শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নকশি কাঁথা 

তানভীর সুমন

প্রকাশিত: ০০:২৫, ১৫ অক্টোবর ২০২৩

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নকশি কাঁথা 

নকশি কাঁথা মূলত ‘জীর্ণ প্রশস্ত বস্ত্র, যা শোয়ার সময়ে গায়ে দেয়া হয় শীতবস্ত্র হিসেবে। বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে কাঁথাকে খাতা, খেতা বা কেথা, কেতা নামে অভিহিত হয়। একটি কাঁথা অনেক স্মৃতির আধার। এর সাথে জড়িয়ে আছে যে সেলাই করেছে, তার অনেক আবেগ অনুভূতি ইত্যাদির সমন্বয়ে একটি নকশি কাঁথা তৈরি হয়।

উনিশ শতকে  গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই  মহিলারা  গৃহস্থালী কাজকর্ম শেষে বেঁচে যাওয়া সময় এবং বর্ষার অলস দিনগুলোতে  কাঁথা সেলাই করতেন। কোন কোন সময় একটি কাঁথা সেলাই করতে কয়েক মাস এমনকি পুরো বছরও লেগে যেত।

এমনই একজন কুষ্টিয়া কুমারখালীর গোট্টিয়ার রুমানা খাতুন। খুব অল্প বয়সে মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলেন নকশি কাঁথা সেলাই করা। এমনকি মাধ্যমিকের আগেই শিখে ফেলেন সেলাইয়ের সমস্ত কৌশল। এখন তিনি তিন সন্তানের মা। দুই মেয়ে আর একটি ছেলে নিয়ে সুখের সংসার তার। সময় পেলেই এখনো নিয়মিতই কাঁথা সেলাই করেন তিনি। তবে তিনি বলেন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নয়, নিজের ছেলে মেয়ে ও আত্মীয় পরিজনদের ব্যবহারের জন্যই তৈরি করে তিনি। শুধু রুমানা খাতুন নয়, কুষ্টিয়া কুমারখালীর কয়া, শিলাইদহ, নন্দলালপুর, সদকীসহ প্রায় প্রতিটি গ্রামেই  মহিলারা সেলাই করছে নকশি কাঁথা। চাহিদা বেশি থাকায় কুষ্টিয়াতে ব্যক্তি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি  প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে।

 নকশি কাঁথা মূলত বাংলা সংস্কৃতির একটা বড় অংশ। সাধারণত পুরাতন কাপড়ের পাড় থেকে সুতা তুলে অথবা তাঁতীদের থেকে নীল, লাল, হলুদ প্রভৃতি সুতা কিনে এনে কাপড় সেলাই করা হয়। ঘরের মেঝেতে পা ফেলে পায়ের আঙ্গুলের সঙ্গে কাপড়ের পাড় আটকিয়ে সূতা খোলা হয়। এই সূতা পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য রেখে দেয়া হয়। সাধারণ কাঁথা সেলাইয়ের পর এর উপর মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুঁটিয়ে তোলা হয় বিভিন্ন নঁকশা যার মধ্যে থাকে ফুল, লতা, পাতা ইত্যাদি।

নকশি কাঁথা বাংলার অন্যতম লোকশিল্প। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে । অনুপম শিল্পমাধুর্যের বাস্তব রূপ নকশিকাঁথা। এ দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ব্যবহৃত উৎপাদিত শিল্পপণ্যের মাঝে নকশিকাঁথা অন্যতম। আমাদের দেশে এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কাঁথার ব্যবহার নেই। সুনিপুণ হাতে সুঁই আর সুতায় গ্রামবাংলার বধূ-কন্যাদের মনের মাধুরী মেশানো রঙ দিয়ে নান্দনিক রূপ-রস ও বর্ণ-বৈচিত্র্যে ভরা । নকশিকাঁথায় আমরা প্রতিনিয়ত খুঁজে পাই আমাদের শিল্প, সংস্কৃতি, সমাজ-সভ্যতা, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, গৌরবগাথা ও সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। নকশিকাঁথায় মূলত এ দেশের গ্রামীণ নারীদের লুকায়িত ভাবনা, আবেগ আর কল্পনার আরেক রূপ যেন সূচিকর্মের মাঝ দিয়ে মূর্ত প্রকাশ ঘটে।

যদিও হারাতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নকশী কাঁথার ব্যবহার। কারণ একটি নকশী কাঁথা তৈরি করতে অনেক সময় লাগে, সেই তুলনায় উচ্চ মূল্যে বিক্রয় হয় না। যদিও  স্থান ভেদে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রতিটা নকশি কাঁথা বিক্রি হয়। তারপরেও সেটা এই শিল্প টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। যদি সরকারি সহযোগিতা ও দেশের বাইরে এর বাজার সৃষ্টি করা যায় , তবে এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। না হলে আধুনিকতার ঢেউয়ে হারিয়ে যাবে শত বছরের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই  নকশি কাঁথা।