বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১১ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ মুজিবুর রহমান

যে রাতে পিতা হারিয়েছিল বাঙালি

ড. অখিল পোদ্দার

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১৫ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ০০:১২, ১৬ আগস্ট ২০২২

যে রাতে পিতা হারিয়েছিল বাঙালি

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট; ভোরের আজানে তখন কল্যাণের দিকে ছুটে আসার আহ্বান। ঘাতকের বুলেটে তখনই ঝাঁঝরা হলো বাংলাদেশ। বিশাল বুক যাঁর সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির হৃদয়। ঘাতকের বুলেট তাঁকেই কি-না হত্যা করলো সপরিবারে। হত্যা হলো বাঙালির সংবিধান, মুহর্মুহু গুলিতে ছিন্নভিন্ন হলো মানচিত্র। বাংলাদেশের সমান সে হৃদয়ের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই বাংলাদেশ; ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বাঙালি হৃদয়ে তাই রক্তক্ষরণের দিন।

সেই রাতে একে একে পরিবারের অন্যরাও বুলেটবিদ্ধ হন। এমনকি যাঁরা বাধা দিতে এসেছিল তাঁরাও। ওরা হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সুলতানা কামালকে। মেহেদীর রঙ তখনো রোজী জামালের হাতে। স্বামী শেখ জামালের সঙ্গে তাঁকেও হত্যা করে পাষণ্ডরা। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের লাশের পাশে ওরা শিশু রাসেলকে হত্যা করে উল্লাস করেছিল।
-আমি মায়ের কাছে যাব। আমাকে মা’র কাছে যেতে দাও।’
রাসেলের এই আকুতিতে সেই রাতে মন গলেনি ঘাতকদের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির জনক। বিদেশিদের কাছে যিনি ‘মিস্টার রহমান-ফাদার অব বেঙ্গল।’ঝাঁঝরা বুলেটের আঘাতে নি:শেষ হয় বাঙালির অভিভাবক শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির পিতা মুহূর্তেই নক্ষত্র হয়ে যান পৃথিবীর নি:সীম আকাশে।
অথচ পাষ-রা জানে না, শারীরিক মৃত্যুতেই সব শেষ হয়ে যায় না! রক্তবীজে জন্ম নেয়া কোটি কণ্ঠস্বর কথা বলে ক্রমশ:। রুধির ধারায় গজিয়ে ওঠে অসংখ্যা মুজিব। যার পরম সাক্ষী ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি।
গল্পটা পেছনে ফিরে দেখার। গল্পটা ৩২ নম্বর বাড়ির।

ছায়াঘেরা ছোট্ট সে বাড়িটি রাষ্ট্রপতির হলেও, এটি ছিলো বাংলার মানুষের ঠিকানা। আভিজাত্য ছিল না কোনোকিছুতেই। পরতে পরতে সাধারণের ভালোবাসার গল্প সেখানে প্রস্ফুটিত। অথচ দেশ স্বাধীনের আগে বহুবার কঠিন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন বাঙালির নেতা শেখ মুজিব। কারাগারের অন্ধকূপ থেকে ফাঁসির মঞ্চ- সবই মোকাবেলা করেছেন বুকভরা সাহসে। ৪ হাজার ৬৮২ দিন জেলে ছিলেন বাঙালি জাতির জনক আন্দোলন সংগ্রামের মহান নায়ক শেখ মুজিব। শোষণহীন সমাজের জন্য আজীবন যাঁর ত্যাগ, বাঙালির স্বাধীনতা এনে দিতে জীবনভর যাঁর যুদ্ধ-স্বাধীন দেশে কি-না পিতাকেই হত্যা করলো ঘাতকেরা। স্বাধীনতা এনে দিয়ে শেখ মুজিব না হয় বেঈমানদের আক্রোশে পরেছিলেন, কিন্তু এ বাড়ির অন্যরা তো সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। আট দশটি বাঙালি পরিবারের মতোই। যাঁদের ছিল সরল সহজ চলাফেরা। তাঁরা কী দোষ করেছিল?

শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্নচারী বাঙালিকে দেখিয়েছিলেন মুক্তির পথ। জেলের ভেতরে কবর খুঁড়ে হত্যা করতে চেয়েছিল পাকিস্তানীরা। কোনো ভয়ই টলাতে পারেনি মহানায়ক মুজিবকে। বরং শেখ মুজিবের আপষহীন নেতৃত্ব, অনবদ্য সংগ্রাম আর মানুষের প্রতি অবারিত ভালোবাসা বিশ্বব্যাপী রাজনীতির বিশেষ অনুকরণীয়। অথচ তাঁকেই কি-না হত্যা করে এদেশের ঘাতকেরা। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমানকে বহুবার হত্যা করতে চেয়েছিল পাকি জান্তার দল। পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে অন্তরীণ রেখে জানালা দিয়ে বহুবার তাঁকে দেখানো হয়েছে খোঁড়া কবর। এমনকি বলাও হয়েছে, হত্যার পর এই কবরে তাঁকে পুঁতে ফেলা হবে। কিংবা দেয়া হবে জীবন্ত কবর।

এমন পরিস্তিতিতেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনড় এবং প্রতিবাদী। ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ওরা ভেবেছিল আর কোনোদিনই উঠবে না ভোরের সূর্য। দু:শাসনের কপাট ভেঙ্গে বাঙালির জেগে উঠতে সময় লাগলো বটে। তারপরও পথ হারানো বাঙালি সুপথ খুঁজে পেয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাতে। যিনি আলো হাতে চলেছেন আঁধারপথের যাত্রী বেশে।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মদান বাঙালির ঘর ও মনের জানালা খুলে দিয়েছে। রক্তের দাগ না মোছা ৩২ নম্বর বাড়িটি তাই হৃদয়গহীনের অনন্ত জাদুঘর। জয় বাংলা।

লেখক- ড. অখিল পোদ্দার, প্রধান বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশন।