রোববার,

১৯ অক্টোবর ২০২৫

|

কার্তিক ৩ ১৪৩২

XFilesBd

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে কেনো ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের শেষ কনটিনজেন্ট ! কর্মকর্তাদের মুখে কুলুপ। উৎকণ্ঠায় অন্যরাও।

শিউলী সিকদার, নিউ ইয়র্ক জাতিসংঘ দফতর থেকে

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ০৪:৩৬, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে কেনো ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের শেষ কনটিনজেন্ট ! কর্মকর্তাদের মুখে কুলুপ। উৎকণ্ঠায় অন্যরাও।

বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষী (Formed Police Unit বা FPU) কংগো (ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো) থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে জাতিসংঘ। অতি সম্প্রতি জাতিসংঘের এমন সিদ্ধান্ত যারপরনাই নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। কেনো না বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সেনারা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ ও সমস্যা জর্জরিত এলাকায় অত্যন্ত গৌরব কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। সূত্র  জানিয়েছে, এই একমাত্র অবশিষ্ট পুলিশ কনটিনজেন্টই ছিল বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের সর্বশেষ দল। প্রত্যাহারের নির্দেশে বলা হয়েছে, ১৬২ জন সদস্য ২০ অক্টোবরের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা হবেবাকি ১৮ জন প্রশাসনিক লজিস্টিক কাজ শেষ করে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ফিরে আসবেন।  এই দলটি কেবলমাত্র এক মাস রোটেশন শেষে কাজ শুরু করেছিল (সেপ্টেম্বর মাসে) এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত এসেছে। পুরো ব্যাপারটিকে কুটনৈতিক ব্যর্থতা বলেই দাবি করেছেন বিশ্লেষকরা।

কিন্তু কেনো এমন হলো? মাত্র ক’দিন আগে যোগ দেয়া পুলিশের কনটিনজেন্ট কেনোই বা প্রত্যাহার হলো? অনুসন্ধান বলছে, বাংলাদেশ পুলিশ দীর্ঘদিন থেকেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে এসেছে।  বাংলাদেশ পুলিশের একাধিক মিশনে নিয়োজিত থাকার সুপরিচিত কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি ছিল—বিশেষ করে নারী FPU ইউনিটের অংশগ্রহণ ছিলেন গৌরবের বিষয়। যদিও বাংলাদেশ পুলিশ বেশ কিছু দেশে এখনও শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত রয়েছে, তবে এই কনটিনজেন্ট প্রত্যাহার হচ্ছে। এ ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে নিম্নলিখিত কিছু পয়েন্ট সামনে আনার চেষ্টা চলছে। যেমন-

জাতিসংঘের অর্থ সংকট বাজেট হ্রাস:

আন্তর্জাতিক মুদ্রাগোষ্ঠী ও বিভিন্ন দাতা দেশের অর্থায়ন কমে যাওয়া এবং UN শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর ব্যয়হ্রাস নীতি গ্রহণের ফলে গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে বলা হয়েছে, সদস্যসংখ্যা globally প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেট সংকোচনের কারণে অনেক দেশের কনটিনজেন্ট হ্রাস করা হচ্ছে; বাংলাদেশও এর প্রভাব থেকে অবশিষ্ট থাকতে পারল না। সংশ্লিষ্ট UN নথি ও বাংলাদেশ পুলিশ সূত্র বলেছে, বাংলাদেশের কনটিনজেন্ট পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে, যেখানে অন্য দেশগুলোর কনটিনজেন্ট আংশিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

মানবাধিকার নীতিগত চাপ:

যদিও সরাসরি এই ঘটনায় মানবাধিকার উদ্বেগকে মূল কারণ বলা হয়নি, তবে এমন একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে যে গতকালের বছরগুলিতে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বিশ্বমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার নজরে এসেছে। এই কারণে বিশেষ নজর এবং সমালোচনা থাকতে পারে, যা UN নীতিমালায় বা সদস্য দেশগুলোর অবদানে প্রভাব ফেলতে পারে।

কূটনৈতিক আলোচনাগত দুর্বলতা:

কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন যে, বাংলাদেশ সরকারের পর্যাপ্ত কূটনৈতিক উদ্যোগ ও UN মিশনের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাদের সঙ্গে সময়মতো আলোচনায় অনীহা বা অনযোগিতা এই সিদ্ধান্তকে সহজ করেছে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, অন্য দেশের যেমন ক্যামেরুন, সেনেগাল ও মিশর কেবল আংশিক হ্রাস পাচ্ছে, তাহলে পুরো কনটিনজেন্ট প্রত্যাহার করার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ হিসেবে দেখা যেতে পারে। সঙ্গত কারনেই তাই মনে করা হতে পারে যে, এ ঘটনার নেপথ্যে পুরোটাই বাংলাদেশের ইনটেরিম সরকারের কূটনৈতিক ব্যার্থতা বিরাজিত। এমনকি এখনো পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তর বা মিডিয়া বিভাগ থেকে স্পষ্ট বর্ষীয়ান প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

দূরদৃষ্টিহীন প্রস্তুতি সমন্বয়ের অভাব:

সংবাদসূত্র বলেছে, কনটিনজেন্টটি খুব সীমিত সময়ের জন্য প্রেরিত হয়েছিল এবং তারা কার্যক্রম শুরু করেই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসে। যদি শুরু থেকেই সম্ভাব্য বাজেট সংকট, UN-এর কার্যকারিতা ও অনিশ্চয়তা বিবেচনায় নেওয়া হত, তাহলে পরিকল্পনায় অন্য বিকল্প থাকতে পারত।

পালটা প্রভাব অপশন:

এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা অবদানে এক বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।  পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গৌরব ও প্রাপ্তি স্বল্প সময়েই শেষ হয়ে গেল। ভবিষ্যতে যদি আবার অংশগ্রহণ শুরু করা হয়, তাহলে কূটনৈতিক প্রস্তুতি, বাজেট অনুমোদন ও UN-সহ আলোচনাকে স্বচ্ছ ও সক্রিয় করতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ উভয়কে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে সিদ্ধান্তবহির্ভূত প্রত্যাহার এ রকম হঠাৎভাবে না ঘটে।

সন্দেহসমূহ:

এখন পর্যন্ত কোনো অফিসিয়াল চিঠিপত্র বা প্রামাণ্য নথি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়নি যে এই সিদ্ধান্তের সব নির্ধারণমূলক কারণ স্পষ্টভাবে দেখায়। বাংলাদেশ পুলিশ বা সরকারের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ প্রতিবেদনে এই পুরো প্রক্রিয়া ও বিনিময় আলোচনা, কূটনৈতিক মেইল/চিঠি ইত্যাদির তথ্য পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিকভাবে এই ধরনের প্রত্যাহারে অন্য বড় অবদানকারী দেশগুলোর পরিবর্তন ও নীতিমালা বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে দেখা যায়, বাংলাদেশ কেন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হলো অন্যদের মতো আংশিক হ্রাস নয়।

বর্তমানে প্রাপ্ত তথ্য থেকে বলা যায়, অর্থ সংকট ও UN শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর বাজেট হ্রাস হচ্ছে প্রধান কারণ, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষা মিশন মাঝপথে বাতিল করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় কূটনৈতিক প্রস্তুতির ঘাটতি, আলোচনা ও সমন্বয়ের অভাব এবং বিশ্বে মানবাধিকার ও নীতিগত চাপ—এই বিষয়গুলোও একটি অন্তর্নিহিত ভূমিকা থাকতে পারে।