সোমবার,

২৭ অক্টোবর ২০২৫

|

কার্তিক ১১ ১৪৩২

XFilesBd

চীন এখন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নতুন ভরসা। কম দামে পণ্য, প্রযুক্তি ও বাজারের সুযোগে বাড়ছে বাণিজ্য নির্ভরতা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:২০, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ০২:২৩, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

চীন এখন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নতুন ভরসা। কম দামে পণ্য, প্রযুক্তি ও বাজারের সুযোগে বাড়ছে বাণিজ্য নির্ভরতা

বাংলাদেশের ব্যবসায় জগতে চীনের প্রভাব এখন চোখে পড়ার মতো। পোশাক থেকে ইলেকট্রনিকস, নির্মাণসামগ্রী থেকে কাঁচামাল—প্রায় সব খাতেই চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ক্রমেই গভীর হচ্ছে। অনেক উদ্যোক্তা বলছেন, চীন এখন তাদের “এক নম্বর বাণিজ্যিক গন্তব্য”—কারণ সেখানে একই সঙ্গে আছে কম দাম, বৈচিত্র্যময় পণ্য, এবং দ্রুত সরবরাহের নিশ্চয়তা।

ব্যবসায়ীরা চীনকে পছন্দ করছেন মূলত কয়েকটি বাস্তব কারণে। প্রথমত, চীনের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম, ফলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সেখান থেকে পণ্য বা যন্ত্রপাতি আনতে পারেন সাশ্রয়ী দামে। টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত বোতাম, জিপার, কাপড় বা অন্যান্য উপকরণের বিশাল অংশই এখন আসে চীন থেকে। একই পণ্য ইউরোপ বা কোরিয়া থেকে আনলে খরচ বাড়ে দ্বিগুণেরও বেশি। দ্বিতীয়ত, চীনের সরবরাহ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত ও দ্রুত। এখন অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পণ্য ঢাকায় পৌঁছে যায়। বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী আলিবাবা বা মেইড-ইন-চায়না ডটকমের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন সরবরাহকারীদের সঙ্গে। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীর ঝামেলা কমে গেছে। তৃতীয়ত, চীনের প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি এখন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ভরসা। টেক্সটাইল মেশিন, প্যাকেজিং ইউনিট, এমনকি কৃষি ও হালকা প্রকৌশল যন্ত্রপাতিও চীন থেকে আসছে। ইউরোপীয় যন্ত্রের তুলনায় দাম কম, আর মেরামত ও যন্ত্রাংশ সহজলভ্য। বাংলাদেশ সরকারও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে চীন বাংলাদেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ রপ্তানি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। ফলে রপ্তানিমুখী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন বাজার তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে আমদানিকারকরা কাঁচামাল কম দামে আনতে পারছেন, যা শিল্প উৎপাদনে বড় সহায়ক।

চীনের বাজারও এখন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে নতুন সম্ভাবনা। বাংলাদেশের গার্মেন্টস, চামড়া ও কৃষিপণ্য ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে চীনা ভোক্তা বাজারে। গুয়াংজু, ইঊ, ও শেনঝেনের বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যেখানে নতুন ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠছে। চীনে ব্যবসা করাও তুলনামূলক সহজ। ব্যবসায়ী ভিসা পাওয়া যায় দ্রুত, এবং গুয়াংজু, শেনঝেন বা সাংহাইয়ের মতো শহরে বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য সব রকম সুবিধা রয়েছে—অনুবাদক, পরিবহন, ব্যাংকিং, এমনকি সরাসরি কারখানা পরিদর্শনের ব্যবস্থা।

 শিল্পখাতে চীনা বিনিয়োগও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি এনেছে। চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরের প্রকল্প, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিদ্যুৎ ও টেলিকম খাতে চীনের বিনিয়োগের প্রভাব এখন দৃশ্যমান। এতে দুই দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে যৌথ উদ্যোগ বা জয়েন্ট ভেঞ্চারের সুযোগও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের প্রতি বাংলাদেশের ব্যবসায়িক নির্ভরতা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি এটিকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখাও জরুরি। কারণ চীনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ভবিষ্যতে সরবরাহ সংকট বা নীতিগত পরিবর্তনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

তবু বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে চীন এখন এক অনিবার্য অংশীদার। কম দামে পণ্য, সহজ সরবরাহ ব্যবস্থা, প্রযুক্তি সহায়তা ও বড় বাজার—সব মিলিয়ে চীন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।