বাংলাদেশ আজ সফলভাবে কাতার থেকে বছরে ১.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটি) করে ১৫ বছর পর্যন্ত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতি বছর অতিরিক্ত ১.৮ এমএমটি এলএনজি পাবে, যা ২০২৬ সালে শুরু হবে। দোহায় কাতার এনার্জির সদর দপ্তরে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) এবং কাতারএনার্জির এলএনজি ট্রেডিং শাখার মধ্যে এই দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি (এসপিএ) স্বাক্ষরিত হয়। কাতার এনার্জির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আহমেদ আল-হুসাইনি এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার নিজ নিজ পক্ষের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং কাতারের জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও কাতার এনার্জির প্রেসিডেন্ট ও সিইও সাদ শেরিদা আল-কাবি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রত্যক্ষ করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কাতারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি কাতারের এই সহায়তা আমাদের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিশ্ব জ্বালানি সংকটের সম্মুখীন। আমরা জ্বালানি চাহিদা পূরণের মাধ্যমে আসন্ন চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব বলে আশা করি।’
তিনি এই মহান সুযোগটি করতে সহায়তার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। নসরুল হামিদ কাতারের জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, কাতার এনার্জির প্রেসিডেন্ট ও সিইও সাদ শেরিদা আল-কাবিকে অতিরিক্ত ১.৮ এমটিপিএ এলএনজি এসপিএ স্বাক্ষরে অব্যাহত সহায়তার জন্য তার বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, কাতার এনার্জি, পেট্রোবাংলা ও আরপিজিসিএল কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ও কাতার এলএনজি নিশ্চিতে এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সফলভাবে স্বাক্ষর করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটি প্রকৃতপক্ষে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মূল্যবোধ, অভিন্ন ধর্মীয় ভিত্তি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘ দিনের দ্বিপক্ষীয় বন্ধনে যুক্ত দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে জোরালো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আরেকটি মাইলফলক।’ বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের বর্তমান প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫,২৮৪ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।
সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০,০০০ মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সারা দেশে বিদ্যুৎ কাভারেজ ১০০%-এ পৌঁছেছে। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তুলনামূলকভাবে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উৎস হিসেবে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এলএনজি একটি অগ্রাধিকার। এলএনজি আমদানি সারা দেশে স্থাপিত জাতীয় গ্যাস গ্রিড নেটওয়র্ক পূরণে সহায়তা করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে কাতারের জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, কাতার এনার্জির প্রেসিডেন্ট ওসিইও সাদ শেরিদা আল-কাবি বলেন, ‘আজকে আমরা বাংলাদেশ ও পেট্রোবাংলাকে সবচেয়ে বড় এলএনজি সরবরাহকারী হিসেবে আমরা গর্বিত। কাতার থেকে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩.৫ মিলিয়ন টনের বেশি এলএনজি পাবে। এই সরবরাহ বাংলাদেশের মতো মূল্যবান গ্রাহকদের জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষায় এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য তাদের প্রয়োজনীয় নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহে জন্য আমাদের অবিচল আত্মনিবেদনকে জোরদার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিজ্ঞ নেতৃত্ব এবং জ্বালানি খাতে তার অব্যাহত দিকনির্দেশনার জন্য মহামান্য আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে আল-কাবি বলেন, ‘কাতার কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা যে চুক্তিই করেছি, তা কখনো ভাঙব না। তিনি বলেন, এই নতুন এসপিএ’র মাধ্যমে কাতার এনার্জি দক্ষিণ এশিয়ার এলএনজি বাজারে তার অংশীদারদের জন্য পছন্দের এলএনজি সরবরাহকারী হিসেবে তার অবস্থান পুনঃনিশ্চিত করেছে। কাতার বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ৩.৫ মিলিয়ন টনের বেশি এলএনজি সরবরাহ করে।
ইতোমধ্যে ১.৮-২.৫ এমটিপিএ এলএনজি সরবর হে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি ১৫ বছরমেয়াদি এলএনজি এসপিএ চুক্তি রয়েছে যা ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭-এ স্বাক্ষরিত হয়। ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ তারিখে ডেলিভারি শুরুর পর থেকে ৩১ মে, ২০২২ পর্যনন্ত পেট্রোবাংলা ১৯১টি এলএনজি কার্গোর মাধ্যমে সফলভাবে ১১.৭৪৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন এলএনজি পেয়েছে।