খরচ আর লুটপাটের জন্য। 
এটাতো শেখ হাসিনার বাড়ি না। এটা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। শেখ হাসিনা নেই বলে কি আর কোনো প্রধানমন্ত্রী আসবেন না? ১১১ কোটি টাকা খরচ করে জাদুঘর বানাতে হবে?
মহান মুক্তিযুদ্ধের পরও তো অদ্যাবধি রাষ্ট্রীয় খরচে কোনো জাদুঘর বানানো হয় নি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর যা আছে সেটাও বেসরকারি উদ্যোগে ট্রাস্টের মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো। সেগুনবাগিচায় ভাড়া বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কয়েকজন ট্রাস্টি সেটা শুরু করেছিলেন। সাধারণ জনগণসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনুদান দিয়েছে। কয়েকবছর আগে আগারগাঁওয়ে সরকার জায়গা দিলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সেখানে নির্মাণ করা হয়। তখনো মানুষ অনুদান দিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানতো মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বড় হতে পারে না। রাষ্ট্রীয় খরচে যেখানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ হয় নি সেখানে শতাধিক কোটি টাকা খরচ করে গণভবনকে তড়িঘড়ি করে জাদুঘর বানানোর মাজেজাটা কি? এটা কি শুধুই জুলাই অভ্যুত্থানকে ধারণ করা না এর আড়ালে অন্য কিছু আছে? ২/৪/৫ কোটি টাকা না ১১১ কোটি টাকার প্রজেক্ট। টাকার পরিমাণ আরো বাড়বে। এই টাকার হিসেবে নিকেশ কার কাছে? দেশের জনগণ কোনো হিসেবে জানবে না? না কি মুজিববর্ষের মতো বে-হিসেবি খরচ আর লুটপাট হবে? একেক জন একেকটা মওকা পেয়ে রাষ্ট্রের অর্থ লুটপাট করবেন? 
এই এখতিয়ার কে দিয়েছে তাদের? 
রাষ্ট্রের অর্থের তসরুপ করার আরেকটি প্রকল্প গণভবনকে জাদুঘর বানানো। ভবিষ্যতে যদি অন্য কোনো স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী আসেন, তিনি যদি যমুনায় থাকেন, জনগণ যদি তাকে তাড়িয়ে যমুনা ভাংচুর লুটপাট করে, পরবর্তী শাসক এসে কী যমুনাকেও জাদুঘর বানাবে? তা হলে তো দেশে ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্বিক ইতিহাসের জাদুঘর বাদ দিয়ে শুধু রাজনৈতিক জাদুঘর তৈরী হতে থাকবে। আমরা কি সে দিকেই যাচ্ছি!