বিএনপির ডেরায় আশ্রয় আওয়ামী লীগের কর্মীর॥ বাউফল ভূমি কর্মকর্তা তরিকুলের টিপস বাণিজ্য
অধিকাংশ ভূমি অফিসে প্রকাশ্যে চলছে ঘুষ বাণিজ্য। তার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন যেনো পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা। শতেক চেষ্টায়ও বন্ধ হচ্ছে না এই দুর্ভোগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, বেসরকারী টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় একের পর ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ও সংবাদ প্রচার হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বরং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে মামলায় জড়িয়ে হয়রানির করার হুমকী দিচ্ছেন।
সম্প্রতি কালাইয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে উপসহকারী ভূমি অফিসার তরিকুল ইসলামের ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কর্মী পরিচয়ে চাঁদাবাজী অব্যাহত রেখেছেন।
এর আগেও উপজেলার ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ঘুষ গ্রহণের একাধিক ভিডিও ভাইরাল হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ভুক্তভোগী মহসিন পঞ্চায়েতের অভিযোগ, ঘুষ ছাড়া কাজ করেন না তরিকুল ইসলাম।

ঘুষ না দিয়ে বাইরে থেকে খাজনা দিলে নানা জটিলতায় ফেলা হয় সুবিধাভোগীদের। প্রতি খতিয়ানে ১৫০০ টাকা ঘুষ আদায় করেন অভিযুক্ত। মহসিন পঞ্চায়েতের ৪টি খতিয়ানের জন্য দাবি করা ৬ হাজার টাকার ১৫০০ টাকা অগ্রীম গ্রহণ করেছেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা, যার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
তরিকুলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পূর্বেকার অফিস মির্জাগঞ্জের সুবিদখালীতেও তিনি টাকার বিনিময় একজনের নামে রেকর্ডিও জমি অন্যের নামে খারিজ করে দিতেও দ্বিধা করেন নি। এমনই একটি অভিযোগের বিষয় সুবিদখালী ভূমি অফিসে মির্জাগঞ্জের মদনমোহন মিস্ত্রিগংদের নামে এক একর ৬২ জমি খাজনা খারিজ করা ছিল। তরিকুল মোটা অংকের ঘুষের বিনিময় সেই জমি মদন মোহন মিস্ত্রির চাচাতো ভাই জগদিশ চকিদারের নামে রেকর্ড করে দেন কোন মিস কেস বা নোঠিস ছাড়াই। ভূমি অফিসে এমন কথা চালু আছে যে, তরিকুল টাকার বিনিময়ে করতে পারেন না এমন কোন কাজ নেই।
কথা হয় মির্জাগঞ্জ উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে, তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়ি বহরে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-নেতাকর্মীরা হামলা করেছিল। আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়ি বহরে হামলা করে হামলাকারীরা সুবিদখালীতে তরিকুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে গিয়ে দুপুরে ভূরিভোজ করেন।
ফ্যাসিস্ট চলে গেলেও ফ্যাসিস্টের দোসররা টিকে আছে বহাল তবিয়তে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনয়ন পেলে ফ্যাসিস্টের দোসর তরিকুলকে দেখা যায় আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ফুল দিয়ে বরণ করতে। এতেকরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
মির্জাগঞ্জের উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ফেসবুকে তরিকুলের কুকীর্তি নিয়ে অনেক মন্তব্য দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তরিকুল আওয়ামী আমলের ১৭ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সাথে তাল মিলিয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলায় একচেটিয়া ডিস ব্যবসা করে আসছেন। হঠাৎ বিএনপি হওয়া তরিকুলের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠনে ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি টানানো ছিল। বিগত ১৭ বছর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব মৃধা ও তার ভাই রাজিব মৃধার সাথে মিলেমিশে চাঁদাবাজির ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে তরিকুলের ডিস ব্যবসার অফিসে বসেই। এই অফিসটি তখন ছিল আওয়ামী লীগের টর্চার সেল। যারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করতো তাদের ধরে এনে এই অফিসে বেধে রাখা হতো, করা হতো শারীরিক নির্যাতনÑ এমনটিই বলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফ্যাসিস্টের দোসর তরিকুল চাঁদাবাজি টিকিয়ে রাখতে হাসিনা বন্দনায় মিছিল-মিটিং করে বেড়াতো। কোন এক আগস্ট মাসে এক জনসভায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের বাংলাদেশে কারো ঠাঁই নেই বলে দেয়া তরিকুলের বক্তৃতা এখন স্যোস্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই তরিকুল তার ফেইসবুকে এক স্ট্যাটাস এ লিখেছিলেন “জীবনে কোন দলকে যদি ঘৃণা করি সেটা হলো বিএনপি”। এমন স্ট্যাটাসটি তখর এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
আওয়ামীপ্রেমী সেই ডিশ তরিকুল ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বিএনপিপ্রেমী কর্মী হয়ে মির্জাগঞ্জের চাঁদাবাজির রাজত্ব বহাল রেখেছে। তার দোর্দন্ড প্রতাপে ত্যাগী নেতারা পিছনের সারিতে চলে গেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের কথায় কথায় অপমান করা তরিকুল চাঁদাবাজি-মারামারির মতো একাধিক মামলার আসামি।
ভূমি অফিসে চাকরির সুবাদে তিনি অবৈধ পথে হয়েছেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক। অবৈধ আয়ের অর্থে সুবিদখালীতে করেছেন আলীশান অট্টালিকা। সেই অট্টালিকা পাহারায় পুষছেন বিদেশী কুকুর, যাদের পিছনে তিনি প্রতি মাসে খরচ করেন মোটা অংকের টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুবিদখালীর একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, ডিশ তরিকুল ভূমি অফিসে চাকরি করার সুবাধে সুবিদখালীতে প্রায় কোটি টাকার সরকারি জমি দখল করে করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বর্তমানে তিনি বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করে বিএনপিরই নিরীহ কর্মীদের হয়রানী করছেন।
