
ড. অখিল পোদ্দারের কবিতা
কলিযুগে বর্ণসমুচ্চয়
উঠোনের পুবকোণে একরত্তি কদবেল গাছ
তারই নিচে পাশাপাশি দুটি উনুন
জন্মের পর থেকে -
জ্বলতে জ্বলতে আমার মা ঘর হয়ে গেছেন
কাকা জ্যাঠারা একযোগে বললেন -
গৃহলক্ষী বেশ !
এক জনম পর-
মা পৃথিবীতে এলেন আমারই বোন হয়ে
গোস্বামী দাদু বললেন-মানুষ এভাবেই রূপ পাল্টায়
শক্তিরূপে আত্মা ফিরে আসে পরিবর্তিত প্রতিবেশে ।
জন্মান্তরবাদ শব্দটি পাড়ার মানুষের ঠিক মনে আসে না,
গীতার শ্লোক যেখানে থমকে গিয়েছে তিষ্ঠ ক্ষণকাল
শ্রুতিমধুর বইখানা সেলাইয়ের পুরোটা গ্রহণ করতে পারেনি
মোটা বইয়েরা সবাই ভ্রমরের ওপর রুষ্ট বটে
মোহিনী মিলের ম্যানেজার অন্নদা বাবু বলেছেন, ধর্ম বই এমনই হয়-
শুরু থেকে শেষ বলে কিছু নেই
অবরোহণ আরোহন কিংবা ওঠানামা
শ্লোকের সবটাই ক্লাইমেক্স
প্রতিটি অক্ষর একেকটি জীবনের মই ।
অবশ্য আরেকটি কারণও বিদ্যমান
মানুষের ভেদাভেদতত্ত্ব বোঝায় বয়স কোনদিনই হয়নি আমার
শুধু দেখেছি-
উঠোনের দক্ষিণ কোণে ভাগের চুলো
ভোরের শিশির নিংড়ে টুপটাপ শিউলী
আধো ঘুমে যেদিনই তাকায়-
বোন আমার ধান সিদ্ধ করতে শশব্যস্ত
বৃহদায়তন ডেকচির ভাঁজে
শেষরাতের কুয়াশা ম্লান হয়ে তাঁকে আচ্ছন্ন করে
মুগ্ধ সমীরণ উতরে প্রায়ই খুঁজি তাঁর চেনা চেহারা
কিন্ত মুখ কই?
গনগনে আগুন ঢেকে দিয়েছে নিষ্ঠুর গোল
কলাপাতা বৌ, বাড়ির সৌন্দর্য যাই বলো না কেনো
যে নামে সুখ পাও পুডিয়ে-পোড়ায়ে
পেতলে পোড়া মুখ তাঁর অবয়ব
চুলার সিঁথি পাশে আস্ত এক মানুষ !
চৈত্র সংক্রান্তির চার কার্যদিবস আগে
গণকঠাকুর এলেন পন্জিকা পড়তে
হঠাৎ ঝড়, ভাসানো বৃষ্টি দুমড়ে দিলো সব
স্নিগ্ধ সকালে গণকমশায় রওনা দেবার প্রাক্কালে
উনুন ফলানো বোনকে বলে গেলেন জীবন্ত দশভূজা
এক হাতে ধানসিদ্ধ, আরেক হাত অতিথির রান্নায়,
উঠোন ঝাড়ু, কোসন মাজা, বিড়ির আগুন গোজরান শীর্ণ শ্বশুরের
তাতেই মনে ধরে গণকের
প্রশংসাপত্র কিছুদিন ঝুলিয়ে রাখা হলো খিড়কিবেড়ায়
বয়স বাড়লে শুনেছি, এই বোনটির নাকি পরজনম হয়নি
ওর বেলায়-
বটের ঝুরির মতো শাস্ত্র এসে মিশে গেছে হিরোন্ময় মাটিতে
কাজ ফাঁকির কারণে অথৈ সংসার
খুন করেছিল আগুনকে
ভোরের শিশির হয়ে যে কি না টুপটাপ
নিংড়ে দিয়েছিল গীতার পরমশ্লোক
নিষ্ঠ কর্মযোগ ।
বহুদিন পর বর্ণের কলিযুগে
এ কবিতা যখন লেখা হলো শব্দসমুচ্চয়
কবি একাই শুধু কাঁদলেন
বাকিরা নিশ্চুপ ছিলেন নিশ্চয় ।
(২৬ আগস্ট ২৫, বরইচারা, খোকসা, কুষ্টিয়া