সোমবার,

২২ ডিসেম্বর ২০২৫

|

পৌষ ৭ ১৪৩২

XFilesBd

নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন দোসরের লোকজন। ট্রেজারারের দাপটে চরম কোণঠাসা শেকৃবির জাতীয়তাবাদীরা

শেকৃবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৪:০৪, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন দোসরের লোকজন। ট্রেজারারের দাপটে চরম কোণঠাসা শেকৃবির জাতীয়তাবাদীরা

এখনও বহাল তবিয়তে শেরেবাংলার ট্রেজারার। শক্ত করেছেন তাঁর চেয়ার। আর গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে দিব্যি ছড়ি ঘোরাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষক কর্মকর্তাদের ওপর। তৈরী করেছেন বিশাল এক গ্রুপ যাদের কাজই হলো আওয়ামীপন্থীদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয়তাবাদী চেতনার লোকজনদের বাছাই করা। পরবর্তীতে ইচ্ছেমতো ব্যবহার ও চাকরি থেকে অব্যাহতির হুমকিও দিচ্ছে দোসরের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করা আবুল বাশারের লোকজন। সূত্র বলছে, বিএনপির উপর ভর করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ট্রেজারার অধ্যাপক মুহাম্মদ আবুল বাশার। প্রভাবশালী আওয়ামী পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এনজিও থেকে আসা একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার জোরালো সুপারিশে শেকৃবির ট্রেজারার পদে আসীন হন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার দৌরাত্ম। অনুগত আওয়ামীপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা বদলির কথা উঠলেই তিনি তার অপশক্তি প্রয়োগ করে বাধা দেন। নিজ দপ্তর, শরীরচর্চা শিক্ষা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি দপ্তরে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ট্রেজারারের আশ্রয়ে বহাল তবিয়তে থেকে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদের প্রভাবশালী নেত্রী (আপন ছোট বোন ) হাসিনা বেগমকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পোস্টিং দিয়েছেন। ব্যপারে ট্রেজারার আবুল বাশারকে একাধিকবার ফোন করে রেসপন্স মেলেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব অভিযোগ তাদের অজানা। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি করে এর সত্যতা যাচাই করবেন বলে জনসংযোগ অফিসের মাধ্যমে জানানো হয়।

অনুসন্ধান বলছে, ট্রেজারারের পরিবারের সবাই কট্টর আওয়ামী লীগ। দোসর হিসেবে আওয়ামী আমলে ব্যাপক সুবিধাভোগী। সম্প্রতি শেকৃবিতে তাঁর সুপারিশে ১২ থেকে ১৫ জন লোক বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের সবাই আবুল বাশারের নিজ এলাকার লোকজন এবং কয়েকজন চিহ্নিত আওয়ামী ক্যাডার, যাদের ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে সরাসরি রাজপথে থাকার প্রমাণ রয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এদের নিয়োগ বাগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি এখন ক্যাম্পাসেওপেন সিক্রেট

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, ট্রেজারার আবুল বাশারের আপন ছোট বোন মিসেস হাসিনা বেগম ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি, ধামরাই আসনের সাংসদ এবং শেকৃবির সিন্ডিকেট সদস্য বেনজির আহমেদের সুপারিশে ২০১২ সালের এপ্রিল ৫৬ তম সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনক্রমে শেকৃবিতে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৮ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়েরবঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদএর মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। সময় তিনি নিজেকে শেখ মুজিবের আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী বলে দাবি করেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর হাসিনা বেগম তাঁর বড় ভাই ট্রেজারার মুহাম্মদ আবুল বাশারের হাত ধরে কৃষি অর্থনীতি বিভাগ থেকে পরিষদ শাখায় ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে প্রাইজ পোস্টিং বাগিয়ে নেন। এছাড়া তাঁর আপন ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের পুরস্কারস্বরূপ তিনি ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট পদ লাভ করেন। এ তথ্য সবারই জানা যে, হল প্রভোস্ট তাঁরাই হন যারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি বিশেষভাবে অনুগত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেকৃবির এক শিক্ষক বলেন, ট্রেজারার আবুল বাশার তাঁর পরিবারের সদস্যদের আওয়ামীপন্থা অনুসরণের বিষয়টি গর্বের সঙ্গে জাহির করেন। এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী ভিসিও তাঁর ছোট ভাইকে ছাড়া নাকি চলতে পারেন না। নিজেদের প্রভাবের জানান দিতেই তিনি এ প্রসঙ্গ প্রায়ই তোলেন বলে জানান ওই শিক্ষক।

শেকৃবির একাধিক কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, ট্রেজারার মুহাম্মদ আবুল বাশারের স্ত্রীর বড় ভাই সরিফুল ইসলাম বাবু রাজশাহী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং রাসিক'র সর্বশেষ প্যানেল মেয়র ছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলার আসামি হয়ে তিনি আশ্রয় নেন ট্রেজারার আবুল বাশারের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়স্থ চামেলী ভবনের ৮০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে। প্রায় দু’মাস সেখানে আত্মগোপনে থাকার পর লোকজনের মাঝে জানাজানি হলে তিনি অন্যত্র চলে যান। সম্প্রতি ট্রেজারার মুহাম্মদ আবুল বাশার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী কৃষিবিদদের সংগঠন ‘এগ্রিকালচারিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (এ্যাব)-এর যুগ্ম আহ্বায়ক পদ বাগিয়ে নেন। এরপর প্রকাশিতব্য কমিটিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। সূত্র জানায়, কমিটিতে নিজেকে শক্তিশালী করতে দুর্দিনের ত্যাগী বিএনপিপন্থী কৃষিবিদদের কোণঠাসা করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপোষকামীদের নিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করছেন আবুল বাশার। এ অবস্থায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চান জাতীয়তাবাদী চেতনার শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।