১২ মাস খানাখন্দে ভরপুর রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট। এর সঙ্গে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ফুটপাতে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট। ফুটপাত ছাড়াও রাস্তার অনেকখানি জায়গাও দখল করে রেখেছেন এসব দোকানদার বা হকারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকা, দেখলে মনে হবে যেন ফুটপাত গুলোতে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছে বিপনীরা। শুধু এই স্থানে নয় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলবে এমন ভাসমান বাজারের। নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের চলাচল রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট, মতিঝিল, গুলিস্তান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর সহ অন্যান্য এলাকা। দিন রাত সারাক্ষণ অনেক মানুষ চলাচল করে। এত পথচারী অথচ সেখানে ফুটপাত ধরে হেঁটে চলাচল করার কোনো সুব্যবস্থা নেই। দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না, এসব এলাকা ও এর আশেপাশের ফুটপাতগুলো। পুরো ফুটপাতজুড়েই গিজগিজ করছে দোকান। অথচ দেখার কেউ নেই। পথচারীদের হাঁটার জায়গা দখল করে নানা রকমের দোকান বসিয়ে রেখেছে অবৈধ দখলদারা। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার মতো পরিস্থিতি না থাকাই , বাধ্য হয়ে পথচারীরা নেমে এসেছেন মূল সড়কে। যে কারণে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সেই সঙ্গে তো থাকছে পথচারীদের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।
স্থানীয়রা জানান, ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার কোনো পরিস্থিতি নেই। সবগুলো ফুটপাতে অতিরিক্ত দোকান, তার মধ্যে মানুষের হেঁটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে মেয়েদের আরও বেশি বিলম্বনাই পরতে হয়। তারা আরো বলেন , কাঠ, প্লাস্টিক বা টিনের ছাউনিতে তৈরি এসব দোকানপাট এ বছরের শুরুতে উচ্ছেদ করা হলেও কয়েক মাস পর সেগুলো আবার স্থাপন করা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কের ফুটপাতগুলো চলাচলের জন্য করা হলেও সেখানে বসেছে বিভিন্ন দোকান। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি ফুটপাত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি জানিয়েছে, হকাররা দখল করে ব্যবসা করলেও এর নেপথ্যে আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে তাদের এ আধিপত্য। যে কারণে বারবার উচ্ছেদ করার পরও দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না ফুটপাতগুলো। ফুটপাত দখল করা হকারদের কোনোভাবেই ঠেকাতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন।
রাজধানীর রাজপথ, সড়ক, অলিগলি কোনো কিছুই এখন আর যানজট থেকে মুক্ত নয়। ক্রমবর্ধমান যানবাহন ও জনসংখ্যার চাপে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। আর এই দুর্ভোগ নগরবাসীর নিত্যদিনের। যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী অতিরিক্ত যানজটের কারণে বাধ্য হয়ে গণ পরিবহন থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে চাইলেও তা পারছেন না
বিশিষ্টজনদের মতে, হাঁটার নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ থাকা প্রতিটা রাজধানীর জন্য বাঞ্ছনীয়, যাতে জনগণ হেঁটে পথ চলতে পারে। কিন্তু আমাদের এই রাজধানীর চিত্র পুরো উল্টো।চলাচলের পথরুদ্ধ করে ফুটপাতে ব্যবসার অনুমোদন কোনভাবেই সমর্থনীয় হতে পারে না ।
তারা আরো বলেন, নগরীর পায়ে হাঁটার পথগুলো পথচারীবান্ধব না হওয়ায়, স্বল্পদূরত্ব পাড়ি দিতে অনেকেই গণপরিবহন ব্যবহারে বাধ্য হন। অথচ ফুটপতগুলো পথচারীবান্ধব হলে পায়ে হেঁটে স্বাচ্ছন্দে এই পথ অতিক্রম করতেন অনেকেই । আর তাতে করে সড়কের উপর যানবাহনের চাপও কমতো অনেক।
একটা স্মার্ট রাজধানী বিনির্মাণে শুধু উচ্ছেদ অভিযান , আইন আর শাস্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না । দুই সিটি কর্পোরেশনকে আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। দোকানদারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, পুনর্বাসন না করে ফুটপাত দখলমুক্ত অভিযান শতভাগ সফল হবে না। তবে জনগণের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া কখনোই ফুটপাত দখলমুক্ত হবে না। তাই কয়এক কোটি মানুষের বসতি রাজধানী ঢাকার, ফুটপাত চলাচলের উপযোগী করতে সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে একটি দখলমুক্ত স্মার্ট ফুটপাত।