
শেয়ারবাজার আবারও গরম। চিলের মতো ছোঁ মারতে বসেছে ফাটকাবাজ সিন্ডিকেট। কিছুদিন ধরেই চলছে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা। এই প্রবণতা ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে। আওয়ামী লীগ আমলের জিম্মিবাজ আর লুটপাটের পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা অন্তত স্বস্তি ফিরেছিল। শেয়ারের উন্মুক্ত আকাশ আবারও ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। থাবা দেয়ার পাঁয়তারা করছে সিন্ডিকেট শকুনেরা। প্রধান উপদেষ্টা ড.মোহাম্মদ ইউনুসের নির্দেশে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদের তত্বাবধানে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের গৃহিত পদক্ষেপের সুফল পেতে শুরু করেছিল পুঁজি বাজার। যা বিনিয়োগকারীদের নতুন করে শেয়ার কেনার প্রবণতা বাড়াতে সহায়ক হয়েছিল।
দেশের প্রধান দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সিএসসিএক্স প্রতিদিনের স্বাভাবিক উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। আবারও বিনিয়োগ বান্ধব পুজিবাজার গড়ে ওঠার আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। পুজিবাজারের বর্তমানের স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে বিগত আওয়ামী সরকারের আমালের শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ছিলেন ১৯৯৬ ও ২০১১ সালের শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির প্রধান হোতা। তিনি শেয়ারবাজারের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি সিন্ডিকেট। পুঁজিবাজার থেকে এই সিন্ডিকেট আত্মসাৎ করে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর্থিক খাতের ‘দরবেশ’ খ্যাত সালমান আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণে নিতে তিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনকে ব্যবহার করেছেন। শেয়ার বাজার লুটপাট সংক্রান্ত শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে তার ঘণিষ্ঠ চার সহযোগীর নাম। তারা হলেন- মারজানা রহমান, মমতাজুর রহমান ও আবদুর রউফ। পাঁচটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল, জুপিটার বিজনেস লিমিটেড, অ্যাপোলো ট্রেডিং, এআরটি ইন্টারন্যাশনাল ও ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে ব্যবহার করে এই সিন্ডিকেট শেয়ারবাজার থেকে হাজার-হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘আর্থিক খাতের মাফিয়া’ সালমান এফ রহমান রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লুটপাটের উদ্দেশ্যে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে বসান নিজের বিশ্বস্ত লোকদের। বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প খাতের এই উপদেষ্টা বর্তমানে একাধিক হত্যা মাামলায় কারাগারে থাকলেও তার নিয়োগকৃত বেশিরভাগ লোকই এখনও স্বপদে বহাল রয়েছে। পাশাপাশি নিজ নিজ অবস্থানে থেকে তৎপর রয়েছেন তার লোকরা। এদের মধ্যে রয়েছেন- বেক্সিমকোর কামরুজ্জামান ( মারকেট গ্যাম্বলার), আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাজেদা চৌধুরীর ভাতিজা ব্রোকার হাউজ মালিক শাকিল রিজভী, সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ডা দিপু মনির খালাতো ভাই, বি এল আই সিকুউরিটিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ট্রেড ক্যাপ সিকুউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম , স্কাই লাইন সিকুউরিটিজের মালিক সাইদুর রহমানসহ আরও কয়েকজন। তাদের সহযোগিতা করছেন ঢাক স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক আহমেদ রশিদ লালীসহ আওয়ামী লীগ আমলে সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে নিজেদের মধ্যে একের পর এক লেনদেন করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়ানো এবং পানির দরে কিছু শেয়ার বিক্রি করে শেয়ার বাজারকে অস্থির করে তুলতে তারা পাঁয়তারা করছেন এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অবিলম্বে এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আবারও অতল অন্ধকারে হারাবে আগামীর পুঁজিবাজার।