
দিনকঠিনের পাঁচালি
রাত জেগেছে রাত্রিশেষে বহুবার
গোধুলি ধুলোয় ম্লান হয়েছে ভোর-আঁধার
ভোগপাত্রে নৈব চ স্বাদমালসায়
দিন জেগেছে দিনের আলো দিনবেলায়;
রাত সেজেছে শাড়ির আঁচল লেছফিতায়—
নূর গড়েছে নোকতাবাড়ির তিনকোণায়
রংমিস্ত্রি আমিন শাহ দেয় লবনরঙ
রাতারাতি আগুনশিখায় দেয় মলম;
কালবেলা সে উদয় হবে আঁচলে
ভোলবেলা যে পোহায় আগুন পাঁচিলে
সাধুর বাড়ি যতন দেহে আজান দেয়
দ্বিনজেগেছে দিনের আলো রূপচ্ছটায়;
রুটিনশিক্ষা কঠিনদীক্ষা রাত্রদিন
উল্টে গেছে পাল্টে যাওয়া মনমলিন;
[২১ এপ্রিল, ২০২০। পুকুরপাড়, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলাবাগান, ঢাকা]
মলিন রাতসমূহ
রাত এতোকাল একাই ছিল রাতবেলায়—
দিনপোহালে গভীর হতো অযাচার
রাতের এখন আঁধার শুধু বিহানে —
ভোগপাত্র নিমিত্ত গাঁও-গহিনে
রাত এতোদিন তুলতো মাখন রাত্রিমেঘ
দিন বেঁধেছে আঁধার শেষে সাঁঝবেলা
কালবেলা সে ডুবসাঁতারে শিরকানায়
আঁধার নিচ্ছে আলোক শিখা এই বেলায় ;
[২১ এপ্রিল, ২০২০। পুকুরপাড়, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলাবাগান, ঢাকা]
করোনায় পরীগুলো আর আসে না
আমাদের হুরের শহরে
লালপরী নীলপরী কিংবা
জালপরীদের সন্তানেরা
একঘরে ছিল খুব বেশি সময়—
বারান্দাগুলো যখন শূণ্য হলো বাতাসে
ব্লাউজ, মেক্সি কিংবা ব্রেসিয়ারের দোলনায়
উড়ে পুড়ে একাই ক্ষান্ত দিয়েছে নিরিবিলি জোছনা।
এই রাত, শুকতারা কিংবা নাসার আকাশ
দাগ ছাড়া কখনো ছিল না সতেজ—
ভোরের পাখি, নীলনদের স্নান আর সিরিয়ান নারী
সহজেই ডুবে যায় শাওয়ারের নিচে
এ শহরে চাঁদ ওঠে খা খা রাতে
দুগ্ধফেননিভ কণারা ফনা তুলে
জানায় সম্ভাষণ
দহনচৈত্রের ঠান্ডা জল ধুয়েমুছে দেয় পাপের কলঙ্ককণা
অতপর ফিরে আসতেন স্বাগত যোদ্ধা হয়ে
যেখানে-
আগের রাতে দাঁড়িয়ে দেখেছেন কাঁচুলির পরম্পরা
শিশুর মতো সযত্নচোখ খাতির করে দোলনায় ;
হুরের শহরে আর আসে না
পরীদের দল,
নীলপরী-লালপরী কেউ বা সবুজ পীতশোভিত শুভ্রকায় ও কায়া
ঘুঙুর উড়ে যায় তিন পায়ে
ভরদুপুরে, বৈশাখী জোছনা কিংবা মেঘাচ্ছন্ন শাওনরাতে
অবাধ যাতায়াত পরীদের খালিচোখ দেখেছে সবাই
দেয়াল টপকে সচিবালয় কিংবা কর্ণফুলি ডিপোর ভেতর
কখনো পৌঁছে গেছে বিশ্রামঘর ও মন্ত্রীর টেবিলতলায়;
পরীরা চলে যায়-
মেঘমুক্ত আকাশ যেদিন
জ্যেষ্ঠের গরমে হয় সিদ্ধ পড়ন্ত পুরুষ
যেনো সে প্রেতপুরী ট্রাফিক জ্যামে আর গোপন অবহেলায়—
মনুষ্যলোক বুকপকেটে খালি করে
শহর ঢাকা ঢেকে গেছে ভয়ের জোছনায়;
[২৩ এপ্রিল, ২০২০। পুকুরপাড়, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলাবাগান, ঢাকা]
নি:সঙ্গ শহর নৈ:সঙ্গের মানুষ
যতো বড় নগর
ততো বেশি নি:সঙ্গতা
তবু তো আছি বেশ
নৈরাশ্যের শহরে
অথচ এখানেই আছিলাম
ঘুলঘুলি ফাঁকা করে
টেরাকোটা মাক্কামদন;
চোখের সামনে তাবিচবেচনেওয়ালা চড়েছে হাতিতে
ওডির স্টিয়ারিং হ্যামারের ড্যাশবোর্ড
কিংবা-
চাঁদে যাওয়া ল্যাম্বারগিনি মন
নগরে নতুন অতিথি মানুষ এলিয়ন ;
যতো বড় নগর
ভালোবাসাও ততোবেশি—
ওষুধের দোকান বড়, বেড়েছে বিক্রি কনডম।
এতো বড় নগর
এতো বেশি মৃত্যু
কাফনের বাকসোবন্দি লাভের ছিটকাপড়
ডায়িং ফ্যাক্টরি ছাড়ে নির্জিব শেয়ার
আসছে দিন, লাভ নাকি সস্তাসুতার।
যতো বেশি নৈরাস্য
ততো বড় শহর, ব্যস্ত বাদাম চটপটি—
বস্তির আকাল নেই, রেল ও পাতালে
কী এমন হলো শরীর মেট্রোতে?
আইপিলের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে ঘুমের ওষুধ ।
[ ২২ এপ্রিল, ২০২০। পুকুরপাড়, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলাবাগান, ঢাকা ]
প্রজাপতি চোখ
মুড়ির প্যাকেটে বিকোচ্ছে গ্যাস্ট্রিক আলসার জ্বরের মাখন
নিমিষেই নি:শেষ বস্তাভর্তি রং আলগা স্নো
নিবেন নাকি রং ফর্সাকরা ক্রিম ?
মেছতা দূর হবে মনের, ভেতরের দাগগুলো উবে যাবে
ঠোঁঠ হবে সোমেশ্বরী নদীর মতোন।
ভ্যাজাল ভ্যাজাল বলে চিৎকায় ঘুমের অক্ষর
দুই কিংবা দশমাত্রার ডোজ
গুঁড়োময়দা গুলে খায় ভিটামিনের পাঁপড়।
একখান ওষুধ আছে শরীর ও জোছনা বাঁধা বদনামুখী ক্রিম
এতো বড় শহর—
কেউ কি যাবেন গুদারাঘাট সাঁতারকুল
শ্যাওড়া থেকে শীতলক্ষার নামা এলাকায়
নিজেস্ব কারখানায় মিলবে নিষ্ণাত অক্সিজেন
মেলে না মহৌষধ, স্বস্তি কিংবা নি:শ্বাসের শ্বাস
এ শহর বড় বটে
বড় বেশি নি:সঙ্গ মানুষ মানুষে
কাঙাল ঘোরে একা, চোর যায় ডাকাত আসে
বনেদী ভিখেরি সাঁই
সে-ও বুঝি সঙ্গ চাই নচেত হিংসার দরকষাকষি
কমে নি দাম ছুরি ডেগারের কমেছে দড়িফাঁসি।
বিশাল শহর বিকোয় ভাঙারি দোকান
নি:সঙ্গ মানুষ কেনে নাইন এমএম
প্রস্তরযুগ আসে দাড়িগোঁফ বুনে
ঘরবন্দি মেগাসিটি গাছপাথর কিনে
গুঁড়োময়দা গুলে খায় ভিটামিন পাঁপড়
নিস্প্রভ কালিতে লেখো দলিত অক্ষর ;
[ ২২ এপ্রিল, ২০২০। পুকুরপাড়, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলাবাগান, ঢাকা ]