শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা

বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ৬ আগস্ট ২০২৩

টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা

 প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, নদ-নদী, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বত সহ প্রাকৃতিক রূপ-বৈচিত্রে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশ। দক্ষিণে বঙ্গপোসাগর, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে সিকিম ও মেঘালয়, পূর্বে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মায়ানমার। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় রাজনৈতিক জীবন। এদেশের কৃষক-শ্রমিক, মুটে-মজুর ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পরাধীনতার শেকল থেকে আমাদের দেশ মাতৃকা ও বাঙালী জাতিকে মুক্ত করতে যিনি জীবনের সিংহভাগ সময় জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সুচিন্তিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিপিড়িত বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা যে সম্ভব তা সমগ্র পৃথিবীর মানুষের কাছে তিনি প্রমান করেছেন। বঙ্গবন্ধু কেবল বাঙালী জাতির অধিনায়ক ছিলেন না, তিনি ছিলেন পৃথিবীর বঞ্চিত সমগ্র মানব গোষ্ঠির পথ-প্রদর্শক ও মহাননেতা। বঙ্গবন্ধু কেবল মাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না, তিনি চেয়েছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবিক রাষ্ট্রীয় সভ্যতা, সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা, সকল মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনের মাধ্যমে বিশ্ব সভায় বাঙালী জাতির সুদৃঢ় অবস্থান সৃষ্টি করতে। এই মহাপুরুষের জন্ম না হলে হয়তো আজকের বাংলাদেশ আমরা পেতাম না।

 বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, দর্শন বিশ্ব মানবতার জন্য তাঁর চিন্তা ধারাবাহিক ভাবে লিপিবদ্ধ করা দুঃসাধ্য বৈকি? প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সংক্ষেপে নব প্রজন্মের উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করার চিন্তা থেকে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। প্রারম্ভেই আমি টুঙ্গিপাড়ার থোকা থেকে শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা পথ পরিক্রমা সংক্ষেপে আলোকপাত করতে চাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৭ই মার্চ ১৯২০ সালে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার আদরের খোকা। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে শেখ মুজিব ছিলেন তৃতীয় সন্তান। মা-বাবা তাঁকে খোকা নামে। ডাকতেন। শেখ মুজিবের শৈশবকাল কেটেছে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে নিজ এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোকার প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্র জীবনের সূচনা হয়। তিনি ৯ (নয়) বছর বয়সে ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে এবং পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় মিশনারী স্কুলে ভর্তি হন। অসুস্থতার কারণে তার লেখাপড়ায় সাময়িক বিরতি ঘটে এবং চার বছর শিক্ষা জীবন ব্যাহত হওয়ার পর ১৯৩৭ সালে পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন।

 ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল পরিদর্শনে এলে শৈশবকাল থেকে ডানপিটে স্বভাবের শেখ মুজিব দাবী আদায়ের মিছিলের নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচিত হন। ১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি শেখ ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। হন। তাঁদের দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা ও তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করার কারণে ১৯৩৯ সালে বঙ্গবন্ধুর কারা জীবন শুরু হয়। ১৯৪২ সালে বঙ্গবন্ধু এন্ট্রাস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। ১৯৪৪ সালে শেখ মুজিব কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদানের মাধমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন। একই বছরে ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারীর দায়িত্ব লাভ করেন। প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক যুব কর্মীদের সম্মেলনে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন।

 ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে পাকিস্থানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করেন। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সাধারণ ধর্মঘটের ডাকদিলে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন কিন্তু পূর্ব বাংলার ছাত্র জনতার তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। ফরিদপুরের কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর শেখ মুজিবকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের প্রায় চার মাস পর ২১ জানুয়ারি, ১৯৪৯ সালে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তাদের ধর্মঘটকে সমর্থন জানান। আন্দোলনে যোগ দেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে অযৌক্তিভাবে জরিমানা করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সৃষ্ট আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বিশ্বব