সোমবার,

১৩ অক্টোবর ২০২৫

|

আশ্বিন ২৮ ১৪৩২

XFilesBd

সাক্ষাতকারে বিএনপি নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান

ফুলে ঢাকা রাজপথ সে তো রাজনীতির জন্যে নয়। নীতি- আদর্শই আমার একমাত্র পাথেয়-

ইউ এস অনন্যা

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১২:৫০, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

ফুলে ঢাকা রাজপথ সে তো রাজনীতির জন্যে নয়। নীতি- আদর্শই আমার একমাত্র পাথেয়-

ফুলে ঢাকা রাজপথ সে তো রাজনীতির জন্যে নয়। নীতি- আদর্শই আমার একমাত্র পাথেয়-

সাক্ষাতকারে বিএনপি নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান

রাজনীতি শর্টকার্টের খেলা নয়। রাজনীতি মানে প্রতিদিনের সংগ্রাম, প্রতিদিনের ত্যাগ।
এই বিশ্বাস বুকে নিয়ে দীর্ঘ তিন দশক ধরে রাজনীতির কঠিন বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করে চলেছেন এক মহান নেতৃত্বআকন কুদ্দুসুর রহমান


তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই নেতা আজ বরিশাল- (গৌরনদীআগৈলঝাড়া) আসনে বিএনপির এক নির্ভরতার নাম। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি রাজনীতি ছেড়ে যাননি; বরং দল কর্মীদের পাশে থেকে, হামলা-মামলা-নির্যাতনের মাঝেও বয়ে নিয়ে গেছেন গণমানুষের স্বপ্ন। একজন স্বপ্নবাজ তরুণ থেকে আজকের জননেতা হয়ে ওঠার সেই দীর্ঘ যাত্রা, আগামী নির্বাচন নিয়ে তাঁর ভাবনা নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা নিয়ে এক্সফাইলস-এর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।

 

রাজনীতিতে আপনার পথচলার শুরু কেমন করে?

আকন কুদ্দুসুর রহমান:
আমার রাজনীতির সূচনা আশির দশকে ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে। তখন আমি ঢাকা কলেজের ছাত্র। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমার আদর্শ পুরুষ। তাঁর নীতি দেশপ্রেম আমাকে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশে অনুপ্রাণিত করে।

১৯৮৫ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি, পরে ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হই।
সেই সময় ছিল এরশাদবিরোধী তুমুল আন্দোলনের দিন। লাঠি-গুলির মুখে, ছাত্রদের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছি, খোকন ভাইয়ের (খাইরুল কবির খোকন) সঙ্গে কারাভোগও করেছি। ১৯৯৪ সালে বরিশাল জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই, পরবর্তীতে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক বরিশাল (উত্তর) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। রাজনীতি আমার কাছে কোনো পেশা নয়এটা আমার বিশ্বাস, আমার নৈতিক দায়। আমি রাজনীতিকে দেখি মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার এক অবিরাম প্রয়াস হিসেবে।

পরিবারেও কি রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ছিল?

আকন কুদ্দুসুর রহমান:
হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার বড় ভাই সিদ্দিকুর রহমান একটানা ১৫ বছর খানজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি ছিলেন বিএনপির সহ-সভাপতি এবং একনিষ্ঠ দলীয় কর্মী। আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসায় তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন। মৃত্যুকালেও তার নামে চলছিল ছয়টি মিথ্যা মামলা।
আমার মামা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আমজউদ্দিন ছিলেন গৌরনদী সরকারি কলেজের জিএস।
রাজনীতির এই মাটি, এই উত্তরাধিকারই আমার রক্তে রাজনীতির দায়বদ্ধতা জাগিয়ে রেখেছে। সক্রিয় রাজনীতির পাশাপাশি আমি শিক্ষকতা করেছিআগৈলঝাড়া ডিগ্রি কলেজ মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে। এই শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আমার রাজনৈতিক দর্শনকে গভীর করেছে।

শোনা যাচ্ছে, আপনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল- থেকে প্রার্থী হচ্ছেন?

আকন কুদ্দুসুর রহমান:
রাজনীতি করি মানুষের জন্য, তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ আমার কাছে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের সুযোগ।
দলের উচ্চপর্যায় থেকে আলোচনাও হয়েছে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও প্রস্তুতি চলছে।
তবে একটা বিষয় আমি স্পষ্ট করে বলতে চাইদলের স্বার্থই আমার সর্বাগ্রে।
যে সিদ্ধান্ত দল নেবে, আমি সেটাকেই সসম্মানে গ্রহণ করব। দলের ক্ষতি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ কখনোই আমার কাছ থেকে আশা করা যায় না।

বর্তমান সময়ের রাজনীতি আপনি কিভাবে দেখছেন?

আকন কুদ্দুসুর রহমান:
রাজনীতি মানে সহাবস্থান, মতের বহুত্ব, মানুষের অংশগ্রহণ। কিন্তু গত দেড় দশকে বাংলাদেশে সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল।
গণতন্ত্রের মানসকন্যাদাবিকারী শেখ হাসিনা বাস্তবে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিলেন।
ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রকে পরিণত করেছিলেন ভয় দমননীতির কারাগারে।

কিন্তু বিএনপি, তারেক রহমানের নেতৃত্বে, অবিচল থেকেছে আন্দোলনে।
২০২৪ সালের আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে সেই দীর্ঘ আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
তারেক রহমান এখন কেবল বিএনপির নেতা ননতিনি এক প্রেরণা, এক গণজাগরণের প্রতীক।
আমরা এখন এমন এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, যেখানে ন্যায়, জবাবদিহিতা স্বাধীন চিন্তার সমান অধিকার নিশ্চিত হবে।

নির্বাচন নিয়ে দেশে যে সংশয় আছে, আপনি কি আশাবাদী?

আকন কুদ্দুসুর রহমান:
নির্বাচন অবশ্যই হবে, এবং তা সুষ্ঠু নিরপেক্ষভাবেই হতে হবেএটাই জনগণের দাবি।
স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটেছে, এখন গণতন্ত্র পুনর্গঠনের সময়।
তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা আমাদের রাজনীতির নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
এটি শুধু রাজনৈতিক সংস্কারের নয়, একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণের প্রতিশ্রুতিযেখানে মানুষ মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

নির্বাচিত হলে আপনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কী করবেন?

আকন কুদ্দুসুর রহমান:
আমার লক্ষ্য পরিষ্কারজনসেবাই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে।
আমি চাই রাজনীতি হোক আদর্শ, সততা দায়িত্ববোধের প্রতীক।

আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ

  • দুর্নীতি, মাদক, দখলবাজি চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় রাখব।
  • তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব চিন্তার রাজনীতিতে যুক্ত করব।
  • শিক্ষা, কর্মসংস্থান স্বাস্থ্যসেবায় জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ করব।
  • রাজনীতিতে শালীনতা ফিরিয়ে আনব, অপপ্রচার ব্যক্তিগত আক্রমণের সংস্কৃতি বন্ধ করব।

আমরা চাই এমন এক বাংলাদেশ গড়তে, যেখানে প্রতিটি মানুষ আত্মমর্যাদার সঙ্গে বাঁচবে, যেখানে শহীদ জিয়ার আদর্শ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাহস, আর তারেক রহমানের স্বপ্ন এক হয়ে গড়ে তুলবে নতুন বাংলাদেশস্বপ্নের বাংলাদেশ।

শেষ কথা

আকন কুদ্দুসুর রহমান:
রাজনীতি আমার কাছে কোনো সিঁড়ি নয়, এটি এক আজীবন দায়।
শহীদ জিয়া আমাদের শিখিয়েছেন, “নীতি আদর্শে অটল থাকাই রাজনীতির আসল শক্তি।
আমি সেই বিশ্বাসই বয়ে নিয়ে চলেছিপ্রতিদিন, প্রতিটি সংগ্রামে।
যতদিন বেঁচে থাকব, মানুষের পাশে থাকবএটাই আমার প্রতিশ্রুতি।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ সম্পাদনা:
ইউ এস অনন্যা
সম্পাদক, এক্সফাইলস