সোমবার,

০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

|

অগ্রাহায়ণ ২৩ ১৪৩২

XFilesBd

বিএনপিপন্থীদের আক্ষেপের শেষ নেই

আওয়ামীপন্থী শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের ত্রাতা শেকৃবি ট্রেজারার

নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ০২:৩৮, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

আওয়ামীপন্থী শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের ত্রাতা শেকৃবি ট্রেজারার

বিএনপির উপর ভর করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ট্রেজারার অধ্যাপক মুহাম্মদ আবুল বাশার। প্রভাবশালী আওয়ামী পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এনজিও থেকে আসা একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার জোরালো সুপারিশে শেকৃবির ট্রেজারার পদে আসীন হন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার দৌরাত্ম। অনুগত আওয়ামীপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা বদলির কথা উঠলেই তিনি তার অপশক্তি প্রয়োগ করে বাধা দেন। নিজ দপ্তর, শরীরচর্চা শিক্ষা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি দপ্তরে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ট্রেজারারের আশ্রয়ে বহাল তবিয়তে থেকে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদের প্রভাবশালী নেত্রী (আপন ছোট বোন ) হাসিনা বেগমকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পোস্টিং দিয়েছেন। এ ব্যপারে ট্রেজারার আবুল বাশারকে একাধিকবার ফোন করে রেসপন্স মেলেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব অভিযোগ তাদের অজানা। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি করে এর সত্যতা যাচাই করবেন বলে জনসংযোগ অফিসের মাধ্যমে জানানো হয়।

অনুসন্ধান বলছে, ট্রেজারারের পরিবারের সবাই কট্টর আওয়ামী লীগ। দোসর হিসেবে আওয়ামী আমলে ব্যাপক সুবিধাভোগী। সম্প্রতি শেকৃবিতে তাঁর সুপারিশে ১২ থেকে ১৫ জন লোক বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের সবাই আবুল বাশারের নিজ এলাকার লোকজন এবং কয়েকজন চিহ্নিত আওয়ামী ক্যাডার, যাদের ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে সরাসরি রাজপথে থাকার প্রমাণ রয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এদের নিয়োগ বাগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি এখন ক্যাম্পাসে ‘ওপেন সিক্রেট’।

সূত্র জানায়, ট্রেজারার আবুল বাশারের আপন ছোট বোন মিসেস হাসিনা বেগম ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি, ধামরাই আসনের সাংসদ এবং শেকৃবির সিন্ডিকেট সদস্য বেনজির আহমেদের সুপারিশে ২০১২ সালের ৭ এপ্রিল ৫৬ তম সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনক্রমে শেকৃবিতে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৮ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদ’ এর মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি নিজেকে শেখ মুজিবের আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী বলে দাবি করেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর হাসিনা বেগম তাঁর বড় ভাই ট্রেজারার মুহাম্মদ আবুল বাশারের হাত ধরে কৃষি অর্থনীতি বিভাগ থেকে পরিষদ শাখায় ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে প্রাইজ পোস্টিং বাগিয়ে নেন। এছাড়া তাঁর আপন ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের পুরস্কারস্বরূপ তিনি ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট পদ লাভ করেন। এ তথ্য সবারই জানা যে, হল প্রভোস্ট তাঁরাই হন যারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি বিশেষভাবে অনুগত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেকৃবির এক শিক্ষক বলেন, ট্রেজারার আবুল বাশার তাঁর পরিবারের সদস্যদের আওয়ামীপন্থা অনুসরণের বিষয়টি গর্বের সঙ্গে জাহির করেন। এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী ভিসিও তাঁর ছোট ভাইকে ছাড়া নাকি চলতে পারেন না। নিজেদের প্রভাবের জানান দিতেই তিনি এ প্রসঙ্গ প্রায়ই তোলেন বলে জানান ওই শিক্ষক।

শেকৃবির একাধিক কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, ট্রেজারার মুহাম্মদ আবুল বাশারের স্ত্রীর বড় ভাই সরিফুল ইসলাম বাবু রাজশাহী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং রাসিক'র সর্বশেষ প্যানেল মেয়র ছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলার আসামি হয়ে তিনি আশ্রয় নেন ট্রেজারার আবুল বাশারের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়স্থ চামেলী ভবনের ৮০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে। প্রায় দু’মাস সেখানে আত্মগোপনে থাকার পর লোকজনের মাঝে জানাজানি হলে তিনি অন্যত্র চলে যান।

সম্প্রতি ট্রেজারার মুহাম্মদ আবুল বাশার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী কৃষিবিদদের সংগঠন ‘এগ্রিকালচারিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (এ্যাব)-এর যুগ্ম আহ্বায়ক পদ বাগিয়ে নেন। এরপর প্রকাশিতব্য কমিটিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। সূত্র জানায়, কমিটিতে নিজেকে শক্তিশালী করতে দুর্দিনের ত্যাগী বিএনপিপন্থী কৃষিবিদদের কোণঠাসা করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপোষকামীদের নিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করছেন আবুল বাশার।

এ বিষয়ে কয়েকজন কৃষিবিদ আক্ষেপ করে বলেন, তাঁর মতো আওয়ামী পরিবারের লোক এবং আওয়ামীপন্থীদের পৃষ্ঠপোষক যদি এ্যাবের নেতা হয়ে যান, তাহলে বিএনপিপন্থীদের কোনো উপকার হবে না। আওয়ামীপন্থীরা টাকার বিনিময়ে আরও বেশি আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে। ফলে দুর্দিনে দলের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ আর থাকবে না বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে ট্রেজারার আবুল বাশার তার ব্যবসায়িক পার্টনার ভিসির সাথে যোগসাজশে মোটা দাগের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী পরিবারের এবং ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করা লোকজনকে সম্প্রতি চোরাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন। কট্টর আওয়ামী পরিবার রিপন কুমার মজুমদারের তিন জন,লাঠি মিছিল করা ন্যাংড়া মামুন, ইউসুফ বাবুর্চির স্ত্রী, ইদ্রিস বাবুর্চির ভাগিনা, দুঃসময়ে বিএনপির পদ থেকে পদত্যাগকারী এসি সেলিমসহ পরিবারের তিন জনের নিয়োগ দিয়েছেন। শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের সংগঠন থেকে আলাদা আলাদাভাবে অভিযোগ করে বলা হচ্ছে, এভাবে চললে আগামীতে আওয়ামী লীগ তোষণকারীদের দখলে যাবে শেরেবাংলা।