সোমবার,

০৬ মে ২০২৪

|

বৈশাখ ২২ ১৪৩১

XFilesBd

শিরোনাম

হবিগঞ্জের কার ও ট্রাকের সংঘর্ষে নারীসহ নিহত ৫ যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল

রাসিক নির্বাচনে লিটনের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৭ জুন ২০২৩

রাসিক নির্বাচনে লিটনের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি অর্থনৈতিক-সামাজিক-মানবিক শান্তিময় ও সমৃদ্ধ মহানগরী গড়ে তোলা, মহানগরীকে সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলভিত্তিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাসহ ছয় দফা এবং আরো কিছু প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে। তবে এসব প্রতিশ্রুত কাজের বেশির ভাগই মেয়রের কাজের আওতার বাইরে। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তনে দলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও সুধী সমাজের সামনে ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।

তার ইশতেহারের শুরুতে থাকা ছয় দফার অপর তিনটি হলো- শিক্ষা ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ মহানগরীর বিশেষত্ব অর্জন; মহানগরীর ভৌগোলিক আয়তন ৯৬ বর্গকিলোমিটার থেকে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারণ এবং রাজশাহী শহরের পাশে জেগে ওঠা পদ্মার চরে রিভারসিটি নির্মাণ।

লিটনের ১৫ পৃষ্ঠার ইশতেহারের বেশির ভাগে জুড়ে রয়েছে গত মেয়াদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা। আর বাকি অংশে উল্লেখ রয়েছে, ‘এবার যা করতে চাই।’ এ অংশে ১০ দফায় ১০৪টি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইশতেহার ঘোষণাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়রপ্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন স্বীকার করেন, এবারের ইশতেহারের অর্ধেকের বেশি মেয়রের কাজের আওতাবহির্ভূত প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তবে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের স্বার্থে মেয়রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না- এমন ঘোষণাও তিনি ইশতেহারে এনেছেন। নিজ দায়িত্বে কাজগুলো করার চেষ্টা করবেন তিনি। লিটন দাবি করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনকালে দেয়া ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার ৬০ শতাংশের বেশি পূরণ করেছেন তিনি। করোনা মহামারীর কারণে অবশিষ্ট প্রতিশ্রুতি পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ওই ইশতেহারে শতভাগ বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেয়া, গৃহকর কমানোর ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া, রেশম কারখানা ও রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু, রাজশাহী জুটমিল সংস্কার ও সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতির কথাও বলা হয়েছিল। তবে এসব প্রতিশ্রুতির কোনোটিই পূরণ হয়নি। বরং এবারের ইশতেহারে সেসব প্রতিশ্রুতি আর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এ দিকে ১০ দফার মধ্যে প্রথম দফায় রয়েছে ‘দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন’। এই দফায় রাজশাহীতে পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ব্রিটিশ অথবা আমেরিকান পাঠ্যক্রমের আদলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল একটি ললিতকলা একাডেমি, একটি আর্কাইভ, আর্ট গ্যালারি, সিটি মিউজিয়াম স্থাপনসহ সাতটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবার দফায় ১৮টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে যুগোপযোগী করা, রাজশাহীর হার্ট ফাউন্ডেশনকে একটি পূর্ণাঙ্গ হৃদরোগ হাসপাতালে উন্নীত করা, পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল, একটি পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ, হৃদরোগ ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি চিকিৎসা হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া।

শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য, যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়নের দফায় রয়েছে ২৯টি প্রতিশ্রুতি। এর প্রথমে রয়েছে সোনামসজিদ-রাজশাহী-বনপাড়া-হাটিকুমরুল পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা। এই সড়ক রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বাইরের। এ ছাড়া রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত ট্রেন চালু, রাজশাহী-আব্দুলপুর রেলপথ ডুয়েল গেজে উন্নীত করা, রাজশাহী-খুলনা-মংলা-পোর্ট সংযোগ গড়ে তুলতে আরো একটি আন্তঃমহানগর যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চালুর উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। রাজশাহী থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ ঘাট হয়ে ভারতের ধূলিয়ান ও মায়া পর্যন্ত নৌবন্দর চালু করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং নতুন যোগাযোগ স্থাপন, রাজশাহী থেকে কলকাতা ট্রেন, রাজশাহী থেকে কলকাতা বিমান এবং রাজশাহী থেকে কলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা। এ ছাড়া রাজশাহী থেকে রহনপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল দিয়ে নেপাল পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগের উদ্যোগ নেয়া, রাজশাহী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমান চালুর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিপণ্য ও শিল্পপণ্য রফতানির ব্যবস্থা করা, এর জন্য কনটেইনার অবকাঠামো গড়ে তোলার মতো বড় প্রতিশ্রুতিগুলো দেয়া হয়েছে; যা মেয়রের কাজের মধ্যে পড়ে না। তবে নগরীতে নতুন আরো পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ, রাজশাহী বিসিক-২ এ শিল্প কলকারখানা স্থাপন ও দ্রুত চালু, ট্যানারি শিল্প ও লেদার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন, আম, অন্যান্য ফলসহ উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি আরো কিছু প্রতিশ্রুতি রয়েছে এই দফায়। ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও মননচর্চার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ দফায় ১৪টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে প্রথম দু’টি হলো রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেনু পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও খেলাধুলার জন্য বিকেএসপির চলমান কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক উদ্যোগ দফার মধ্যে রয়েছে পাঁচটি প্রতিশ্রুতি। জলবায়ু পরিবেশ ও বিনোদন অবকাঠামো উন্নয়ন দফায় সাতটি প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে ওয়ার্ডভিত্তিক শিশুপার্ক নির্মাণ। প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষের উন্নয়ন প্রণোদনা দফায় রয়েছে চারটি, মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ দফায় রয়েছে পাঁচটি, প্রবীণ ও শিশুদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দফায় পাঁচটি, সামাজিক সুরক্ষা ও নারী উন্নয়ন দফায় তিনটি প্রতিশ্রুতি।

ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নওশের আলী, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, ডা: তবিবুর রহমান শেখ, নাঈমুর হুদা রানা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, আহসানুল হক পিন্টু, রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, জাসদ রাজশাহী মহানগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলীসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।