সোমবার,

০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

|

অগ্রাহায়ণ ২৩ ১৪৩২

XFilesBd

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অবদান

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা। বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা

নিউ ইয়র্ক থেকে বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:৪৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা। বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা

কতোজনই তো বিদেশে আছেন! প্রতিনিয়তই কেউ না কেউ যাচ্ছেন। কিন্তু বিভুঁইয়ে শত কাজের অবসরে কে ভাবেন দেশের জন্যে, দশের কল্যাণে? পৃথিবীজুড়ে এমন বাঙালির সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তাদেরই একজন নিউ ইয়র্কে বসবাসরত বিশ্বজিৎ সাহা। নিজের খেয়ে বোনের মোষ তাড়ানোর মতো সারাক্ষণ ব্যস্ত প্রিয় মাতৃভূমিকে তুলে ধরতে। এর জন্য ঝক্কি ঝামেলা, নিন্দুকদের ইর্ষা ও বিপদের মুখোমুখি যে পড়তে হয় না তা কিন্তু নয়। সে সব উতরে আমেরিকার বুকে বিশ্বজিৎ সাহা বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়। বিজয়ের মাসে এক্সফাইলস এমন সব পাগলা ক্ষ্যাপাটে বাঙালিকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে নতশিরে।

নিউ ইয়র্কে একুশ উদযাপন (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) এবং শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠায় মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটি কিছু মানুষের রক্তচক্ষু ও নিন্দা উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছে সদলবলে। ‍যিনি সারথি এর তিনিই হলেন বিশ্বজিৎ সাহা। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম মুক্তধারা। নিউ ইয়র্কের বুকে প্রবাসীদের যুথবদ্ধ করে বাঙালি সংস্কৃতি আত্মপরিচয় রক্ষায় পথিকৃতের কাজ করে চলেছেন।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করে বিশ্বময় সাড়া ফেলে দিয়েছেন তাঁরা। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের একটি অন্যতম প্রধান বার্ষিক আয়োজন সেটি। আর তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে অপরাপর দেশেও। যেখানে রয়েছে এমন ক্ষ্যাপা বাঙালি। যাদের জন্য এই আনুষ্ঠানিকতা শিক্ষণীয়ও বটে।

মুক্তধারার লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল- প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতি এবং ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এর তাৎপর্য পৌঁছে দেওয়া। যেহেতু নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর অবস্থিততাই সেখানে এমন ব্যতিক্রম আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা ভাষা সংস্কৃতির অবস্থানকে সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেন তাঁরা। আয়োজনে সঙ্গী ছিল একঝাঁক দেশপ্রেমী। সেই থেকে একুশের প্রথম প্রহরে (১২:০১ মিনিটে) প্রভাত ফেরির আয়োজনও চলে কিছুটা ভিন্ন আমেজে নিউ ইয়র্কের মাটিতে।

প্রথমে জাতিসংঘের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে মুক্তধারা। সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে অন্য এক বাংলাদেশকে তুলে ধরার প্রয়াস ছিল ঐ অনুষ্ঠানের অন্যতম লক্ষ্য। সেই থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি, গান এবং ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নাটক এবং পরিবেশনার আয়োজন চলমান নিউ ইয়র্কের মাটিতে। নিসন্দেহে বলা যায়, মুক্তধারার এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে নিউ ইয়র্কের বুকে একটি দৃশ্যমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত করতে সাহায্য করেছে। নিউ ইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। যদিও নিউ ইয়র্ক শহরের কুইন্সে অবস্থিত আলিসিয়া পার্কের শহীদ মিনারটি মুক্তধারা এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। এই শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একাধিক সংগঠন যুক্ত ছিলমুক্তধারা এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রবাসে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে মুক্তধারা যে উদ্যোগ নেয় তা আজও প্রবহমান অন্য রাষ্ট্রে। কারণ তারা মুক্তধারাকে দেখে শিখেছে। একটি স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করা ছিল দীর্ঘ জটিল প্রক্রিয়াযেখানে সিটি কাউন্সিলের অনুমতি, অর্থ সংগ্রহ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমর্থন আদায়ের বিষয় ছিল। মুক্তধারা এই প্রক্রিয়াগুলিতে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং নান্দনিকভাবে সফল হয়েছে।

যদিও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সরকারি স্বীকৃতি (২১শে ফেব্রুয়ারি) কানাডায় বসবাসকারী দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম আবদুস সালামের প্রাথমিক উদ্যোগের ফলআর মুক্তধারা ফাউন্ডেশন নিউ ইয়র্কে এই দিবসের গুরুত্ব প্রচারে এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে এর আন্তর্জাতিকীকরণের কাজে জনমত তৈরিতে সহায়তা করেছিল।

তাই বলা যায়, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন নিউ ইয়র্কে কেবল বইমেলার আয়োজন করেনি- তারা একুশের চেতনা এবং শহীদ মিনারকে প্রবাসে বাঙালির আত্মপরিচয় প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে টিকিয়ে রাখতে শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে। এখনো দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিটি কর্মী। কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বুকে বাঙালিরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মতো। বাংলাদেশের বাণিজ্য আরও কিভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে-তারই আপ্রাণ চেষ্টা মুক্তধারার প্রত্যেকের চলনে বলনে। জয়তু মুক্তধারা ফাউন্ডেশন।