
বাংলাদেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষিত ৪ জনের মধ্যে ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৭৫ শতাংশ—যা বিগত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কেন বাড়ছে সংক্রমণ জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রনের নতুন উপধরন (যেমন: LF-7, JN.1, NB.1.8.1) বাংলাদেশের জন্যও হুমকি হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সীমান্ত, বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনগুলোতে বাড়ানো হয়েছে স্ক্রিনিং কার্যক্রম। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “উপসর্গযুক্ত অনেক রোগী পরীক্ষা করাচ্ছেন না, ফলে সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট নয়। তাতে গোপন সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।”
করোনার প্রাথমিক ঢেউগুলোতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও, বর্তমানে ‘কোভিড ফ্যাটিগ’–এর কারণে জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনে অনীহা দেখা যাচ্ছে। মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা বা হাত ধোয়ার অভ্যাস অনেকটাই হারিয়ে গেছে। এ নিয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডা. কে এম মামুন মোরশেদ বলেন বলেন, সংক্রমণের ঢেউ এখনো বড় আকারে শুরু হয়নি। কিন্তু উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা না করানো এবং অসচেতনতা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকা এবং বিমানবন্দরে বাড়ানো হয়েছে স্ক্রিনিং ও নজরদারি। উচ্চঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী—বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের—জনসমাগম এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে লকডাউনের চিন্তা না থাকলেও, পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রস্তুত রয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। ডা. কে এম মামুন মোরশেদ আরও বলেন, আতঙ্কিত না হয়ে জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করান এবং প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন। অসুস্থ বা বয়স্কদের ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. কে এম মামুন মোরশেদ।
করোনার আগের ঢেউগুলো আমাদের শিখিয়েছে—সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধিই ভাইরাস প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তাই আতঙ্ক নয়, দায়িত্ববান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রফেসর মামুন মোরশেদ।